ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২৯ অক্টোবর ২০১৪

এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন

ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ (আইসিসিবি)-এর ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজিত দুদিনব্যাপী সম্মেলনে এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রসঙ্গটি খুবই গুরুত্ব পেয়েছে। গত চার দশক ধরে এখানে বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম মহাদেশ এশিয়া এখন আর সেই ক্ষুধা আর দারিদ্র্য জর্জরিত ভূখ- নয় বরং একবিংশ শতকে তা পৃথিবীর অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে চীন বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ভারতও শিল্প, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিক দিয়ে বিশ্বের অন্যতম নেতৃস্থানীয় দেশ। এ দুটি দেশের উৎপাদিত শিল্পজাত সামগ্রী এখন সারা পৃথিবীতে রফতানি হচ্ছে। ‘আইসিসিবি’র ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ‘বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধার : এশিয়ার প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক দুদিনব্যাপী সম্মেলনের শেষদিনে গত রবিবার বক্তারা এশিয়ার উন্নয়নে চীন-ভারত সম্পর্কোন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। বিশ্বায়নের এ যুগে আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য সহযোগিতার কোন বিকল্প নেই। বর্তমানে শিল্পোন্নয়ন ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনেকেই বাংলাদেশকে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দেশ বলে বিবেচনা করছেন। চীন ও ভারতের অন্যতম ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী বাংলাদেশ তার ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। উল্লেখ্য, কিছুকাল আগে জাপানী প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরকালে বাংলাদেশ ও বঙ্গোপসাগরীয় এলাকায় জাপানী সহযোগিতার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বস্তুত বাংলাদেশের বিপুল শ্রমশক্তি বিদেশীদের এখানে যৌথ উদ্যোগে শিল্প স্থাপন ও বিনিয়োগের বিষয়ে উৎসাহী করে তুলেছে। এত স্বল্পমূল্যে শ্রমশক্তি পৃথিবীর খুব কম দেশেই পাওয়া যায়। এসব কারণে বাংলাদেশকে অনেকেই এশিয়ার অন্যতম উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে অভিহিত করেছেন। ইতোমধ্যে এ দেশটি সারাবিশ্বে তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে চীনের পরেই বাংলাদেশের স্থান। বাংলাদেশের মোট রফতানি আয়ের ৮০ ভাগেরও বেশি আসে গার্মেন্টস থেকে। পর্যবেক্ষকদের মতে, যথাযথভাবে উদ্যোগ নিলে ঢাকার বাইরে মফস্বল এলাকায় আরও অনেক গার্মেন্টস কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব। তা সম্ভব হলে বাংলাদেশ হয়ত গার্মেন্টস রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করবে। এজন্য দরকার সরকারের কার্যকর সহযোগিতা। একই সঙ্গে শিল্পোন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে দেয়া তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ আইসিসিবি’র সম্মেলনে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘অনেক উন্নত দেশ বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে সহযোগিতা দিচ্ছে না।’ তাঁর এ বক্তব্য একটি বাস্তব বিষয়ের প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। জেনেভা বৈঠকে উন্নত দেশগুলো ডিউটি ফ্রি ও কোটা ফ্রি সুবিধার জন্য স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি রাখেনি। এজন্য দরকার এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এশীয় দেশগুলোর সহযোগিতা ও উন্নয়ন। এ ক্ষেত্রে চীন, জাপান ও ভারতকে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তাদের সহায়তায় উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত এশীয় দেশসমূহে নিঃসন্দেহে অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে। সবার প্রত্যাশা, অদূর ভবিষ্যতে এশিয়াই হবে পৃথিবীর অর্থনীতির চালিকাশক্তি।
×