ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তবু নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতেই

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ৪ নভেম্বর ২০১৪

তবু নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতেই

দিন শেষে টাইগারদের সংগ্রহ ১৯৩/৩ মিথুন আশরাফ, খুলনা থেকে ॥ দিন শেষে বাংলাদেশ এত কম রান করবে দিনের শুরুতে কেউ তা বুঝতে পেরেছে। তাও আবার ব্যাটিং উইকেটে! এমন হয়েছে বাংলাদেশ একদিনে ২০০ রানও করেনি। করেছে ১৯৭ রান। তবে উইকেট হারিয়েছে মাত্র ৩টি আর এ একটি বিষয়েই অল্প রান করার পরও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতেই আছে। পরিকল্পনাই যে ছিল এ রকম। নিজেদের পরিকল্পনা সঠিকভাবেই কাজে লাগাতে পেরেছে এবার খুলনা টেস্টের প্রথম দিনে মুশফিকরা। উইকেট না হারিয়ে দিন শেষ করার পরিকল্পনা কাজে লেগেছে। এ পরিকল্পনায় শতভাগ সফল বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবালও। ২৫০ বল খেলে করেছেন ৭৪ রান! এখনও ব্যাটিংয়ে আছেন। আজ সাকিবকে (১৩*) নিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে নামবেন তামিম। টস জিতে ব্যাটিং নেয় বাংলাদেশ। শুরু থেকেই বোঝা যাচ্ছিল ব্যাটিং উইকেট। টস করে বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমও বললেন তাই, ‘ফ্ল্যাট উইকেট। পরের দিকে স্পিন হবে ভালই। আমাদের চেষ্টা থাকবে যত বেশি উইকেটে থাকা যায়। বড় জুটি গড়ার দিকেই নজর থাকবে।’ আর টস হারের পর জিম্বাবুইয়ে অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর বলেছেন, ‘আমিও ব্যাটিংই নিতাম। উইকেট অনেক ভাল। পরে গিয়ে স্পিনারদের সুবিধা হবে। চাইব যেন দলের সিমাররা দ্রুতই উইকেট নিতে পারে। চাপ তৈরি করতে পারে। আমরা মানসিকভাবে চাঙ্গা থাকার চেষ্টা করব।’ দুই দলের অধিনায়কের কাছেই মনে হয়েছে খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামের উইকেট ব্যাটিংনির্ভরই। বাংলাদেশ দল সেই প্রমাণ দিলও এবং উইকেট বেশি না হারিয়ে দিন শেষ করার পরিকল্পনাতেও সফল হলো। শুরুতেই ৬ রানে শামসুর রহমান (২) শুভর উইকেটটি হারালেও এরপর থেকেই নিজেদের গুছিয়ে নেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকেন তামিম ও মুমিনুল। মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে যাওয়ার আগে দলের স্কোরবোর্ডে ১ উইকেটে ৬২ রান জমা হয়। এর মধ্যে তামিমের ব্যাট থেকে আসে ২৭ ও মুমিনুলের ব্যাট থেকে আসে ২৬ রান। দুইজন মিলে সমানতালে এগিয়ে যেতে থাকেন। দলকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। উইকেটের সুবিধা পেয়ে যেন ব্যাটসম্যানরা আবার জেগে ওঠেন। খুলনা টেস্টটি জেতা বাংলাদেশের জন্য অনেক জরুরী। এ টেস্ট জিতলে চলমান তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ এক ম্যাচ হাতে থাকতেই জিতে নেবে বাংলাদেশ। দ্বিতীয়বারের মতো দেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতবে বাংলাদেশ। এর সঙ্গে র‌্যাঙ্কিংয়েও উন্নতি হবে। ২০১৭ সালে যে টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের ১০ নম্বরে থাকলে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের জয়ী দলের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে হবে, তা থেকে মুক্তি মেলার পথ তৈরি হবে। টেস্টটি জিতলে ১০ থেকে র‌্যাঙ্কিংয়ের ৯ নম্বরে উঠে যাবে বাংলাদেশ। সেই পথেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। দুইজন মিলে যেন রান তোলার চেয়ে জিম্বাবুইয়ে ক্রিকেটারদের রোদে ত্যক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েই নেমেছেন। তামিমের যখন ২৮ রান তখন একবার বড় আপীল হয়। চিগুম্বুরার বলে শামসুরের এলবিডাব্লিউ নিয়ে রিভিউ চেয়ে সফল হন জিম্বাবুইয়ে অধিনায়ক। এবারও সেই চিগুম্বুরাই বোলার। ব্যাটসম্যান তামিম। আপীলও হয় জোরালো। আম্পায়ার আপীলের সাড়া দেন না আবার টেইলর রিভিউ নেন। এবার আর সফল হতে পারেনি জিম্বাবুইয়ে। তবে স্পিনাররা ভাল চাপ প্রয়োগ করে তামিম ও মুমিনুলকে। সেই চাপেও অবশ্য কাজ হয়নি। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৮৬ টেস্ট খেলে ৫টিতে জয় পায়। এর মধ্যে ৩টি জয়ই আসে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে আর দুটি টেস্ট জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। দ্বিতীয় টেস্টে যেভাবে খেলছে বাংলাদেশ, তাতে ম্যাচ যে ৫দিনে গড়াবে তা বোঝাই যাচ্ছে। জয় পেতে পারে বাংলাদেশই। যখন বাংলাদেশের জয় এবং ম্যাচ ৫ দিনে গড়ানো নিয়ে সবাই আলোচনায় ব্যস্ত, তখনই বাংলাদেশের আরেকটি উইকেটের পতন ঘটে। দলীয় ৭৮ রানে মুমিনুল আউট হয়ে গেলে বাংলাদেশের দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটে। এরপর মাহমুদুল্লাহ ব্যাট হাতে নেমে তামিমের সঙ্গে জুটি গড়েন। যখন দ্বিতীয় সেশন শেষ হবে তার ঠিক ২ বল আগে তামিম অর্ধশতক পূরণ করেন। তামিম তাঁর অর্ধশতক পূরণ করতে খেলেন ১৬৯ বল! যা কিনা এখন পর্যন্ত তামিমের ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে ধীরগতির অর্ধশতক করার রেকর্ড। এর আগে ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৪১ বলে অর্ধশতক করেছিলেন এ ওপেনার। তবে ২০০৩ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০৪ বলে ও ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৭৫ বলে যে অর্ধশতক করেছিলেন রাজিন সালেহ, তা এখনও বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বলে অর্ধশতক করার রেকর্ড হয়ে জ্বলজ্বল করেই জ্বলছে। তামিম যে ধীরগতির ইনিংস খেলেছেন এমন ইনিংসে দলও উপকৃতই হয়েছে। দ্বিতীয় সেশন শেষ করে দল ১২৭ রানে। অবশ্য প্রথমদিন দেখে সবার মনে এও প্রশ্নও উঠে যায়, একটু বেশিই কি স্লো খেলে ফেলল না ব্যাটসম্যানরা? তামিম তাঁর ধীরগতির খেলাই চালিয়ে যান। তবে মাহমুদুল্লাহ যেন একটু আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। এরপরও আক্রমণ করেন তখনই যখন বল আসে ব্যাটে। না হলে মাহমুদুল্লাহ’ও সমান তালেই এগিয়ে গিয়ে অর্ধশতকও পূরণ করে ফেলেন। টেস্ট ক্যারিয়ারের ১০ম অর্ধশতক করেছেন মাহমুদুল্লাহ। খুলনা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে অর্ধশতক করায় টানা চার টেস্টে একটি করে ইনিংসে অর্ধশতক হয়েছে মাহমুদুল্লাহর। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই টেস্টে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও প্রথম ইনিংসে দুটি ও জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে একটি ও দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে আরেকটি অর্ধশতক করেন মাহমুদুল্লাহ। তবে খুব বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেননি আর ৬ রান যোগ হতেই মাহমুদুল্লাহ সাজঘরে ফেরেন। মাহমুদুল্লাহ আউট হলেও তামিম ঠিকই উইকেট আঁকড়ে থাকেন। দিনশেষে এমন একটি ইনিংস খেলেছেন আর ১৬ রান হলে শতকই হয়ে যাবে। সাকিব আল হাসান ব্যাট হাতে নামেন এবার। আর কোন উইকেট পড়েনি বাংলাদেশের। তামিম ও সাকিব মিলে দিন শেষ করেন। তবে স্কোরবোর্ডে কিন্তু ২০০ রানের কমই হয়েছে। টেস্ট ক্রিকেটে এমন দিনের দেখা অনেক মিলেছে। বাংলাদেশের মাধ্যমে আরেকটি স্লো ব্যাটিংয়ের দিন দেখল টেস্ট ক্রিকেট। বাংলাদেশও কি এমন দিন কখনও দেখিয়েছে, দেখায়নি। তবে দিন শেষে বাংলাদেশই এগিয়ে থাকছে। রান হয়েছে ২০০’র কাছাকাছি। এর চাইতেও বড় বিষয় হচ্ছে উইকেট আছে ৭টি। আজ দ্বিতীয় দিনে দ্রুত রান তোলার সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। যদি সেই রান ৪০০’তে গিয়ে ঠেকে তাহলে জিম্বাবুইয়ের জন্য বিপদ হয়ে যাবে। সেটিই চায় বাংলাদেশ। এখন দেখা যাক তামিম ও সাকিব মিলে এবং পরে থাকা মুশফিক, শুভগতরা কী করতে পারেন। অল্প রান করেও উইকেট বেশি জমা থাকায় প্রথম দিনের নিয়ন্ত্রণ যে বাংলাদেশের হাতেই আছে দ্বিতীয় দিনেও সেটি থাকে কিনা।
×