ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ হ্রাস

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ৬ নভেম্বর ২০১৪

কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ হ্রাস

অর্থবছরের তিন মাসে ১৮ ব্যাংকের ১০ শতাংশ ঋণ অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কৃষি খাতে ব্যাংক ঋণের পরিমাণ কমেছে। এ সময় ব্যাংকগুলো কৃষি খাতে মোট ঋণ দিয়েছে ২ হাজার ৭৫০ কোটি ৪১ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। সে সময় ব্যাংকগুলো এ খাতে মোট ঋণ বিতরণ করেছিল ২ হাজার ৮৬১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ১৮টি ব্যাংক ১০ শতাংশেরও কম ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে নতুন অনুমোদন পাওয়া ২টি ও বিদেশী ৫টি ব্যাংক কোন ঋণ বিতরণ করেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ বিতরণের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রার ১০ শতাংশেরও কম ঋণ বিতরণ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৪টি ব্যাংকের মধ্যে ২টি এবং বেসরকারী ৩৯টি ব্যাংকের মধ্যে ৯টি। ব্যাংকগুলো হলো- সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, ইস্টার্ণ ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক। এর মধ্যে বিদেশী ৭টি ব্যাংক কোন ঋণ দেয়নি। ঋণ বিতরণ না করা বিদেশী ব্যাংকগুলো হলো- ব্যাংক আল-ফালাহ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক সময়ে নতুন অনুমোদন পাওয়া বেসরকারী ব্যাংকের মধ্যে ফারমার্স ব্যাংক ও এনআরবি ব্যাংক কোন ঋণ বিতরণ করেনি। সার্বিক কৃষি ঋণ বিতরণ কমলেও বিষয়টিকে ইতিবাচকই দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, কৃষিঋণ বিতরণে এখন অনেক বেশি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কৃষিঋণের অর্থ অন্যখাতে যাতে ব্যয় করা না হয় তার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর নজরদারি করছে। ফলে এখন এ খাতে বিতরণকৃত ঋণের পুরোটাই কৃষি খাতে ব্যয় হচ্ছে বলে জানান তাঁরা। কৃষিঋণ ও আর্থিক সেবাভুক্তি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক প্রভাষচন্দ্র মল্লিক জানান, কৃষিঋণ বিতরণ ব্যবস্থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে। যদিও প্রথম প্রান্তিকে এ খাতে ঋণের পরিমাণ কম হয়েছে, তবে যতটুকু ঋণ দেয়া হয়েছে তা সঠিক খাতেই দেয়া হয়েছে। কৃষিঋণের টাকা অন্য খাতে যাতে না যায় সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর নজরদারি করছে। প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী আলোচ্য সময়ে সার্বিক কৃষিঋণ আদায় বাড়লেও সরকারী ব্যাংকগুলো এক্ষেত্রেও পিছিয়ে রয়েছে। এ সময় সার্বিক কৃষিঋণ আদায় হয়েছে তিন হাজার ২৫৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, যা মোট বিতরণকৃত অর্থের ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এ হিসাবে সার্বিক কৃষিঋণ আদায় বেড়েছে ১৫১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আর সরকারী ব্যাংকগুলোয় কৃষিঋণ আদায় হয়েছে এক হাজার ৫৩৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আদায়ের এ হার বিতরণকৃত ঋণের ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে মোট বিতরণকৃত ঋণের ৬ দশমিক ৬১ শতাংশ বা এক হাজার ৬৭৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা আদায় হয়েছিল। এ হিসাব অনুযায়ী সরকারী ব্যাংকগুলোয় কৃষিঋণ আদায় কমেছে ১৩৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বা ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। অপরদিকে বেসরকারী ও বিদেশী ব্যাংক মিলে মোট বিতরণকৃত কৃষিঋণের ২৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ বা এক হাজার ৭২০ কোটি ৩২ লাখ টাকা আদায় করেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল এক হাজার ৪৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রতিবেদন অনুসারে প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকগুলো মোট কৃষিঋণ বিতরণ করেছে মোট লক্ষ্যমাত্রার ১৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এর মধ্যে সরকারী ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ১৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। প্রতিবেদনে দেখা যায়, সরকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে এ সময় সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন বিশেষায়িত এ ব্যাংকটি তিন মাসে ৮৩১ কোটি ২৪ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। এরপরই রয়েছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক । রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন এ ব্যাংকটি এ সময় ২৪০ কোটি ২৯ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। অপরদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সবচেয়ে বেশি আদায় করেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। ব্যাংকটি তিন মাসে ৮৮৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা আদায় করেছে। অন্যদিকে সবচেয়ে কম আদায় করেছে রূপালী ব্যাংক। এ ব্যাংকটি আদায় করেছে ৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। বেসরকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে ঢাকা ব্যাংক এবং ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। এরপরেই রয়েছে এক্সিম ব্যাংকের অবস্থান। ঢাকা ব্যাংক কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ করেছে ১০৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, যা তাদের মোট লক্ষ্যমাত্রার ৫৭ দশমিক ৬২ শতাংশ। ইসলামী ব্যাংক ১০৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করেছে, যা ব্যাংকটির মোট লক্ষ্যমাত্রার ১৩ শতাংশ ।
×