ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চার বছর পর তামিমের সেঞ্চুরি

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৬ নভেম্বর ২০১৪

চার বছর পর তামিমের সেঞ্চুরি

স্পোর্টস রিপোর্টার, খুলনা থেকে ॥ এক, দুই, তিন নয়; চারবছর পর টেস্ট শতক পেলেন তামিম ইকবাল। তৃপ্তি দিলেন। করলেন ১০৯ রান। কিন্তু বল খেললেন ৩৩২টি! ৪৭৩ মিনিট অর্থাৎ প্রায় ৮ ঘণ্টা উইকেটে থাকলেন! তামিমের এ ব্যাটিংয়ে টেস্টের আসল মেজাজও মিলে গেল। কিন্তু তামিম নিজেই থাকলেন নীরব। শতক উদযাপন করলেন না কোন বিশেষভাবে। আবার আসলেন না দিন শেষের সংবাদ সম্মেলনেও। দেশবাসী তাই এমন শতকের পর তামিমের কণ্ঠের সুর থেকে ভেসে আসা কিছুই শুনতে পারলেন না। কাজটি খারাপই হলো। প্রথা আছে, টেস্টে একটি দিনে যে ব্যাটসম্যান অথবা বোলার ভাল কিছু করে তাঁকে দিন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে আসতে হয়। কিন্তু তামিম আসলেন না। অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকরা। অথচ তামিমের কোন খবরই নাই। জানা গেল, তামিম যে সংবাদ মাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন, সেই সিদ্ধান্তেই বহাল রয়েছেন। মিডিয়া ম্যানেজার, টিম ম্যানেজমেন্ট তামিমকে অনুরোধ করেও নাকি সংবাদ সম্মেলনে পাঠাতে পারেননি। তামিম নাকি সংবাদ মাধ্যমের সামনে আসতে চান না আরও কয়েকটি দিন। টিম ম্যানেজমেন্ট তা মেনেও নেয়। তাই পাঠানো হয় কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহেকে। হাতুরাসিংহে এসে তামিম না আসার বিষয়ে জানিয়েছেন, ‘এটি টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত। তারাই নির্ধারণ করেছেন যে কে আসবে।’ তামিম অবশ্য অভিনন্দন ঠিকই পাচ্ছেন। দীর্ঘদিন শতক করতে না পারা তামিম অবশেষে সেই কাক্সিক্ষত শতকের দেখা যে পেয়েছেন। ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্ট শতক তুলে নিয়েছেন। বেশি শতক করার দিক দিয়ে প্রথম স্থানে থাকা মোহাম্মদ আশরাফুলের (৬ শতক) পরের অবস্থানেই আছেন এখন তামিম (৫ শতক)। সঙ্গে বড় ভাই নাফিস ইকবালের ধীরগতির শতক করার রেকর্ডও ভেঙ্গে দিলেন খুলনা টেস্টের অনন্য এক তামিম। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে করলেন প্রথম শতকও। খুলনাসহ গোটা দেশের মানুষকে স্বস্তিও যেন দিয়ে দিলেন। বিশ্বকাপের আগে তুখোড় ফর্মে ফেরার ইঙ্গিতও যে দিলেন। প্রথমদিন ২৫০ বল খেলে ৭৪ রান করেছিলেন তামিম। অপরাজিত ছিলেন। দ্বিতীয় দিন সেখান থেকে আরও ৬২ বল খেলে মোট ৩১২ বল খেলে শতক করেছেন তামিম। শতক করতে ৪৩৮ মিনিট উইকেটে ছিলেন। শেষপর্যন্ত মাসাকাদজার বলে গালিতে এরভিনের তালুবন্দী হলেন তামিম। আউট হওয়ার আগেই সংগ্রামী এ ইনিংসে তামিম বড় ভাই নাফিসের রেকর্ড ভেঙ্গেছেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি যাঁর, সেই তামিমই ভেঙ্গে দিয়েছেন বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে ধীরগতির শতকের রেকর্ড। ২০০৫ সালে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষেই ৩০৯ বলে শতক করেছিলেন নাফিস। যে সেঞ্চুরি বাংলাদেশকে প্রথম টেস্ট সিরিজ জেতাতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। তামিম ৩ বল বেশি খেলে শতক করেছেন। দলকেও ভাল অবস্থানে এনে দিয়েছেন। তামিমের সর্বশেষ শতক এসেছিল ২০১০ সালের জুনে। ওল্ড ট্রাফোর্ডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। এর আগেই লর্ডস মাতিয়ে ১০৩ রান করেছিলেন তামিম। গত চারবছরে শতক না পাওয়া ৩৩ টেস্ট ইনিংস খেলেন। কিন্তু ৮টি অর্ধশতক পেলেও পাননি কোন শতক। তামিম সমালোচনার মধ্যেই পড়ে গিয়েছিলেন। আবার জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে চলমান টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে (৫ ও ০) মাত্র ৫ রান করায় ভালই চাপ বোধ করছিলেন তামিম। অবশেষে কোচ হাতুরাসিংহের পকিল্পনামত খেলে তামিম শতক পেয়ে গেলেন। সমালোচনারও যেন জবাব দিলেন। ধীরে ধীরে শতকের জন্য এগিয়ে গেলেন। টেস্ট মেজাজে যে রকম ব্যাটিং করতে হয়, তা করে দেখালেন। সুন্দরভাবে ইনিংসটি সাজালেন। কাক্সিক্ষত শতকের লক্ষ্যেও পৌঁছে গেলেন। শতক করতে গিয়ে এক এক করে নাফিস ইকবাল, জাভেদ ওমর (২৯৪ বল), আমিনুল ইসলামের (২৮২ বল) ধীরগতির শতকের রেকর্ডগুলোও ভাঙ্গলেন। তবে বেশি সময় উইকেটে থাকার রেকর্ড অবশ্য ভাঙ্গতে পারেননি তামিম। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল (৫৩৫ মিনিট), মোহাম্মদ আশরাফুল (৪৯৯ মিনিট) ও জাভেদ ওমর বেলিমের (৪৯৩ মিনিট) পরেই তামিমের অবস্থান। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে টেস্ট ক্রিকেটে পা রাখার ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দুই ইনিংসেই অর্ধশতক (৫৩ ও ৮৪) করে আগমনী বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। প্রথম শতক পান ২০০৯ সালে গিয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, ১২৮ রান। পরের বছরই ভারতের বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা ১৫১ রানের ইনিংস উপহার দেন। একই বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পরপর দুই টেস্টে (প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৩ ও দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১০৮) টানা দুই শতক করেন। সেই যে শতক মিলেছে, এরপর চার বছর অপেক্ষা করতে হয়। গতবছর অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৫ রানের জন্য শতক থেকে বঞ্চিত হন তামিম। এ একবারই ‘নার্ভাস নাইনটিজে’ গিয়ে আউট হন এ ওপেনার। অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটে। চারবছর পর শতকের তৃপ্তি দিলেন তামিম।
×