ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় ঐক্যের অভাবে নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী হয়নি

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২৯ অক্টোবর ২০১৪

জাতীয় ঐক্যের অভাবে নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী হয়নি

সেমিনারে অভিমত স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। গণতন্ত্র না থাকায় রাষ্ট্রীয় কর্মকা-ও বাধাগ্রস্ত হয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে যেভাবে শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন ছিল জাতীয় ঐক্যের অভাবে সেভাবে শক্তিশালী করা সম্ভব হয়নি। আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় এসে প্রথমবারের মতো সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করে। কিন্তু তারপরও কমিশন তার ইচ্ছামতো কাজ করতে পারেনি মূলত জাতীয় ঐক্যের অভাবে। মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থায়নের স্বচ্ছতা বিষয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। ইলেকশন গ্রুপ আয়োজিত এ সেমিনারের অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন ড. ওসমান ফারুক, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডেমোক্রেসি ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক তালেয়া রেহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের পরিচালক আব্দুল আলীম। মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ৭৫ সালের পট পরিবর্তনের পরই রাজনৈতিক অর্থায়নে অপপ্রয়োগ শুরু হয়। সামরিক শাসকরা তাদের দল গঠন এবং রাজনৈতিক দল ভাঙ্গতে অর্থের অপব্যবহার শুরু করেন। ৭৫ সালের পর থেকে রাজনীতিতে যে বিভাজন শুরু হয়েছে আজও তা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, বর্তমানে অর্থ ছাড়া রাজনীতি কঠিন হয়ে পড়ছে। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও অর্থ সাহায্য নিয়ে রাজনীতি করা সম্ভব হয় না। এ কারণেই ব্যবসায়ীরা বেশি মাত্রায় রাজনীতিতে ঢুকে পড়ছে। রাজনীতি করতে হলে জনগণকে সাহায্য সহযোগিতা করতে হবে। আর সাহায্য সহযোগিতা অর্থ ছাড়া করা সম্ভব হয় না। অর্থ ছাড়া রাজনীতি করার দিন ফুরিয়ে এসেছে। দল পরিচালনা, রাজনৈতিক কর্মসূচীর বাস্তবায়নের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। এজন্য রাজনৈতিক ব্যয় সীমাবদ্ধ করে দেয়া সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, রাজনৈতিক কর্মকা-ের জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন হলেও আওয়ামী লীগ দল পরিচালনায় অর্থ আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সব সময় স্বচ্ছতা বজায় রাখে। অন্য দলের মতো প্রার্থী মনোনয়নে বাণিজ্য করা হয় না। সদস্যদের চাঁদা, ফরম বিক্রি এবং কিছু ক্ষেত্রে ডোনারদের সহায়তায় হলো আওয়ামী লীগের আয়ের উৎস। তিনি বলেন, নির্বাচনে একজন প্রার্থীর যে খরচ কমিশন থেকে বেঁধে দেয়া হয়েছে তা পুননির্ধারণ করা প্রয়োজন। কারণ বর্তমান প্রেক্ষাপটে ২৫ লাখ টাকায় নির্বাচন করা সম্ভব হয় না। অর্থ না দিলে কেউ দলের পোস্টারও লাগাতে চায় না। তিনি বলেন দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে আগে দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগ শুরু থেকে দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চা করে আসছে। এ ধরনের গণতান্ত্রিক চর্চা অন্য দলেও হওয়া প্রয়োজন উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠনে আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক বলেন, প্রশাসন নিরপেক্ষ করা না গেলে, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এগুলো হলো গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ। তিনি বলেন, দেশের সবার জন্য গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। যেখানে কোন দলের একক আধিপত্য থাকবে না। নির্বাচনের সবার জন্য সমান সুযোগ কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল অনুদান ভিক্তিক না হলে রাজনীতি চলে যাবে দুর্বৃত্তদের হাতে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। নির্বাচন ব্যয় ২৫ লাখ টাকা বেঁধে দেয়া বস্তবসম্মত নয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ২৫ লাখ টাকায় নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব কিনা তা ভেবে দেখতে হবে। আইন যদি বাস্তবসম্মত না হয় তাহলে আইনে ফাঁকফোকর থেকে যাবে। রাজনৈতিক দলের রাষ্ট্রীয় অর্থায়নের বিষয়ে বলেন, দুর্নীতি বন্ধ না করে রাজনৈতিক দলের অর্থায়ন করা ঠিক হবে না। এটা করতে হলে আগে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের বলেন, দেশে নির্বাচনী আইন শক্তিশালী হলেও এর প্রয়োগে দুর্বলতা রয়েছে। যে প্রেক্ষিতে এসব আইন করা হয়েছে তার সামাজিক বাস্তবতা ভিন্ন থাকায় আইন বাস্তবায়নে দুর্বলতা দেখা দেয়।
×