ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জিএসপি নিয়ে ফের দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্র

প্রকাশিত: ০৬:২০, ৮ নভেম্বর ২০১৪

জিএসপি নিয়ে ফের দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্র

এম শাহজাহান ॥ জিএসপি নিয়ে আবারও শুরু হয়েছে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক সংগঠন এএফএল-সিআইও বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধার বাইরে রাখতে ইউএসটিআরে ফের আবেদন করেছে। ওই আবেদনপত্র পাওয়ার পর (ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ) ইউএসটিআর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাসকে পত্র দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, জিএসপি পুনর্বহালে আগামী ১৫ নবেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ এ্যাকশন প্ল্যানের অগ্রগতি প্রতিবেদন পাঠাতে হবে। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাস। এ কারণে জিএসপি ফিরে পেতে ফের ইউএসটিআরে ‘বাংলাদেশ এ্যাকশন প্ল্যান’ এর অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিচ্ছে সরকার। ইউএসটিআরের নির্দেশে আগামী ১৫ নবেম্বরের মধ্যে অনলাইনে এই প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে। সূত্রমতে, জিএসপি ফিরিয়ে না দিতে যুক্তরাষ্ট্রে জোর লবিং করছে সরকারবিরোধী শক্তি। এ ইস্যুতে ক্ষমতাসীন দলের প্রতি মার্কিন চাপ অব্যাহত রাখতে কূটনৈতিক অপকৌশলের আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। আগামী ১৫ নবেম্বরের আগেই যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া বাংলাদেশ এ্যাকশন প্ল্যানের ১৬টি শর্ত পূরণ করতে যাচ্ছে সরকার। কিন্তু এর বাইরেও এখন অলিখিতভাবে নতুন শর্ত জুড়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসটিআর। তাতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে গ্রামীণব্যাংক ফিরিয়ে দেয়া, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যু এবং দেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের তাগিদ দেয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিলের পেছনে শুরু থেকেই কাজ করেছে রাজনীতি। যার মূলে রয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল, দীর্ঘদিন টিকফা চুক্তি না করা, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশে বাধা, গার্মেন্ট শ্রমিক আমিনুল হত্যাকা-ের বিচার ইস্যু, জিএসপি বাতিলে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অনুরোধ সংবলিত ওয়াশিংটন টাইমসে প্রকাশিত প্রবন্ধ এবং সর্বোপরি ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের জিএসপি স্থগিতের পেছনে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে ড. ইউনূস ইস্যু। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী ১৫ নবেম্বরের মধ্যে এ্যাকশন প্ল্যানের ১৬টি শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হবে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ১৪টি শর্তপূরণ করা হয়েছে। বাকি দুটি শর্তও পূরণ হওয়ার পথে। কিন্তু জিএসপি নিয়ে নতুন সমস্যা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে ইউএসটিআরের সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে তারা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, গ্রামীণ ব্যাংক, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আন্তর্জাতিকমানের হচ্ছে কিনা এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামনে নিয়ে আসছে। এ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নের চেয়ে এ সব বিষয়ে ইউএসটিআরের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। ফলে সব শর্ত পূরণ হওয়ার পরও জিএসপি ফিরে পাওয়া যাবে কিনা, সেটাও এখন দেখার বিষয়। জানা গেছে, অগ্রগতি প্রতিবেদন তৈরিতে তৈরি পোশাক, চিংড়ি শিল্প এবং রফতানি প্রক্রিয়া অঞ্চলের (ইপিজেড) শ্রম অধিকার বাস্তবায়নের অগ্রগতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এ সব খাতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার অগ্রগ্রতি জানাতে ফায়ার সার্ভিসকে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এ সব খাতের মতামতের ভিত্তিতে আগামী ১৫ নবেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের ইএসটিআরের কাছে জবাব পাঠাবে। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া বাংলাদেশ এ্যাকশন প্ল্যানের ১৬টি শর্ত পূরণের অগ্রগতি পুনর্মূল্যায়ন করা হচ্ছে। শর্তগুলোর অধিকাংশ পূরণ হওয়ায় সরকার আশা করছে, জিএসপি ফিরে পাবে বাংলাদেশ। ডিসেম্বর মাসে জিএসপি রিভিউ শুনানিতে এ অবস্থানপত্রের ওপর ইউএসটিআর চূড়ান্ত মতামত প্রদান করবে। শর্তপূরণে বাংলাদেশের যে অগ্রগতি তাতে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানিতে জিএসপি পুনর্বহাল হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্রমতে, জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল করতে ওবামা প্রশাসন ১৬টি শর্ত বেঁধে দেয়। ওই সময় বলা হয়Ñবাংলাদেশ এ্যাকশন প্ল্যানের অগ্রগতি সন্তোষজনক হলে জিএসপি ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে যুক্তরাষ্ট্র। এ সব শর্তের অগ্রগতি নিয়ে ইতোমধ্যে বাণিজ্য, শ্রম ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একাধিক বৈঠক করা হয়েছে। এর আগে দুই দফা ইউএসটিআরে প্রতিবেদন দাখিল করেছে বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানান, জিএসপি ইস্যুতে বাংলাদেশ এ্যাকশন প্ল্যান দিয়ে তাতে ১৬টি শর্ত জুড়ে দেয় ইউএসটিআর। ইতোমধ্যে শর্তগুলোর অধিকাংশ পূরণ করা হয়েছে। ইউএসটিআর এবং মার্কিন কংগ্রেসম্যানরা বাংলাদেশের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে, যা পূরণ হয়নি তা দ্রুত পূরণ করার চেষ্টা চলছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা চালু করলে বাংলাদেশও তা ফিরে পাবে। বাণিজ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন জেনেভাভিত্তিক ‘ইন্ডাস্ট্রিয়ল’ নামক একটি সংগঠন বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে শ্রমিক নির্যাতন হচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসটিআরে গোপনে চিঠি দিয়েছে। এ বিষয়ে তারা আমাদের কাগজপত্র দেখিয়েছে। তবে এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রে কোন দেশের জিএসপি সুবিধা নেই। গত বছরের জুলাইয়ে তা শেষ হয়েছে। কংগ্রেস এ সুবিধা নবায়ন করলে বাংলাদেশও জিএসপি সুবিধা পাবে। আর না পেলে রাজনৈতিক কারণ ছাড়া আর কোন কারণ থাকতে পারে না। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের পোশাকশিল্প নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। এ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন এমন কিছু শ্রমিক নেতা বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে শ্রমিক নির্যাতন হচ্ছে বলে বহির্বিশ্বে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। দেশের পোশাকশিল্পে কোথাও কোথাও দুই-একটি শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটতে পারে কিন্তু সেটা সার্বিক চিত্র নয়। তৈরি পোশাক ক্রেতাদের দুই সংগঠন যে ১৯টি কারখানার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল সেসব অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। সূত্রমতে, একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পণ্য রফতানি করে যুক্তরাষ্ট্রে। রফতানি উন্নয়ন বু্যুরোর হিসাবে, ২০১১-১২ অর্থবছরে বাংলাদেশ মোট রফতানি করেছে ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের বেশি পণ্য। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হয়েছে মোট রফতানির ২১ শতাংশ (৫০০ কোটি ডলার)। তবে ২০০৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা পাওয়ার পর এর আগেও দুইবার এ সুবিধা বাতিলের আবেদন ওঠে। অবশ্য শুনানি শেষে রায়ে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বহাল থাকে।
×