ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এআইআইবির যাত্রা শুরু

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২৭ অক্টোবর ২০১৪

এআইআইবির যাত্রা শুরু

চীন, ভারত ও বাংলাদেশ জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখছে এশিয়ার দেশগুলোর কয়েকটি দেশের জনশক্তি হচ্ছে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বড় সহায়ক। বিশেষ করে চীন, ভারত ও বাংলাদেশ জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখছে। বিশ্বব্যাংকের তৈরি করা তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে গড় মাথাপিছু আয় হচ্ছে ৫২৮ ডলার আর দক্ষিণ এশিয়ার গড় আয় এক হাজার ১৭৬ ডলার। এক হাজার ৪৪ ডলার নিয়ে দক্ষিণ এশিয়াকে প্রায় ধরে ফেলেছে বাংলাদেশ। এতদিন বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো। কিন্তু এখন তা হয়ত কমে যাবে। বিশ্বব্যাংক ও এডিবির প্রভাব কমাতে তৈরি হয়েছে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)। চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ৫ বিলিয়ন ডলার তহবিল নিয়ে এই ব্যাংক গঠনের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে চীন, ভারত, বাংলাদেশসহ ২১টি দেশ। বিশ্বব্যাংকের বর্তমান সদস্য রাষ্ট্র ১৮৮। এই আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তা সংস্থা যা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে উন্নয়ন কর্মকা-ের জন্য ঋণ ও অনুদান প্রদান করে। বিশ্বব্যাংক বর্তমানে পরিবেশ উন্নয়ন ও এইডসের মতো ভয়াবহ রোগ মোকাবেলায় করণীয় কী তা নিয়ে কাজ করছে। এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক মাত্র ২১টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য কী সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে তাই দেখার বিষয়। তবে অনেক দেশ যারা এখনও সদস্য হয়নি তারা ভাবছে সহায়ক পরিবেশ পাওয়া গেলে আরও অনেক দেশ ব্যাংকটির সদস্য হবে। আগামী বছরের মধ্যে ব্যাংকটি পূর্ণাঙ্গভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে, যার মূলধন হবে ১০০ বিলিয়ন ডলার। এর সদর দফতর হবে বেইজিং। প্রথমদিকে বিনিয়োগ ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে থাকবে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সড়কের উন্নয়নসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের উন্নয়ন। বাংলাদেশের জন্য এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকে যোগদানের ফলে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ইতিবাচক হবে বলে অনেকে মনে করছেন। চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মূলত বিশ্বব্যাংক ও এডিবির মাধ্যমে এশিয়ায় পশ্চিমাদের প্রভাব হ্রাস করতেই এ ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর উন্নয়নশীল দেশে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের প্রয়োজন হচ্ছে প্রায় এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ খাতে বিশ্বব্যাংক গত বছর ৬০ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। প্রকৃত চাহিদার তুলনায় তা অনেক কম। তাই এই ঘাটতি পূরণে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক সহায়ক হতে পারে। বর্তমান বিশ্বে চীন বড় অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। জাপানকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে চীন। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও ভোট দেয়ার দিক দিয়ে চীনের স্থান দ্বিতীয় সারিতে। তাই এআইআইবি গঠনে সেই সমস্যাটি আর থাকছে না। সব মিলিয়ে বড় অর্থনীতির দেশ হওয়ার কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে এগিয়ে যাচ্ছে চীন। আশা করা যাচ্ছে, যে সব দেশ এর সদস্য হয়নি সেগুলো পরবর্তীতে সদস্যপদ গ্রহণে আগ্রহী হবে। আরও আশা করা যাচ্ছে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রত্যাশা পূরণে সহায়ক হবে। এই অঞ্চলে পরিবেশ উন্নয়ন, খাদ্য ঘাটতি, শিল্পোন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে ঋণ ও সহায়তা দিয়ে এশিয়ার উন্নয়ন ঘটাতে পারলে সার্থক হবে ব্যাংকটি গঠনের উদ্দেশ্য।
×