ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘এমন ঝলক আরও দেখাবেন তাইজুল’

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ২৯ অক্টোবর ২০১৪

‘এমন ঝলক আরও দেখাবেন তাইজুল’

মোঃ মামুন রশীদ ॥ মহানায়ক বনে গেলেন তরুণ তারকা স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট খেলতে নেমেই দীর্ঘ এক বছরের জয় খরা ঘোচালেন একক নৈপুণ্যে। মাত্র ১০১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানরা যে বিভীষিকার মধ্যে পড়েছিল তাইজুলের দুর্দান্ত বোলিং না হলে হয় তো জয়ই আসত না। মাত্র ৩৯ রানে ৮ উইকেট নিয়ে দেশসেরা বোলিং নৈপুণ্য দেখিয়েছেন টেস্ট ক্রিকেটে আর দীর্ঘ এক বছর পর আবার জয়ের ধারায় ফিরিয়েছেন দলকে। গত বছর জিম্বাবুইয়ে সফরে এপ্রিলে সর্বশেষ টেস্ট জিতেছিল বাংলাদেশ। আর চলতি বছর ওয়ানডে কিংবা টেস্ট জিততে না পারার বেদনায় মর্মাহত ছিল পুরো জাতি। তাঁদের উচ্ছ্বাসে ভাসার সুযোগটাও করে দিলেন তাইজুল ব্যাটিং করেও। তাঁর বাউন্ডারিতেই জয় আসল। এ কারণে ৮ উইকেট পেয়ে ইতিহাস গড়ে নয়, আরেকটি পরাজয়ের শঙ্কা থেকে বাঁচিয়ে দলকে জেতাতে পেরেই খুশি তাইজুল। তিনি জানিয়েছেন উইকেট যেমনই হোক ঠিক জায়গায় বল ফেলে ভাল নৈপুণ্য করতে চান। তবে অধিনায়ক মুশফিক সবাইকে তাইজুলের এমন নৈপুণ্যে বেশি মাতামাতি না করার অনুরোধ জানালেন। কারণ এতে করে হয় তো অনেক বড় কিছু হয়েছি এমন মনোভাব সৃষ্টি হতে পারে এবং হারিয়ে যেতে পারেন। তাইজুলকে নিয়ে এরপরও মাতামাতি থেমে নেই। তাঁর জেলা নাটোর ও গ্রাম নলডাঙ্গার পিপরুলেও বইছে আনন্দের বন্যা। হয়েছে মিষ্টি বিতরণ। হবেই না কেন দেশকে ৮৬তম টেস্টে পঞ্চম জয় পাইয়ে দিয়ে পুরো জাতিকেই গর্বিত করেছেন তিনি। তাঁর বাবা ইস্কান্দার পেশায় দর্জি। কিন্তু দারিদ্র্যকে জয় করে একদিন বিশ্ব দরবারে নাম উঠবে এমন স্বপ্ন নিয়ে ক্রিকেট জগতে নাম লেখান তাইজুল। সেটা সত্য হয়েছে। মাত্র ১২ বছর তখন ২০০৩-০৪ সালে নাটোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনুর্ধ-১৩ দলের হয়ে পথচলা শুরু করে তাইজুল এখন দেশের প্রতিনিধি। আর গর্বও উপহার দিয়েছেন। তবে তাঁর সতীর্থ আর অধিনায়ক মুশফিক সবাই চান এই গর্বটা বারবারই উপহার দিতে থাকুক তাইজুল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর দিয়ে জাতীয় দলের গর্বিত সদস্য হিসেবে পথচলা শুরু করেই ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে সাকিব আল হাসান একাই ৬ উইকেট নিয়েছেন। তাইজুল মাত্র একটি উইকেট নিতে পেরেছিলেন। তাই বেশ হতাশ ছিলেন। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে আর কাউকে সুযোগ দেননি। একাই নিয়েছেন আট উইকেট। এ বিষয়ে তাইজুল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আসলে প্রত্যাশা ছিল না এত ভাল করতে পারব। তবে আত্মবিশ্বাস ছিল যেভাবে উইকেটে স্পিন হচ্ছে ঠিক জায়গায় বল ফেলতে পারলে ভাল কিছু করতে পারব। আর দেশের জন্য বোলিংয়ের রেকর্ড হয়েছে এটা জেনেছি আগেই। অনুভূতি অবশ্যই ভাল। প্রথম ইনিংসে ভাল করতে না পারার পর হতাশ হয়েছিলাম। সে জন্য চেষ্টা করেছি বেশি। এখন ভাল লাগছে।’ মিরপুরে জিম্বাবুইয়েকে নাকানি-চুবানি খাইয়েছেন। এখন খুলনা ও চট্টগ্রাম টেস্টেও ধারাবাহিকতা রাখার মিশন। এ বিষয়ে তাইজুল বলেন, ‘উইকেট কেমন হবে জানি না। সেটা কোন বিষয়ও নয়। শুধু জানি ঠিক জায়গায় বল ফেলতে হবে। আর সেটা করতে পারলেই ভাল কিছু করা সম্ভব হবে। আমি সেই চেষ্টাই করব।’ তবে দেশের হয়ে রেকর্ড করার দিনে বাংলাদেশ মাত্র ১০১ রানের টার্গেট নিয়ে খেলতে নেমেই হারতে বসেছিল। এখানেও নায়ক তাইজুল। ২৩ বলে দুই চারে ১৫ রান করে অপরাজিত থেকেছেন। আর এলটন চিগুম্বুরার বলে চার হাঁকিয়ে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশের জয়। আর সে জন্য নিজের নৈপুণ্য নিয়ে বলেন, ‘আমার কাছে বাংলাদেশের জয় পাওয়াটাই বেশি ভাল লেগেছে নিজের বোলিংয়ের চেয়ে। জয়ের পর কি করেছি সেটা ভুলেই গেছি।’ অধিনায়ক মুশফিকও দারুণ খুশি তাইজুলের ওপর। তিনি বলেন, ‘সে যেভাবে গত চারটা মাস চেষ্টা ও পরিশ্রম করেছে এমন নৈপুণ্য তাঁর প্রাপ্য ছিল। তাঁর ক্ষুধা এবং ভাল করার আকাক্সক্ষাই এত ভাল করার পেছনে মূল কারণ।’ তবে মুশফিক চান তাইজুলকে নিয়ে বেশি মাতামাতি করা না হোক। এতে করে তাঁর স্বাভাবিক নৈপুণ্যে ব্যাঘাত ঘটবে বলে মনে করেন তিনি। কারণ দারুণ ভাল করা এবং বাংলাদেশ দলের প্রথম টেস্ট জয়ের রূপকার বাঁহাতি এনামুল হক জুনিয়র হারিয়ে গেছেন। ইলিয়াস সানি ক্যারিয়ারের অভিষেকেই ৯৪ রানে ৬ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে যাত্রা শুরু করেছিলেন টেস্ট ক্রিকেটে ২০১১ সালে। তিনিও ছিটকে পড়েছেন। তাই সতর্ক অধিনায়ক মুশফিক। তিনি বলেন, ‘ও এখনও তরুণ। কাজেই আজকের এটা নিয়ে এত মাতামাতি করবেন না দয়া করে। এতে করে ওর মধ্যে একটা মনোভাব কাজ করতে পারে বড় হয়ে গেছি। আমি জানি সে যথেষ্ঠ মেধাবী এবং যথেষ্ঠ শ্রম দিয়েছে ভাল করার জন্য। ভবিষ্যতে এমন পারফর্মেন্স সে আরও করবে। আজ সে ভাল করেছে কারণ সাকিব, জুবায়ের ও শাহাদাত যেভাবে বোলিং করেছেন সেটাই ছিল তাঁর জন্য বড় সমর্থন। এটা তাঁর কাজকে সহজ করে দিয়েছে।’
×