ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিএমডিএ বনায়ন প্রকল্পের ফাইল গায়েব!

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৩০ অক্টোবর ২০১৪

বিএমডিএ বনায়ন প্রকল্পের ফাইল গায়েব!

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ একযুগ পেরিয়ে যাওয়ার পরও প্রায় ছয় কোটি টাকা আত্মসাতের কোন কূলকিনারা হয়নি। পাশাপাশি তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ না করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নানান ধরনের ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি দুর্নীতি দমন বিভাগের নোটিসে আনার পরও তারা অজ্ঞাত কারণে বিষয়টি চেপে গিয়ে বাঁচাতে চেয়েছে আত্মসাতকারী দুর্নীতিবাজদের। বহু আগে তদন্তের সূচনালগ্নেই দুর্নীতিসংক্রান্ত ফাইলটি গায়েব করে কিংবা চেপে রেখে চেষ্টা করেছিল ভিন্নভাবে মোটা অংকের টাকা খেয়ে প্রসঙ্গটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার। আর তাই বর্তমানে বিষয়টি নুতন করে তদন্তের চেষ্টা করেও নথিপত্র ও প্রমাণাদির অভাবে হয়তবা শেষপর্যন্ত কোটি কোটি টাকা আত্মসাতকারী দুর্নীতিবাজরা বেঁচে যাবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ফাইল গায়েব করে দুর্নীতিবাজরা এখনও কেউ কেউ কর্মক্ষেত্রে থেকে বসদের নতুনভাবে ম্যানেজ করে কিংবা বিশ্বাসী সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অনেকে অবসরে গেছেন। দুর্নীতির এ ঘটনাটি বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বনায়ন প্রকল্পের। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০২ সালে রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৪ উপজেলায় ৫ কোটি ২৪ লাখ ১৫ হাজার ৪শ’ টাকার প্রায় সাড়ে তিন লাখ আম্রপালির চারা কেনাসহ লাগানোর কাজে ব্যয় করা হয়েছিল। একটি উদ্ভট প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে এই টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছিল। প্রকল্পটি হচ্ছে বরেন্দ্র এলাকার জমির আইল বনায়ন প্রকল্প। যার কোন বাস্তবতা না থাকায় এবং যেনতেন প্রকারে জমির আইলে দেড় লাখ আম্রপালির গাছ লাগিয়ে সাড়ে তিন লাখ চারা গাছের বিলের টাকা আত্মসাৎ করা হয়। বাস্তবে তাদের হিসাব মতো যে দেড় লাখ চারা লাগানো হয়েছিল তার একটি গাছও আজ আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিএমডিএর হিসাব মতে, ১৯৯৭ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত নিবিড় বনায়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে ২০০২ সাল থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর, নাচোল, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, তানোর, পবা, পুঠিয়া, নওগাঁর মহাদেবপুর, পতœীতলা, সাপাহার, পোরশা, মান্দা, নিয়ামতপুর ও নওগাঁ সদর উপজেলায় আইল বনায়ন কর্মসূচীর আওতায় তিন লাখ ৪৯ হাজার ৪৩৬টি আম্রপালি চারা রোপণ দেখানো হয়। আর এ সব চারা ক্রয়ের খরচ দেখানো হয় ৫ কোটি ২৪ লাখ ১৫ হাজার ৪০০ টাকা। সূত্র মতে, সেই সময়ে নিবিড় বনায়ন প্রকল্পে খরচ করা হয় মোট ৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর সিংহ ভাগ ব্যয় দেখানো হয় আইল বনায়ন কর্মসূচীতে। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে আম্রপালির চারা কেনা হয় তৎকালীন বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালকের নিজস্ব এনজিও সেন্টার ফর এ্যাকশন রিসার্চ বারিন্দের (কার্ব) কাছ থেকে। এই নির্বাহী পরিচালক তৎকালীন জোট সরকারের জনৈক ক্যাবিনেট মন্ত্রীর ভাই হবার সুবাদে কোন সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই জমির আইলে গাছ লাগানোর এক উদ্ভট কর্মসূচী গ্রহণ করে তড়িঘড়ি বাস্তবায়নে মাঠে নেমে পড়ে। মাত্র এক বছরের মধ্যে এই কর্মসূচীর কাজ শেষ করে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৪৬৬টি আম্রপালি চারার মূল্য বাবদ ৫ কোটি ২৪ লাখ ১৫ হাজার ৪৩০ টাকা বিল করে তুলে নেয়া হয়। এতদিন অর্থাৎ ১২ বছরে সত্যিকার বাস্তব প্রকল্প হলে জমির আইল রূপান্তর হতো আমবাগানে (এক সারির)। সেখানে আজ তদন্তে নামলে বা সরেজমিন গেলে কোন গাছের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। ফাঁকা আইল পড়ে রয়েছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের জনৈক সংসদ সদস্য সংসদে প্রশ্ন উত্থাপন করে দাবি করেন, বিএমডিএ আইল বনায়ন কর্মসূচীতে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। এর পরই প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। তোলপাড় শুরু হয়ে যায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অফিসে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কর্তৃপক্ষ তদন্তে নেমে আইল বনায়ন কর্মসূচীর ব্যয় করা অর্থসংক্রান্ত নথিপত্র বিএমডিএ অফিসে খুঁজে না পাওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে অফিসের মধ্যে ঘাটপি মেরে বসে থাকা রাজনৈতিক বিবেচনায় জোট সরকারের (বিএনপি-জামায়াত) আমলে নিয়োগপ্রাপ্তরা ফাইল গায়েব কিংবা সরিয়ে রেখেছে। তবে সেই সময়ের বিএমডিএর রাজশাহী অঞ্চলের নির্বাহী কর্মকর্তা, সরাসরি বলেছিলেন তাদের কাছে এ ফাইল না থাকলেও তা সংরক্ষণ করছেন বনায়ন কর্মসূচীর পরিচালক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বনায়ন কর্মসূচী প্রকল্প কর্মকর্তার কাছেও এই ফাইল পাওয়া যায়নি।
×