ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টেলি খাতের ১১ প্রকল্পের অগ্রগতি জানানোর নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ২৬ অক্টোবর ২০১৪

টেলি খাতের ১১ প্রকল্পের অগ্রগতি জানানোর নির্দেশ

ফিরোজ মান্না ॥ টেলিযোগাযোগ খাতে ১১টি অনুমোদিত প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। নতুন করে হাতে নেয়া আরও ১১টি প্রকল্পের কাজ সম্পর্কেও মন্ত্রণালয় জানতে চেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হওয়ার পরই এই নির্দেশ জারি করা হলো। দেশের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করছে। এই খাতে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সরকার টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মোঃ ফয়জুর রহমান চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, টেলিযোগাযোগ খাতে হাতে নেয়া প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করার জন্য কাজ করা হচ্ছে। এই খাতের উন্নয়ন হলে দেশের উন্নয়ন হবে। দেশে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে। মন্ত্রণালয় থেকে সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে হাতে নেয়া প্রকল্পগুলো সময়মতো বাস্তবায়ন করার জন্য। কোন প্রকল্পের কি অগ্রগতি তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশে আধুনিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টি হবে। এতে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত ১১টি প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে বিটিসিএলের ৫টি, টেলিটকের ১টি, ডাক বিভাগের ৪টি ও বিটিআরসির ১টি প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। বিটিআরসির প্রকল্প বাদে ১০টি প্রকল্পের অনুকূলে এডিপির বরাদ্দের পরিমাণ ৬৮৭ দশমিক ৪০ কোটি টাকা। প্রকল্পে বিদেশী সহযোগিতা রয়েছে ৪০৯ দশমিক ৬০ কোটি টাকা-বাকি ২৭৭ দশমিক ৮০ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। বিটিআরসির প্রকল্পের জন্য ৪৬ দশমিক ৬৮ কোটি টাকা সরকারের তহবিল থেকে দেয়া হবে। ১০টি প্রকল্পের বিপরীতে গত জুলাই পর্যন্ত ১০ দশমিক ৫২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে (প্রকল্প সাহায্য খাতে)। যা গত বছরের তুলনায় বেশি। এর বাইরে নতুন করে হাতে নেয়া বিটিসিএলের ২টি, ডাক বিভাগের ৫টি, বিটিআরসির ১টি, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানির ২টি ও টেলিটকের একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। নতুন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি সম্পর্কেও মন্ত্রণালয় জানতে চেয়েছে। বিটিসিএলের প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন, এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক, উপজেলা পর্যায়ে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য এনজিএন ভিত্তিক টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক স্থাপন, ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ব্রডব্যান্ড ওয়ারলেস নেটওয়ার্ক স্থাপন, টেলিযোগাযোগ খাতে থ্রিজি (তৃতীয় প্রজন্মের ফোন) প্রযুক্তি চালু এবং বিদ্যমান টু জি (দ্বিতীয় প্রজন্মের ফোন) নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ প্রকল্প, ডাক বিভাগের কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয়করণ, ডাক বিভাগের জরাজীর্ণ ডাকঘর নির্মাণ-পুনর্নির্মাণ, তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর গ্রামীণ ডাকঘর নির্মাণ, পোস্ট ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি প্রকল্প। এর বাইরে রয়েছে বাংলাদেশ ডাক অধিদফতরের পরিবহন ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, বাংলাদেশ ডাক অধিদফতরের সদর দফতর নির্মাণ, মেইল প্রসেসিং ও লজিস্টিক সার্ভিস সেন্টার নির্মাণ, কেন্দ্রীয় পোস্টাল ডাটা সেন্টার নির্মাণ, বিটিআরসির একটি প্রকল্প হচ্ছে কমিউনিকেশন ও ব্রডকাস্টিং স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রস্তুতিমূলক ও তত্ত্বাবধায়ক কার্যাদি প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপন, প্রথম সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশনের মধ্যে আন্তঃসংযোগ স্থাপন প্রকল্প। পুরনো প্রকল্পের মধ্যে আধুনিক শক্তিশালী ট্রান্সমিশন ও ডাটা নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের কাজে হাত দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। হাতে নেয়া প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান চীনের মেসার্স চায়না মেশিনারি এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশনের (সিএমইসি) সঙ্গে গত বছরের শেষ দিকে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বিটিসিএল। এর আগে বিটিসিএলের আধুনিকায়ন করতে নেয়া ‘ইনস্টলেশন অব এনজিএন বেজড টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল বাংলাদেশ (এনটিএন)’ মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। চীন সরকারের ঋণ সহযোগিতা এবং সরকারী অর্থায়নে চার বছর মেয়াদী এই প্রকল্পটির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কেও জানতে চাওয়া হয়েছে। এক হাজার ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপন প্রকল্পটি এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন কাজে হাত দিতে পারেনি বিটিসিএল। ৭০৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) জানিয়েছে, অর্থের অভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাজ দফায় দফায় পিছিয়ে যাচ্ছে। গত সরকারের ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের জন্যই এই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে দেশের সব ইউনিয়নকেই অপটিক্যাল ফাইবারের আওতায় আনার ঘোষণাও দেয়া হয়। অন্য আরেকটি প্রকল্পের আওতায় ৯৮টি উপজেলার ইউনিয়নে ১২ হাজার কিলোমিটার অপটিক্যাল কেবল স্থাপন করার কথা রয়েছে। সারাদেশে শক্তিশালী ও উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তথ্যপ্রযুক্তিগত অবকাঠামো নির্মাণের অংশ হিসেবে এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এই প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে ই-তথ্যকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০১২ সালে। পরে তা ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত পেছানো হয়। ২০১৩ সালেও কাজ শুরু করা যায়নি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে সরকার এখন পর্যন্ত কোন অর্থ ছাড় করেনি। প্রকল্পটি ২০১১-১২ অর্থবছরে বরাদ্দ দেয়া হয় মাত্র ১৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৭ কোটি টাকা। এই ১৭ কোটি টাকা থেকে বিটিসিএল ৫ কোটি টাকার অপটিক্যাল কেবল কেনা হয়েছে। এক হাজার ইউনিয়নকে সংযুক্ত করতে হলে আরও ৭৭ কোটি টাকার কেবল কিনতে হবে। বিটিসিএল ৫শ’ কোটি টাকার নেটওয়ার্ক উন্নয়নে আরেকটি প্রকল্প হাতে নিলেও তা এখন আলোর মুখ দেখেনি। এই প্রকল্পের কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয় তাগিদ দিয়েছে। প্রকল্পের অর্থের যোগান দেবে দাতা সংস্থা জাইকা। চীন সরকারের ও জাইকার অর্থ সহযোগিতায় হাতে নেয়া দুটি বড় প্রকল্পের কাজের বিষয়ে মন্ত্রণালয় বেশি গুরুত্বারোপ করেছে।
×