ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মহিলা ফুটবলারদের জন্য আলাদা মাঠ দাবি

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ২৯ অক্টোবর ২০১৪

মহিলা ফুটবলারদের জন্য আলাদা মাঠ দাবি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কাজী মোঃ সালাউদ্দিন বাফুফে সভাপতি হয়ে সারা বছর মাঠে ফুটবল রাখার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা বাস্তবায়ন করেছেন ঠিকই। কিন্তু মাঠ সমস্যার সমাধান করতে পারেননি। এক বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ওপর দিয়েই বয়ে যায় যত ঝড়। এখানে প্রিমিয়ার লীগ, ফেডারেশন কাপ, সুপার কাপ, স্বাধীনতা কাপ, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবলের ফাইনাল, অনুর্ধ-১৮ টুর্নামেন্ট হয়ে থাকে। তাছাড়া খেলা ছাড়াও এখানে হয়ে থাকে কনসার্টও। ফলে মাঠের বারোটা বেজে যায়। কমলাপুর স্টেডিয়ামে হয়ে থাকে সিনিয়র ডিভিশন, চ্যাম্পিয়নশিপ লীগ, পাইওনিয়ার লীগের খেলা। কিন্তু এদের ভিড়ে যেন সুযোগই হয় না মহিলা ফুটবলারদের। যদিও তাদের খেলাই হয় খুব সীমিত পরিসরে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলোতে খেলতে গিয়ে তাদের সবচেয়ে বেশি পড়তে হয় মাঠ সঙ্কটে। সামনেই দুটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের একটি শেষ হয়েছে। বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৬ মহিলা ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্ব অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামেই। আর পাকিস্তানের ইসলামাবাদে আগামী ১১ নবেম্বর থেকে শুরু হওয়া ‘সাফ ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপে’ অংশ নেবে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল। অনুশীলনের ভেন্যু বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ও বাফুফে আর্টিফিসিয়াল টার্ফ মাঠে। কিন্তু ঠিকমতো অনুশীলন করতে পারেনি তারা। কারণ বাফুফের টার্ফে শুধু অনুশীলনই করা যায়। ম্যাচ খেলা যায় না। কারণ মাঠের আয়তন অনেক ছোট। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অনুশীলন করা যায়নি অনুর্ধ-১৮ ফুটবল টুর্নামেন্ট চলায়। তাছাড়া বৃষ্টিতে খেলা চালানোয় মাঠের অবস্থা হয়ে পড়েছিল শোচনীয়। তারপরও সন্ধ্যার পরে কয়েকদিন অনুশীলন করেছে মেয়েরা। সেখানেও ফ্লাডলাইটের আলো স্বল্পতার কারণে প্রায় অন্ধকারেই সারতে হয়েছে প্র্যাকটিস কাজ। পল্টন মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়ামেও ভালমতো অনুশীলন করা যায় না। কারণ মাঠ সমতল নয় ও শক্ত। এখানে অনুশীলন করলে খেলোয়াড়দের আহত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ ঝুঁকি নিয়েই কমলাপর স্টেডিয়ামে একটি প্রীতি ম্যাচ অনুর্ধ-১৬ দল ও জাতীয় মহিলা দল। প্রতিটি মাঠের যে বেহাল দশা, এর জন্য অনায়াসেই দায়ী করা যায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে (এনএসসি)। কারণ প্রতিটি মাঠই তাদের। নিয়ম অনুযায়ী তাদেরই মাঠ সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত। কিন্তু সেটি তারা করছে না। আর বাফুফেও মাঠগুলোকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারছে না। এ প্রসঙ্গে কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, ‘মেয়েদের ফুটবল বাংলাদেশে এমনিতেই কম হয়। তার ওপর মাঠ সমস্যার কারণে মহিলা ফুটবলের বিকাশ ঠিকমতো হচ্ছে না। যদি মেয়েদের জন্য আলাদা একটি মাঠ পাওয়া যেত, তাহলে অনেক ভাল হতো।’ গোল প্রজেক্টের আওতায় কমলাপুর ফুটবল স্টেডিয়ামের জন্য দুই বছর আগে এ্যাস্ট্রো টার্ফ দিয়েছিল ফিফা। এনএসসির খামখেয়ালীপনা, অসহযোগিতা আর গোঁয়াতুর্মিতে কমলাপুরের স্টেডিয়ামটি পাচ্ছিল না বাফুফে। সেই সঙ্গে ফিফার টার্ফ স্থাপনও হয়ে পড়েছিল অনিশ্চয়তায়। টার্ফ বসাতে ফিফার দেয়া শর্তের অন্যতম ২০ বছরের জন্য স্টেডিয়ামের মালিকানা থাকতে হবে। অনেক ঝামেলার পর শেষ পর্যন্ত মালিকানা পেয়েছে বাফুফে। তবে সেটা ১০ বছরের জন্য। দ্রুত কমলাপুর স্টেডিয়ামে টার্ফ বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। ফিফা থেকে প্রতিনিধিরা এরই মধ্যে মাঠের সার্বিক পরিস্থিতি দেখে গেছেন। কমলাপুর স্টেডিয়ামে টার্ফ বসানোর কাজ শুরু হলে ঢাকা মহানগরী সিনিয়র ডিভিশন লীগের খেলা বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ছয়-সাত বছর আগে এ ধরনের টার্ফ বরিশালে স্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সময় মতো এনএসসি মাঠ বা জমি বরাদ্দ দিতে না পারায় আর বাফুফে মাঠের ব্যবস্থা করতে না পারায় ফিফার টার্ফ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। তবে অনেক ঝামেলার পর দেশের প্রথম টার্ফ স্থাপন করা হয় বাফুফে ভবনসংলগ্ন আরামবাগ বালুর মাঠে ২০১১ সালে। এর আগে কমলাপুরে অবস্থিত স্টেডিয়ামটি ২০ বছরের জন্য লিজ চেয়েছিল বাফুফে। অক্টোবরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় কমলাপুর স্টেডিয়াম বাফুফেকে এই দীর্ঘমেয়াদে লিজ দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর আগে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কমলাপুর স্টেডিয়াম লিজ না দিয়ে বাফুফের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি করতে চেয়েছিল। কিন্তু ক্ষুব্ধ বাফুফে কর্মকর্তারা তখন স্টেডিয়ামটি না নেয়ার ঘোষণা দেন। কারণ সমঝোতা চুক্তির কাগজপত্র দেখালে ফিফা টার্ফের অনুমোদন দেবে না। কৃত্রিম ঘাসের মাঠ স্থাপনের কাজটি করবে ফিফাই। কমলাপুর স্টেডিয়ামে মাঠের পুরো অংশে কৃত্রিম ঘাসের মাঠ বসাতে ফিফার ব্যয় হবে প্রায় ৮ লাখ ডলার।
×