ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রিপাবলিকানদের বিজয়

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৬ নভেম্বর ২০১৪

রিপাবলিকানদের বিজয়

প্রতিনিধি পরিষদে অবস্থান আরও সুসংহত করল জিওপি যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানরা উচ্চকক্ষে সিনেটের নিয়ন্ত্রণ অধিকার করেছেন এবং নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে তাঁদের আধিপত্য আরও সুসংহত করেছেন। প্রেসিডেন্ট বারাক ও তাঁর নীতির প্রতি ভোটারদের অসন্তোষকে সাফল্যের সঙ্গে কাজে লাগিয়েছেন রিপাবলিকানরা। সর্বশেষ নির্বাচনী ফলাফলে দেখা যায়, সিনেটের ১০০টি আসনের মধ্যে রিপাবলিকানদের আসন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২ তে। আর প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫টি আসনের মধ্যে ২৪টিতে জয়ী হয়ে রিপাবলিকানরা তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে আরও সুসংহত করেছেন। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এ নির্বাচন ওবামার শেষ দু’বছরের শাসনামলকে নিশ্চিতভাবেই আরও জটিল করে তুলবে। রিপাবলিকান পার্টি ৮ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেল। এর অর্থ হলো দলটি ওবামার আমলের অবশিষ্ট সময়ের জন্য কংগ্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং ওবামার এজেন্ডা ব্যর্থ করে দিতে পারবে। রিপাবলিকান পার্টি গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি (জিওপি) নামেও পরিচিত। খবর গার্ডিয়ান ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস ও অন্যান্য ওয়েবসাইটের। দলটি প্রতিনিধি পরিষদে সহজেই প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ ২১৮টি আসন লাভ করে। এটি এ কক্ষের ২৪৬টি বা এরও বেশিসংখ্যক আসন পেতে পারে বলে সম্ভাবনা রয়েছে। ৬০ বছরেরও বেশি সময় আগে প্রেসিডেন্টের হ্যারি এস টুম্যানের শাসনামলের জিওপি ঐ সংখ্যক আসন পেয়েছিল। রিপাবলিকান মিচ ম্যাক কোনেল সিনেটে দলের নতুন সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দেন। তিনি কেইকিতে ডেমোক্র্যাটিক চ্যালেঞ্জার এ্যালিসন লুন্ডারগ্যান গ্রাইমসকে পরাজিত করেন। ম্যাক কোনেল বলেন, ভোটাররা নতুন নেতৃত্বের জন্য অধৈর্য হয়ে উঠছে এবং তারা আশান্বিত হওয়ার মতো কারণ দেখতে চান। তিনি সিনেটে মেজরিটি লিডার হওয়ার পথে রয়েছেন। তখন তিনি সিনেটের আলোচ্যসূচী স্থির করবেন। সিনেটের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার হাত বদলের ফলে সম্ভবত বাজেট ঘাটতি নিয়ে রিপাবলিকানদের সমালোচনা বৃদ্ধি পাবে, ওবামার অভ্যন্তরীণ সাফল্য হিসেবে চিহ্নিত স্বাস্থ্যসেবা আইনে ব্যাপক পরিবর্তন মেনে নিতে ডেমোক্র্যাটদের ওপর আরও চাপ আসবে এবং ফেডারেল সরকারের নিয়ন্ত্রণ হ্রাসের চেষ্টা করা হবে। সুপ্রীমকোর্টে ও অন্যান্য বিচার বিভাগীয় পদে আজীবনের জন্য নিয়োগদানের ক্ষেত্রে ওবামার সামর্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক বছর ধরে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে শ্লথগতি ও বৈদেশিক বিষয়ে সঙ্কট থাকার পর ভোটারের মনোভাব বিক্ষুব্ধই ছিল। প্রতি দশ ভোটারের মধ্যে চারজনেরও বেশি ওবামা ও কংগ্রেসের কাজকর্ম সমর্থন করেন না বলে ভোট পরবর্তী জরিপে দেখা যায়। কিন্তু যাদের ওপর জরিপ চালানো হয়, তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকানদের চেয়ে বরং ডেমোক্র্যাটদের বা ওবামার অবস্থানকেই সমর্থন করেন। তাঁরা বলেন, দেশে অবৈধভাবে বসবাসরত অভিবাসীদের কাজ করার সুযোগ দেয়া উচিত। তাঁরা ইসলামিক স্টেট যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক তৎপরতা সমর্থন করেন এবং জলবায়ু পরিবর্তন এক গুরুতর সমস্যা বলে একমত হন। সিনেটে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতার অবসান ঘটাতে হলে রিপাবলিকানদের মোট আরও ছয়টি আসনে জয়ী হওয়ার প্রয়োজন ছিল। ২০০৬ সাল থেকে সিনেটে ডেমোক্র্যাটরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা ভোগ করে এসেছেন। প্রতিনিধি পরিষদের স্পীকার জন বোয়েনার (রিপাবলিকান-ওহিত) এক বিবৃতিতে বলেন, আমেরিকান জনগণ আমাদের ওপর যে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, তাতে আমরা সম্মানিতবোধ করছি, কিন্তু এখন আনন্দ প্রকাশের সময় নয়। এখন সরকারের উচিত আমাদের শ্লথগতির অর্থনীতি দিয়ে শুরু করে আমাদের দেশের সমস্যাগুলোর সমাধানের ওপর বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা। ওবামার জনসমর্থন হ্রাস, ইসলামিক স্টেট দলের হুমকি দিয়ে ভোটারের অস্বস্তি, ইবোলার প্রাদুর্ভাব ও ডেমোক্র্যাটদের চাকরি ছাঁটাই বিজয়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।অর্থনৈতিক সম্ভাবনার আভাস এবং গ্যাসোলিনের মূল্য হ্রাস প্রেসিডেন্টের দলকে সহায়তা করতে ব্যর্থ হয়। ভোট পরবর্তী আরেক প্রাথমিক জরিপে দেখা যায়, ওবামা প্রেসিডেন্ট হিসেবে যেভাবে দায়িত্ব পালন করছেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার তা সমর্থন করছেন না। বেশিরভাগ ভোটার তাঁর প্রশাসন নিয়ে অসন্তুষ্ট বা ক্ষুব্ধ বলে জানান। এ নির্বাচনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের চার বছরের মেয়াদকালের প্রায় মাঝামাঝি সময়ে অনুষ্ঠিত হয় বলে একে মধ্যবর্তী নির্বাচন বলা হয়। এ সময়ে প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫টি আসনের সবটিতে এবং সিনেটের ১০০টি আসনের মধ্যে ৩৩ বা ৩৪টিতে, ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ৩৬টি গবর্নর পদে অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় অসংখ্য পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
×