ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এম আমীর-উল ইসলাম

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও আমাদের সংবিধান

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৭ নভেম্বর ২০১৪

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও আমাদের সংবিধান

(৬ নবেম্বরের পর) এঁরা কোন মেসেজের জন্য অপেক্ষা করেননি। তাঁদের সংকেতের জন্য ৭ মার্চের ভাষণই ছিল যথেষ্ট। সারাদেশের সাধারণ মানুষ কোন সবংংধমব বা ঘোষণা বা নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলেন না। ২৫ মার্চের রাত্রে ঙঢ়বৎধঃরড়হ ঝবধৎপয খরমযঃ-এর প্রথম কামানের আওয়াজটাকেই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের বক্তৃতার নির্দেশ অনুযায়ী স্বাধীনতার ঘোষণার সঠিক মুহূর্ত বলে দেশবাসী মনে করে। “আর যদি একটা গুলি চলে, তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সব কিছু বন্ধ করে দিতে হবে-আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে।” কিন্তু প্রথম দালিলিক প্রমাণ আমাদের হাতে এলো যখন সীমান্ত পার হবার পর আমাদেরকে গোলক মজুমদার অভ্যর্থনা জানাতে সীমান্তে এলেন তখন। তিনি জানালেন বিএসএফের কাছে বঙ্গবন্ধুর ডরৎবষবংং সবংংধমব তাদের ডরৎবষবংং-এ ধরা পড়ে। পরে তার একটা কপি আমাদেরকে দেন। তখনই আমার মনে পড়ে ২৫ মার্চ বেলা গড়িয়ে দুইটা বা আড়াইটার সময় ডরৎবষবংং ঊহমরহববৎ নূরুল হক সাহেবের সঙ্গে আমার শেষ সাক্ষাত। আমি অনেক দেরি করে বাসায় এসেছি দুপুরের খাবার খেতে। আমি যখন গেট দিয়ে ঢুকছি তখন দেখি ইঞ্জিনিয়ার নূরুল হক আমার আগে তার গাড়ি নিয়ে আমার বাসায় ঢুকছেন। পূর্বের একটি আলোচনার সূত্র ধরে তিনি বললেন বঙ্গবন্ধু আমাকে একটি ট্রান্সমিটার আনতে বলেছিলেন। সেটি খুলনা থেকে আমি আনিয়ে রেখেছি। আমি এখন ওটা দিয়ে কি করব সে বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে নির্দেশনা চাই। আমি তাঁকে বললাম বঙ্গবন্ধু যা বলার তা ৭ মার্চেই নির্দেশনা দিয়েছেন। আমার কাছে সংগঠন আছে আর কলম আছে। আমি এটা দিয়ে কাজ করব। আপনার কাছে ট্রান্সমিটার আছেÑ সেটা দিয়ে আপনি শত্রুর মোকাবিলা করবেন। আমি আপনাকে কি লিখে দিবো কি বলতে হবে? উনি বললেন তার প্রয়োজন হবে না। ‘আমি জানি কি বলতে হবে। নঁঃ ঃযধঃ সধু পড়ংঃ সু ষরভব; ুবঃ রঃ সধু নব ড়িৎঃয ফড়রহম ধহফ ও রিষষ ফড় রঃ’ আমি তাজউদ্দীন সাহেবকে বললাম ইঞ্জিনিয়ার নূরুল হক তাঁর প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। পরে জানতে পেরেছি তিনি তাঁর এ প্রতিশ্রুতির মূল্য দিয়েছেন তাঁর জীবন দিয়ে। কয়েকদিন তাঁকে সেনাবাহিনী বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে খুঁজে বের করতে বলেন যে, ট্রান্সমিটার কোথায় রেখেছেন। তাঁরা তাঁর বাড়িতেও তল্লাশি করান। এরপর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি আর ফিরে আসেননি। অনেকদিন পর হাজী গোলাম মোর্শেদের কাছ থেকে জানতে পারি যে, আমরা বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ত্যাগ করার পর বঙ্গবন্ধু ও গোলাম মোর্শেদকে বন্দী করার পূর্বে একটা টেলিফোন আসে। কণ্ঠটি খুব গভীর ও দৃঢ়। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে চান। তিনি বলেন, আমি বলদা গার্ডেন থেকে বলছি। আমার কাজ শেষ করেছি। আমি এখন কি করব। মুর্শেদি ভাই বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলে বঙ্গবন্ধু বলেন ওটা ভেঙ্গে চুরে দিয়ে চলে যেতে বলো। দিল্লীতে যখন এম আর সিদ্দিকী আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এলেন তখন তিনিও ঐ ডরৎবষবংং সবংংধমব-এর প্রিন্টটি দেখে ঈড়হভরৎস করেন যে এটাই সেই মেসেজ যেটা তাঁরা চট্টগ্রামেও পেয়েছিলেন। ৯ এপ্রিলে গভীর রাতে কলকাতায় বিএসএফের অতিথিশালায় বসে আমি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র লিখতে শুরু করি। (চলবে)
×