ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গীদের জামিন ও হত্যা পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৩০ অক্টোবর ২০১৪

জঙ্গীদের জামিন ও হত্যা পরিকল্পনা

বিশ্বজিত রায় বিশ্ব সারাবিশ্বের মতো আমাদের দেশেও জঙ্গী তৎপরতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিনই খবরের কাগজে জঙ্গী সম্পর্কিত কোন না কোন খবর লক্ষ্য করা যায়। এসব খবরে সাধারণ মানুষের মধ্যে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। আতঙ্কগ্রস্ত মানুষ বা যে কোন স্থাপনা কখন যে তাদের আক্রমণের শিকার হয় তার কোন নিশ্চয়তা নেই। সর্বশেষ খবরে জানা যায়, বাংলাদেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ দুই দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, স্বাধীনতার পক্ষের বুদ্ধিজীবীদের গুপ্তহত্যা এবং বঙ্গভবন, গণভবন, বিচারপতিদের বাসভবন, মন্ত্রী-এমপিদের বাসভবন, আদালতপাড়া, বিদ্যুতকেন্দ্র, টেলিভিশন ও রেডিও স্টেশন, ওয়াসা, গ্যাস ফিল্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় গুপ্ত হামলার নীলনক্সা সাজিয়েছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হরকত-উল-জিহাদ (হুজি)। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদের হাতে আটককৃত জঙ্গীদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। বর্তমান সরকারের কঠোর নজরদারির কারণে দেশে জঙ্গীদের কার্যক্রম আগের মতো ব্যাপক না থাকলেও তারা নীরবে তাদের কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় দেশের সীমান্তবর্তী ভারতের একটি প্রদেশে জঙ্গীরা আস্তানা গেড়ে অবস্থান করছে। সেখান থেকে তারা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর সম্প্রতি ভারতের বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা উপমহাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ধর্মের অপব্যাখ্যাকারী ওই জঙ্গী সংগঠনগুলো তাদের প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বোমা বা গ্রেনেড। জঙ্গীরা বিভিন্ন বয়সের মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে দলে ভিড়াচ্ছে এবং বোমা তৈরির প্রশিক্ষণসহ ধর্ম সম্পর্কিত নানা অপব্যাখ্যা তুলে ধরছে তাদের সামনে। আমাদের দেশে বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা যেভাবে জঙ্গী আটক হচ্ছে, তাতে দেশের প্রতিটি শ্রেণী-পেশার মানুষকে ভাবনায় ফেলে দিচ্ছে। কঠোর নজরদারিতে থাকায় আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে জঙ্গীরা তাদের কৌশল নির্ধারণ করছে। আটককৃত সকল জঙ্গীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং তারা যাতে আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে জামিনে বের হয়ে আবার নাশকতায় জড়িয়ে পড়তে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। সম্প্রতি জাতীয় একটি দৈনিকে প্রচারিত প্রতিবেদনে জানা যায়, জঙ্গীরা জামিনে বের হয়ে গা-ঢাকা দিয়ে দেশ ও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। পলাতক থাকাবস্থায় তারা বিভিন্ন অপকৌশল রপ্ত করছে। জামিনে মুক্ত হওয়া এসব জঙ্গীকে ধরতে অনেকটা বেগ পেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ জিহাদী গ্রুপ নামে নতুন আরেকটি সংগঠনের হয়ে কাজ করছে নিষিদ্ধ ঘোষিত পাঁচটি জঙ্গী বাহিনী। ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) উত্থানে বাংলাদেশের জঙ্গীদের মধ্যে উজ্জীবিত মনোভাব লক্ষ্য করা গেছে বলে জানান গোয়েন্দারা। ইদানীংকালে আটক জঙ্গীদের কাছ থেকে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন স্থানীয় জঙ্গীরা আইএসের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। পলাতক জঙ্গীদের ধরতে গোয়েন্দা, র‌্যাব ও পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাবস্থায় তাদের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবি ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালিয়ে দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চালিয়েছে। শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলা ভাইসহ শীর্ষপর্যায়ের ছয় জঙ্গী নেতার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর কিছুদিন জেএমবির তৎপরতা কমে যায়। তখন জেএমবির অনেক সদস্যকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। গ্রেফতারকৃত এসব জঙ্গীর মধ্যে অনেকে জামিনে মুক্ত হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় বোমা হামলা ঘটনার মামলায় হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় ১৪ নেতা কারাগারে আছে। কারাগারে আটক জঙ্গীদের সঙ্গে সুকৌশলে দেখা করছে সহযোগী সঙ্গীরা। আটকদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের কূটকৌশল গ্রহণ করছে দেখা করতে আসা সংগঠনের অন্য সদস্যরা। আর এভাবেই ভেতর ও বাহিরে জঙ্গীরা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কারাগারে আটককৃত অনেক জঙ্গী উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করছে বলেও তথ্য রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। দেশ ও দেশের বাইরে অবস্থানকারী জঙ্গীরা যে ছক কষছে তাতে সাধারণ মানুষজন অনিশ্চয়তা এবং উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন। যে কোন সময় ঘটতে পারে তাদের ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র। ভারতের বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় পলাতক জঙ্গীদের সন্ধানে ইন্টারপোলের সাহায্য নিচ্ছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ। ইন্টারপোলের রেড এ্যালার্ট জারি হলেই বর্ধমান বিস্ফোরণে জড়িত জঙ্গীদের সন্ধানে বাংলাদেশে তল্লাশি শুরু করবে এনআইএ। বাংলাদেশ সরকার জঙ্গীদের বিরুদ্ধে যে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে, তাতে অভিযুক্ত জঙ্গীরা বাংলাদেশে নয় বরং পাকিস্তানে পালিয়ে যেতে পারে। তবে গোয়েন্দাদের ধারণা, বর্ধমানে অভিযুক্ত জঙ্গীরা বাংলাদেশেই রয়েছে। বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনার জেরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এক হাজারেও বেশি অননুমোদিত মাদ্রাসাকে চিহ্নিত করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও ত্রিপুরা এই তিন রাজ্যের সীমান্তে এসব মাদ্রাসা রয়েছে।
×