ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শুভ’র দুই ক্যাচ মিসে হিরো মাসাকাদজা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৬ নভেম্বর ২০১৪

শুভ’র দুই ক্যাচ মিসে হিরো মাসাকাদজা

স্পোর্টস রিপোর্টার, খুলনা থেকে ॥ শিরোনাম দেখে প্রশ্ন উঠতেই পারে, ব্যাট করলেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, অথচ মাসাকাদজাকে শতক করালেন বাংলাদেশ ক্রিকেটার শামসুর রহমান শুভ; কিভাবে? উত্তর হলো, মাসাকাদজা যে শতক করতে পেরেছেন এতে সবচেয়ে বড় অবদান শুভরই। তিনি যে এক মাসাকাদজারই ২টি ক্যাচ তালুবন্দী করতে পারেননি। মাসাকাদজার শতক তো তাহলে শামসুরই করালেন। দিন শেষে আবার ১৫৪ রানে অপরাজিতও আছেন এ ব্যাটসম্যান। ক্যারিয়ারের এ নিয়ে ৪টি শতক করেছেন এ ব্যাটসম্যান। তিনটিই বাংলাদেশের বিপক্ষে। উইকেট যে বোলারদের কোন সহযোগিতাই করছে না তা বোঝাই যাচ্ছে। পুরোদস্তুর ব্যাটিং উইকেট। ব্যাটসম্যান ভুল না করলে আউট করা কঠিন। এমন উইকেটে মাসাকাদজার মতো ব্যাটসম্যান দুইবার আউট হওয়া থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তাও আবার এক ফিল্ডারের কাছ থেকেই ‘নতুন জীবন’ পেয়েছেন মাসাকাদজা। তিনি শুভ। এমন উইকেটেও বোলাররা ভাল বল করে ব্যাটসম্যানকে আউট করার সুযোগ তৈরি করেছেন। আর শুভ কী করেছেন। ‘টাকি মাছ’ ধরার মতো বল ধরতে গিয়ে তা হাতের মুঠোয় রাখতে পারেননি। যখন ১৫ ও ১৯ রান, এ দুইবারই আউট হওয়া থেকে বাঁচেন মাসাকাদজা। আরেকবার ৭৪ রানের সময় মুশফিক আউট করতে না পারায় মাসাকাদজা শতকই হাঁকিয়ে দেন। তৃতীয় দিনের প্রথম ওভারের শেষ বলেই মাসাকাদজা সাজঘরে ফিরতে পারতেন। তখন মাত্র ১৫ রান ছিল তাঁর ব্যক্তিগত রান। রুবেল হোসেনের করা বলটি একটু বাউন্স হয়। মাসাকাদজা ব্যাটটি তাঁর মুখের সামনে নিয়ে বলটি রুখে দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বলটি চলে যায় প্রথম সিøপে। সেখানে থাকা শুভ ড্রাইভ দিয়ে বলটি ধরার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। অবশ্য একটু কঠিনই ছিল বলটি ধরা। তবে সিøপে যারা ফিল্ডিং করেন তাদের এমন ক্যাচ ধরার অভ্যাস থাকতেই হয়। খুব বেশি দূর এগিয়ে যেতে পারেননি মাসাকাদজা। আর ৪ রান যোগ করেছেন। এমন সময় আবারও ‘নতুন জীবন’ পেয়ে যায় মাসাকাদজা। দলের রান তখন ৫৮। এবার যে ক্যাচটি মিস হলো তা ক্ষমার অযোগ্যই বটে। এ ক্যাচটি ধরতে না পারায় দল থেকে শুভকে ছিটকে ফেললেও কেউ হয়ত ‘টু’ শব্দটাও করবেন না। তাইজুল বল করলেন। বলটি একটু ঘুরল। সঙ্গে হলো খানিক বাউন্স। মাসাকাদজার ব্যাটে ছোঁয়া লেগে প্রথম সিøপে গেল বল। শুভ হাতও বাড়ালেন। কিন্তু ক্যাচ ধরার জন্য যে দুইহাত এক করেছেন, সামান্য নিচ দিয়ে বল চলে যায়। নিশ্চিত ক্যাচটি মিস করে ফেললেন শুভ। অনুশীলনে গ্লাভস পড়ে ফিল্ডিং করেন শুভ। এর বিপত্তিই কী হলো? সেই প্রশ্নও থাকছে। এই যে সুযোগ পেলেন মাসাকাদজা। আর থামলেন না। একটু একটু করে এগিয়ে যেতে থাকলেন। উইকেটে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। সুযোগগুলো পেয়ে তাইজুলের মতো বোলারকে এক ওভারেই বাউন্ডারি ও ছক্কাও হাঁকালেন মাসাকাদজা। দলের রান যখন ১০৪, তখন রুবেলের বলে ১ রান নিয়ে মাসাকাদজাও অর্ধশতক করলেন। ১০৬ বলে গিয়ে তাঁর অর্ধশতক হলো। এভাবে এগিয়ে যেতে যেতে একটা সময় যখন মাসাকাদজা ৭৪ রান করেন, আবারও আউট হওয়া থেকে বাঁচেন। সাকিবের বলে একটু এগিয়ে এসে মারতে যান মাসাকাদজা। বল ব্যাটে হয়নি। কিন্তু মুশফিক রান আউটটি করতে পারেননি। শুভ যে মাসাকাদজার ভাগ্যে ভাল কিছু লিখে দিয়েছেন, সেই ধারাই বজায় থাকে। ২০৫ বলে গিয়ে শতকও করে ফেললেন এ ব্যাটসম্যান। টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ শতক করে ফেললেন মাসাকাদজা। একের পর এক ‘নতুন জীবন’ পেয়ে নিজেকে তুলে ধরলেন ভিন্নভাবে। প্রথম টেস্টে ১৩ ও ৫ রান করা মাসাকাদজাই জিম্বাবুইয়েকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। গত বছর বাংলাদেশের বিপক্ষেই সর্বশেষ শতকটি (১১১*) করেছিলেন এ ব্যাটসম্যান। এর আগেও ২০১১ সালেও বাংলাদেশের বিপক্ষেই শতক (১০৪) পান। আর প্রথম শতকটি আসে অভিষেক টেস্টেই। ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১১৯ রানেই ইনিংস খেলেন মাসাকাদজা। এ নিয়ে ৪ শতকের মধ্যে বাংলাদেশের বিপক্ষেই ৩টি শতক করেন মাসাকাদজা। এবারের শতকটি তো আসলে মাসাকাদজাকে করালেন শুভ!
×