ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইইউ যুদ্ধাপরাধ বিচারের বিপক্ষে নয়

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৬ নভেম্বর ২০১৪

ইইউ যুদ্ধাপরাধ বিচারের বিপক্ষে নয়

সাংবাদিক সম্মেলনে ইইউ রাষ্ট্রদূত স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচারের বিপক্ষে নয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এছাড়া ইইউ শুধু জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ক্ষেত্রে নয়, বিশ্বের সকল দেশের যে কোন নাগরিকের মৃত্যুদ-ের বিরোধিতা করে আসছে। অপরদিকে ধীরে ধীরে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে চমৎকার অংশীদারিত্বের সর্ম্পক গড়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকায় নবনিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াডন এসব তথ্য জানান। এছাড়া সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে আগামীতে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ খুঁজতে হবে বলেও জানান ইইউ রাষ্ট্রদূত। সম্প্রতি ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে পিয়েরে মায়াডন যোগ দিয়েছেন। ঢাকায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর বুধবার এই প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হলেন তিনি। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াডন বলেন, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচারের বিপক্ষে নয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত নিয়ে আমাদের (ইইউ) কোন আপত্তি নেই। তবে জামায়াতে ইসলামীর নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর ইইউ যে বিবৃতি দিয়েছে এটা শুধু নিজামীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। ইইউ সারাবিশ্বের সকল দেশ থেকেই মৃত্যুদ-ের বিরোধিতা করে আসছে। নিজামীর মৃত্যুদ-ের বিরোধিতা মানেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরোধিতা নয় বলে ব্যাখ্যা দেন তিনি। এক প্রশ্নের উত্তরে ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াডন বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বলা হয়েছে, একটি গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে সর্বসম্মতভাবে একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের অবস্থান এখনও সেটাই রয়েছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একযোগে কাজ করছে। এর ফলে পোশাক শিল্পে অনেক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। তবে আরও বেশি অগ্রগতি প্রয়োজন। গত ২০ অক্টোবর ব্রাসেলসে বাংলাদেশের পোশাক খাতের অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা হয়েছে। সেখানে উপস্থিত সকলেই একবাক্যে বলেছেন, রানা প্লাজার মতো আর কোন দুর্ঘটনা এখানে যেন কখনোই না ঘটে। সেজন্য আমরা সম্মিলিতভাবে পোশাক খাতের অগ্রগতি দেখতে চাই। পিয়েরে মায়াডুন বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে ডিউটি ফ্রি কোটা সুবিধা অব্যাহত রেখেছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে স্বাধীনতার ৫০ বছরের মাথায় এটা হবে একটি বড় সাফল্য। ইইউ রাষ্ট্রদূত জানান, আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই যে, বাংলাদেশের জন্য এই মুহূর্তে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি সুবিধা প্রযোজ্য হবে না। যেসব দেশ মানবাধিকার, শ্রম অধিকার, পরিবেশ উন্নয়ন, সুশাসনসহ আন্তর্জাতিক কনভেনশন বাস্তবায়ন করেছে তাদের জন্যই এই সুবিধা প্রযোজ্য হবে। বাংলাদেশকে এই সুবিধা পেতে হলে এসব ধারা বাস্তবায়নে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার বিষয় উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের দক্ষতা উন্নয়ন, অবকাঠামো নির্মাণ ও বিদ্যুত-জ্বালানি খাত উন্নয়নে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাজ করছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির কারণে বাংলাদেশ একটি চরম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নও জলবায়ু ঝুঁকি নিরসনে কাজ করছে। এক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ একযোগে কাজ করবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এশিয়া অঞ্চলে কার্যক্রমের বিষয় তুলে ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত জানান, এশিয়া অঞ্চলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৌশলগত অংশীদার রয়েছে। এসব অংশীদারের মধ্যে রয়েছে ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান। বাংলাদেশের সঙ্গেও এসব দেশের চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। সে কারণে বাংলাদেশের টেসকই উন্নয়ন অবশ্যই সম্ভব। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্কের বিষয়ে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাজ করে না, পাশাপাশি সুশীল সমাজ, বেসরকারী খাত, এক হাজারের বেশি উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করে থাকে। এর মধ্যে ব্র্যাক ও গ্রামীণ ব্যাংকও রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ও বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে একযোগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাজ করে যাবে বলেও তিনি জানান।
×