ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আইএসআইর হয়ে কাজ করায় জিয়ার খেতাব কেড়ে নেয়া উচিত

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৭ নভেম্বর ২০১৪

আইএসআইর হয়ে কাজ করায় জিয়ার খেতাব কেড়ে নেয়া উচিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের রাজনীতিতে আর বিএনপি-জামায়াতকে আস্ফালন করতে দেয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। শাহবাগে সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদ বিরোধী মঞ্চ ও সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন আয়োজিত যৌথ সমাবেশে বক্তারা জামায়াতসহ উগ্রপন্থী সকল দল নিষিদ্ধের দাবি জানান। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র হয়ে কাজ করায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বীরউত্তম খেতাব কেড়ে নেয়া উচিত বলেও মনে করেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার জামায়াতের ডাকা হরতালবিরোধী পৃথক পৃথক কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ, পল্টন, প্রেসক্লাব, শাহবাগ, মতিঝিল, ফার্মগেটসহ নগরীর বিভিন্নস্থানে হরতালবিরোধী মিছিল- সমাবেশসহ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ, সহযোগী সংগঠন, ছাত্র সংগঠন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত হরতালবিরোধী কর্মসূচীতে রাজপথ ছিল নেতাকর্মীদের দখলে। বক্তারা দ্রুত আইন করে হরতাল নিষিদ্ধের দাবি জানান। জাতীয় প্রেসক্লাবের জাতীয় রিকশা ও ভ্যান শ্রমিক লীগের হরতালবিরোধী মানববন্ধনে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিকে ধ্বংস করার জন্য জামায়াত হরতাল ডেকেছে। তারা জ্বালাও, পোড়াওয়ের মাধ্যমে ধ্বংসের রাজনীতি করছে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে আর তাদের আস্ফালন করতে দেয়া হবে না। খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীর বিচার মেনে নিয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া বিভিন্ন সময় বলেছেন, তিনি যুদ্ধাপরাধীর বিচারের পক্ষে। কিন্তু সে বিচার হতে হবে স্বচ্ছ। যেহেতু তিনি (খালেদা) যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে কোন প্রতিবাদ করেন না। তাই বুঝতে হবে, বিচার স্বচ্ছ হচ্ছে। আর তিনিও তা মেনে নিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বিএনপির কোন বক্তব্য নেই উল্লেখ করে শাজাহান খান বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া লুকোচুরির জায়গা পান না। জনগণের কাছে তিনি ধরা পড়ে গেছেন। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রিকশা ও ভ্যান শ্রমিক লীগের সভাপতি আজহার আলী, আলী আহম্মেদ প্রমুখ। আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্ক বর্তমানে নিষিদ্ধ প্রেমে রূপ নিয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে তিনি এ কথা বলেন। ‘বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের দেশবিরোধী ধ্বংসাত্মক রাজনীতি ও হরতালের প্রতিবাদ শীর্ষক’ মানববন্ধনের আয়োজন করে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ। হাছান মাহমুদ বলেন, জামায়াতের জন্য মনে গভীর প্রেম থাকলেও মুখে তা বলতে পারছে না বিএনপি। যুদ্ধাপরাধের দায়ে যখন জামায়াত নেতাদের ফাঁসি হচ্ছে তখন বিএনপি চুপ থাকছে। বিএনপি ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করছে উল্লেখ করে হাছান বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে ব্যর্থ হয়ে তারা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তারা শেখ হাসিনার জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিএনপির সহযোগিতায় জামায়াত হরতাল ডেকেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াত হরতাল ডেকে মাঠে নেই। আয়োজক সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মেজবাহউদ্দিন শফির সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মুন্সি এবাদুল ইসলামসহ অনেকে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে বেয়াদব বললেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী নেতা ও খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বীরউত্তম খেতাব কেড়ে নেয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের হরতালবিরোধী সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি। সম্প্রতি বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায় বলেছিলেন, শেখ হাসিনাকে দেশে আসতে দেয়া জিয়ার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল।’ গয়েশ্বরের এমন বক্তব্যে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘গয়েশ্বর কত বড় বেয়াদব। সে বলেছে, শেখ হাসিনাকে দেশে আসতে দেয়া জিয়ার ভুল ছিল। কিন্তু শেখ হাসিনাকে জিয়া আনেননি এনেছে বাংলার জনগণ। জিয়াউর রহমানের কোন ক্ষমতা ছিল না যে শেখ হাসিনাকে দেশে আসা ঠেকাতে পারত।’ খাদ্যমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনী। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছে। এ জন্য তার বীরউত্তম খেতাব কেড়ে নেয়া উচিত। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি এ্যাডভোকেট তারানা হালিম। সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, স্বাধীন বাংলা বেতারের কণ্ঠশিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষাল, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা হেদায়তুল ইসলাম স্বপন প্রমুখ। এদিকে জামায়াতের ডাকা হরতালের শেষদিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানীর রাজপথ দখলে রাখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। জাতীয় প্রেসক্লাব, মৎস্য ভবন, পুরানা পল্টন ও গুলিস্তান এলাকায় হরতালবিরোধী মিছিল-সমাবেশ করেছে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ। তখন এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। মিছিল শেষে সমাবেশে বক্তারা বলেন, জনগণ এই হরতাল প্রত্যাখ্যান করেছে। যানবাহন চলছে। দোকানপাট খুলেছে। বক্তারা বলেন, যতই ষড়যন্ত্র করা হোক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতেই হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা হবে। সমাবেশে বক্তব্য দেন, যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, যুবলীগ লীগ ঢাকা মহানগরের (দক্ষিণ) সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান দুর্জয় প্রমুখ। শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদ বিরোধী মঞ্চ ও সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন আয়োজিত যৌথ সমাবেশে বক্তারা পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে রাজাকারমুক্ত করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া ও এর অগ্রগতি নিয়ে তারা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, বিচার আরও দ্রুত করতে হবে। রায় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কার্যকর করার উদ্যোগ নিতে হবে। জামায়াত-শিবিরসহ উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠী যেন দেশে আর কোন অশুভ তৎপরতা চালাতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখারও দাবি জানান তারা। জঙ্গী গোষ্ঠীকে প্রতিহত করতে দেশপ্রেমিক সকল মানুষ ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাদের প্রতিহত করার বিকল্প নেই। পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত করা, প্রতিটি রায় কার্যকর করে গণতন্ত্র নিশ্চিত করার পাশাপাশি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, জামায়াতসহ সকল উগ্রবাদী দল নিষিদ্ধ করা। এতে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক অজয় রায়, প্রবীণ রাজনীতিক পংকজ ভট্টাচার্য, আবদুল মতিন ভূঁইয়া, ড. অশিত বরণ রায়, আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ। এরপর জাসদ ছাত্রলীগ প্রজন্ম চত্বরে হরতালবিরোধী সমাবেশ করে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
×