ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গোলামপুত্র আযমীর চড়ও হজম করতে হচ্ছে বিএনপিকে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১ নভেম্বর ২০১৪

গোলামপুত্র আযমীর চড়ও হজম করতে হচ্ছে বিএনপিকে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জামায়াতের কাছে অসহায় বিএনপিকে এখন গোলামপুত্রের চড়ও হজম করতে হচ্ছে। গো আযমের জানাজায় না আসায় বিএনপিকে কটাক্ষ করে গোলাম আযমপুত্র আযমী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস ও মিডিয়ায় সাক্ষাতকার দিয়ে কথা বললেও ‘রাজনৈতিকভাবে দৈন্য’ বিএনপি তার প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াত নাখোশ হতে পারে ভেবেই বিএনপিকে অকৃতজ্ঞ দল বলার পরও অপমানের বোঝা মাথায় নিয়েই আযমীকে ছাড় দিয়েছেন ফখরুল, চড় খেয়েও চাইছেন হজম করতে। শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যৌথসভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জামায়াত ছাড়া বিএনপি ক্ষমতায় যেতে পারবে না বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে প্রয়াত যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের পুত্র আমান আযমী বিএনপিকে অকৃতজ্ঞ দল বলে যে মন্তব্য করেছেন এ ব্যাপারে বিএনপির কোন বক্তব্য নেই। কারণ, গোলামপুত্র আযমী জামায়াতের কেউ নয়, তাই তাঁর বক্তব্য ব্যক্তিগত। জামায়াত আমাদের সঙ্গে ২০ দলীয় জোটে আছে, এ ব্যাপারে জামায়াতের সরাসরি কোন বক্তব্য নেই। তাই আযমীর মন্তব্য বিএনপি গ্রহণ করছে না। উল্লেখ্য, জামায়াতের আমির গোলাম আযমের মৃত্যুতে শোক না জানানোর প্রতিবাদে বিএনপিকে অকৃতজ্ঞ এবং জামায়াত ছাড়া বিএনপি অতীতেও ক্ষমতায় যেতে পারেনি এবং ভবিষ্যতেও যেতে পারবে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন গোলাম আযমের চতুর্থ পুত্র আমান আযমী। ২৮ অক্টোবর তিনি ‘তারেকের নির্দেশে আযমের জানাজা বর্জন করল বিএনপি’ শিরোনামে ফেসবুকে একটি নিউজ শেয়ার করেন। সেইসঙ্গে নিচে তিনি লেখেন, ‘গোলাম আযমের মৃত্যুর পর বিএনপির নীরবতায় পুরো জাতি হতাশ। আমি জানি না কেন তারা এমনটি করল। এটা বলতে আমার কোন দ্বিধা নাই যে, জামায়াতের সমর্থন ছাড়া বিএনপি কখনোই ক্ষমতায় যেতে পারত না। গোলাম আযমের মৃত্যুতে দলটির নীরবতা অপ্রত্যাশিত ও অগ্রহণযোগ্য। বিএনপির মঙ্গল হবে যদি তারা মনে রাখে যে, জামায়াতের সমর্থন ছাড়া তারা কখনই আবার ক্ষমতায় যেতে পারবে না। এটা আমার উন্মুক্ত চ্যালেঞ্জ। কতই না অকৃতজ্ঞ তারা!’ আযমীর এ বক্তব্যের পর সারাদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপি সমর্থক কেউ কেউ আযমীকে অশালীন ভাষায় গালমন্দ করেন। এ পরিস্থিতিতে সবাই আশা করেছিল বিএনপি হয়ত কঠোর ভাষায় এর জবাব দেবে। কিন্তু দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে যা বলেছেন তাতে জামায়াতের প্রতি বিএনপির চরম দুর্বলতার বহির্প্রকাশ ঘটেছে। ‘সরকার যে কোন সময় দেশে নির্বাচন দেয়ার ক্ষমতা রাখে’ বলে প্রধানমন্ত্রী জনগণের দাবির কাছে নতি স্বীকার করছেন বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের বিষয়ে যে কথা বলেছেন তাতে বোঝা যায় তিনি বুঝতে শুরু করেছেন দেশের মানুষ অতি দ্রুত একটি নির্বাচন চায়। তাঁর এ বক্তব্য সিগনিফিকেন্ট। বিএনপি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত এবং জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচন হলেই বিএনপি জয়লাভ করবে। মির্জা ফখরুল বলেন, যে কোন সময় নির্বাচন হতে পারে বলে প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলেছেন তা সত্য। প্রধানমন্ত্রীর এমন কথায় পরিষ্কার হচ্ছে জনগণের দাবির কাছে তিনি মাথানত করছেন। আমরা আশা করি তিনি জনগণের দাবি মেনে নিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেবেন। তিনি বলেন, সরকার যখনই নির্বাচন দেবে, তখনই বিএনপি নির্বাচনে যাবে। তবে তা হতে হবে সব দলের অংশগ্রহণমূলক একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। বিএনপি নির্বাচন ও আন্দোলনের সব প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফর করে এসে বরাবরের মতোই সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তাঁর বক্তব্যে নতুন কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রীর আরব-আমিরাত সফর সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নিজের স্বভাবসূলভভাবে বিএনপি সম্পর্কে অসত্য বক্তব্য প্রদান ও মিথ্যাচার করেছেন। মির্জা ফখরুল শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে যুবদলের ৮ নেতাকর্মীকে আটকের নিন্দা জানান এবং তাদের মুক্তি দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে ৭ নবেম্বর উপলক্ষে দলীয় কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে ৭ নবেম্বর সকাল ৬টায় নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের সকল কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ১০টায় খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ এবং ৮ নবেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সমাবেশ। এছাড়া ৭ নবেম্বর উপলক্ষে পোস্টার, ক্রোড়পত্র প্রকাশ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে মির্জা ফখরুল জানান। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম আবদুল মান্নান, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, দলের যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, গোলাম আকবর খন্দকার, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খাইরুল কবির খোকন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক হাবিব-উন- নবী খান সোহেল, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সহ-প্রচার সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক তৈমুর আলম খন্দকার, মহিলা দলের সভাপতি নুরী আরা সাফা, সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আমার দেশ অফিসে অগ্নিকা-ের ঘটনায় তদন্ত দাবি ॥ এদিকে বিএসইসি ভবনে অগ্নিকা-ের পর বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমার দেশ পত্রিকার অফিসে অগ্নিকা- একটি পরিকল্পিত চক্রান্ত। আমার দেশ পত্রিকাকে নিশ্চিহ্ন করতে এই অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এ রহস্যজনক অগ্নিকা-ের সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। যুবদলের ৮ কর্মী আটক ॥ রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে যুবদলের ৮ কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার সকালে যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের মুক্তির দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশী বাধা অতিক্রম করে মানববন্ধন করতে গেলে সেখান থেকে ৮ যুবদল কর্মীকে আটক করা হয় বলে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে জানানো হয়।
×