ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খুলনায়ও জিম্বাবুইয়ে পরাজিত ॥ সিরিজ টাইগারদের

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ৮ নভেম্বর ২০১৪

খুলনায়ও জিম্বাবুইয়ে পরাজিত ॥ সিরিজ টাইগারদের

মিথুন আশরাফ, খুলনা থেকে ॥ সাকিব অনন্য, সাকিব বিস্ময়, সাকিব অতুলনীয়; আরও অনেক উপমাই সাকিবের নামের পাশে যুক্ত হতে পারে। তবে দেশবাসী যেন একটি বিষয়ই সবার চেয়ে উপরে রাখবেন, সাকিব আমাদের গর্ব। সেই গর্বের ধন বাংলাদেশকে আবারও টেস্ট সিরিজ জেতালেন। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৩৭ রান ও ৫ উইকেট নিয়েছেন। আর দ্বিতীয় ইনিংসে আরও ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ১৬২ রানের জয়ই এনে দিয়েছেন। ৩১৪ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ১৫১ রানেই অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুইয়ে। সাকিব যে এক টেস্টে শতক ও ১০ উইকেট নিয়েছেন তা এ অলরাউন্ডারকে দুই গ্রেট ক্রিকেটার ইংল্যান্ডের স্যার ইয়ান বোথাম ও পাকিস্তানের ইমরান খানের পাশের আসনেই বসিয়েছে। এ দুই গ্রেটও যে একই রকম নৈপুণ্য সেই ’৮০ দশকে দেখিয়ে দিয়েছেন। ১৯৮০ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১১৪ ও দুই ইনিংসে ৬ ও ৭ উইকেট নিয়েছিলেন বোথাম। আর ইমরান খান ১৯৮৩ সালে ভারতের বিপক্ষেই টেস্টে প্রথম ইনিংসে ১১৭ ও দুই ইনিংসে ৬ ও ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। প্রায় তিন যুগ পর সাকিব এমন কৃতিত্ব দেখাতে পেরেছেন। এর মাঝে অনেক অলরাউন্ডারকেই দেখা গেছে, কিন্তু সাকিবই এমন কিছু করে দেখাতে পারলেন। এ জয়টি বাংলাদেশকে তৃতীয়বারের মতো টেস্ট সিরিজ জেতায়। তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে প্রথম সিরিজ জয়ও হয়ে যায় বাংলাদেশের। এক ম্যাচ হাতে থাকতেই জিম্বাবুইয়েকে ২-০ ব্যবধানে সিরিজেও হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। প্রায় ১৪ বছর আগে ২০০০ সালে টেস্ট ক্রিকেটে পাঁ রাখার পর ৮৭ টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। জয় আসে ৬টি। এর মধ্যে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজটিসহ টেস্ট সিরিজ খেলে ৪৪টি। জয় আসে ৩টি টেস্ট সিরিজে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজ জেতার পর বাংলাদেশ তিনটি টেস্ট সিরিজ জিতে নেয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটি, ২০০৯ সালে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দুটি। এ তিন সিরিজের দুটি সিরিজই বাংলাদেশকে জেতান সাকিব। ২০০৫ সালে যখন বাংলাদেশ প্রথমবার (জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে) টেস্ট সিরিজ জেতে তখন সাকিব ছিলেন না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই পাঁ রাখেননি সাকিব। তাই সিরিজ জেতানোর প্রশ্নই আসে না। কিন্তু যেই সাকিব ২০০৭ সালে টেস্ট খেলা শুরু করেন এরপর থেকে বাংলাদেশ ২টি টেস্ট সিরিজ জেতে (একটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, আরেকটি জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে)। দুটিতেই সাকিবের নৈপুণ্যে জেতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০০৯ সালে যে বাংলাদেশ সিরিজ জিতে, সাকিব প্রথম টেস্টে বিশেষ কিছু করতে না পারলেও দ্বিতীয় টেস্টে যে এক ইনিংসে ৫ উইকেট ও ২১৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে অপরাজিত ৯৬ রান করেন, সেখানেই দ্বিতীয় টেস্ট জেতা হয়ে যায়। সিরিজও জিতে নেয় বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে গিয়ে টেস্ট সিরিজ জিতে নেয় বাংলাদেশ। এবারও জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে যখন সিরিজ জেতা নিশ্চিত করে নিয়েছে বাংলাদেশ, তখন অবশ্য দুই টেস্টেই সাকিব অনন্য হয়ে ওঠেন। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে নেন ৬ উইকেট। বাংলাদেশ জেতে ৩ উইকেটে। সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। এ বছর জুলাই থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ থাকায় ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন সাকিব। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে নেমে যে ৬ উইকেট নিয়েছেন, তা কম কিসের। আর দ্বিতীয় টেস্টেত শুধুই সাকিব আর সাকিব। সাকিবের ১৩৭ রানের ইনিংসের সঙ্গে তামিমের ১০৯ রানে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৪৩৩ রান করে। জিম্বাবুইয়ের প্রথম ইনিংসে ধস নামান সাকিব। ৫ উইকেট তুলে নেন। মাসাকাদজার ১৫৮ ও চাকাবভাও ১০১ রানের পরও জিম্বাবুইয়ে ৩৬৮ রানে গুটিয়ে যায়। এরপর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ৭১ ও মুমিনুল হকের ৫৪ ও শুভগত হোমের ৫০ রানে ৯ উইকেটে ২৪৮ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়ের সামনে জিততে ৩১৪ রানের টার্গেট দাঁড় হয়। এ রান করতে গিয়ে সাকিবের ঘূর্ণির জাদুর মায়ার জালে পড়ে যায় আবারও জিম্বাবুইয়ে। হেরেই যায়। ২০০৭ সালের মে মাসে টেস্টে অভিষেকের পর সাকিব ৩৭ টেস্ট খেলেন। বাংলাদেশ জিতে ৫টি টেস্ট। সাকিব প্রতিটি টেস্টেই জয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখেন। হয় দুই ইনিংস মিলিয়ে কমপক্ষে ৫ উইকেট অথবা তা না হলে অর্ধশতক ছিলই সাকিবের। খুলনা টেস্টের আগে বাংলাদেশের জয়ের চার টেস্টে ২৪ উইকেট ও ৪৫.৫৭ গড়ে ৩১৯ রান করেছিলেন সাকিব। সাকিব টেস্ট ক্রিকেট শুরুর আগে বাংলাদেশ শুধু ১টি টেস্ট জিতেছিল (২০০৫ সালে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে)। এরপর যে কয়টি টেস্ট জিতে বাংলাদেশ, প্রতিটিতেই সাকিবের নৈপুণ্য আছেই। সাকিব অনন্য। কারণ, তার উপর দিয়ে যে রকম পরিস্থিতিই যাক, উইকেট যে রকমই থাকুক; নৈপুণ্য তিনি দেখাবেনই। সাকিব বিস্ময়। কারণ, সব বিস্ময়কর রেকর্ডের মালিকদের সঙ্গে দিনের পর দিন যুক্ত হচ্ছেন। সাকিব অতুলনীয়। কারণ, এ মুহূর্তে বাংলাদেশ দলে তার সঙ্গে তুলনা করার মতো কোন ক্রিকেটারই নেই। বিশ্ব ক্রিকেটে হয়ত এ সিরিজ শেষেই আবারও অলরাউন্ডারের র‌্যাঙ্কিংয়ে ১ নম্বরে চলে আসবেন। তাহলে কী বিশ্ব ক্রিকেটেও সাকিবের তুলনা থাকল। আর সাকিব আমাদের গর্ব। এর কারণ কী আর বলে দেয়া লাগে। আমাদের গর্ব সাকিব আরেকটি সিরিজ জিতিয়ে, দলকে র‌্যাঙ্কিংয়ের ৯ নম্বরে নিয়ে এসে, দেশকে বিশ্ব ক্রিকেটে আবারও গর্ব করার মতো উপলক্ষ্যই এনে দিলেন। তাইত বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের কণ্ঠে সুর, ‘ও (সাকিব) একাই বাংলাদেশে এক নম্বরে। আর বিশ্বেও একাই। বিশ্বে ওর মতো খেলোয়াড় খুব কম থাকে। সেদিক থেকে বলব ওর কন্ট্রিবিউশনটা সব সময় থাকে দলের জন্য। ওর মতো খেলোয়াড় থাকলে যে কোন অধিনায়ক নির্ভার থাকে।’ আর জিম্বাবুইয়ে অধিনায়কত রীতিমত যে কোন দলের জন্য যে সাকিব হুঙ্কার তা বুঝিয়ে দিলেন, ‘একজনই যদি শতক ও ১০ উইকেট নিয়ে ফেলে, সে তো হুঙ্কার হবেই।’ আর এই সাকিবই আবারও বাংলাদেশকে সিরিজ জেতালেন।
×