ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নৌবন্দরের পণ্য পরিবহন বন্ধ

৭ নৌযান শ্রমিক নিখোঁজ ॥ দেশজুড়ে পণ্যবাহী জাহাজে ধর্মঘট শুরু

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ৯ নভেম্বর ২০১৪

৭ নৌযান শ্রমিক নিখোঁজ ॥ দেশজুড়ে পণ্যবাহী জাহাজে ধর্মঘট শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশজুড়ে সকল পণ্যবাহী জাহাজ শনিবার দুপুর থেকে ধর্মঘট শুরু করেছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টায় লক্ষ্মীপুরের কমলনগর বাতিরখাল এলাকায় ডাকাতির সময় সাত নৌযান শ্রমিক নিখোঁজের ঘটনা জানার পর শনিবার সকাল থেকে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দেন। দুপুরে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন দেশের সকল পণ্যবাহী জাহাজকে চলাচল না করার আহ্বান জানান। এতে চট্টগ্রাম এবং মংলা সমুদ্রবন্দরসহ সকল নৌবন্দরের পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। নৌপথে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী ও ডাকাতি বন্ধে সরকার কঠোর না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে বলে নৌযান শ্রমিক নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন। নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম শনিবার বিকেলে জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা নিরাপত্তা চাই। অনেক দিন ধরেই নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে এ সব বিষয়ে বলে আসছি কিন্তু তাতে কোন কাজ হচ্ছে না। সরকার বিষয়টি দেখবে বলে আমাদের ঝুলিয়ে রাখছে। আমাদের শ্রমিকরা দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতির শিকার হচ্ছেন। ডাকাতির ঘটনায় সাতজন শ্রমিক নিখোঁজ হয়েছেনÑএমনটা শোনার পর থেকে শ্রমিকরা নিজেরাই কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। দুপুরের দিকে আমরা সংগঠনের তরফ থেকে এ বিষয়ে একটি ঘোষণা দিয়েছি। আমরা বলেছি, নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবেন না। এক্ষেত্রে শ্রমিক এবং জাহাজ উভয়ের নিরাপত্তা চাই আমরা। তবে যাত্রীবাহী নৌযান এ ধর্মঘটের বাইরে রয়েছে। জানা গেছে, কর্ণফুলী-৫ নামের একটি জাহাজ শুক্রবার ভোরে কমলনগরে বাতিরখাল এলাকায় পৌঁছলে একদল সশস্ত্র ডাকাত ওই জাহাজে হামলা চালায়। এ সময় ডাকাতরা কার্গোর স্টাফদের মারধর করে বিভিন্ন মালামাল লুটে নেয়। ডাকাতের হামলার ঘটনার পর থেকে ওই জাহাজের সাত নাবিক নিখোঁজ হয়। এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ সাত নাবিকের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। জাহাজটিতে ১০ জন নাবিক ছিলেন। স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, শনিবার ভোরে লক্ষ্মীপুরের বাতিরখাল এলাকায় এমভি কর্ণফুলী নামে একটি লাইটারেজ জাহাজে ডাকাতিকে কেন্দ্র করে শ্রমিকরা ধর্মঘটে নামে। ডাকাতি ঘটনার পর লাইটার জাহাজটির ৭ জন ক্রু নিখোঁজ রয়েছেন বলে শ্রমিকরা দাবি করেছেন। আকস্মিকভাবে নৌযান ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের সদরঘাট লাইটার জেটি এলাকা থেকে পণ্য নিয়ে কোন জাহাজ অভ্যন্তরীণ নৌরুটে যাতায়াত করেনি। বহির্নোঙ্গর থেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য খালাসের পর নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, নোয়াপাড়া ও উত্তরবঙ্গের রুটগুলোতে চলাচল করতÑএমন লাইটার জাহাজও যাত্রা করছে না। এতে সিমেন্ট, খাদ্যশস্য, ক্লিঙ্কার এবং জ্বালানি তেল পরিবহন বন্ধ রয়েছে। কোন শিল্প কাঁচামালও পরিবহন করছে না। ফলে কর্ণফুলী নদীর পোতাশ্রয়ে আটকা পড়েছে দুই শতাধিক লাইটার জাহাজ। অভ্যন্তরীণ নৌরুট থেকেও কোন জাহাজ মেঘনা বা সন্দ্বীপ চ্যানেল পাড়ি দিচ্ছে না। সদরঘাট লাইটার জাহাজ এলাকা থেকে কোন প্রকার পণ্য উঠানামা করা হয়নি জাহাজে। শনিবার সকাল থেকেই আকস্মিক এ কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। এর আগে নৌযান শ্রমিকরা নদী পথে চাঁদাবাজি এবং ডাকাতি বন্ধের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের নিরাপত্তা দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় জলদস্যুদের তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। এ শীতের শান্ত মৌসুমে নৌযান শ্রমিকদের নিরাপত্তা আরও বিঘিœত হতে পারেÑএমন আশঙ্কাও করা হচ্ছে। তাই শনিবার লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার একটি খালে লাইটার জাহাজ ডাকাতির ঘটনা ও ৭ শ্রমিক নিখোঁজের পর থেকে তারা অনির্দিষ্টকাল ধর্মঘটের ডাক দেয়। কার্গোতে ডাকাতি, মাস্টারসহ নিখোঁজ ৭ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা লক্ষ্মীপুর থেকে জানান, লক্ষ্মীপুরের চর আব্দুল্লার কাছে মেঘনায় কার্গোতে ডাকাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় জাহাজের মাস্টার, চালক ও সুকানিসহ নিখোঁজ রয়েছেন সাতজন। একজন অতিথিসহ জাহাজের ১০ শ্রমিক-কর্মচারীর মধ্যে সাতজন নিখোঁজ বলে জাহাজের উদ্ধার হওয়া কর্মচারীরা জানান। উপকূলবাসীর ধারণা, সবাইকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দিয়েছে নৌডাকাতরা। শুক্রবার মধ্যরাতে চরআব্দুল্লার চরগজারিয়ার কাছে গভীর মেঘনায় এ ঘটনা ঘটে। এমবি কর্ণফুলী পাশ নামে সার বোঝাই কার্গো জাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে বাঘাবাড়ী যাচ্ছিল। চরগজারিয়ার কাছ থেকে প্রায় ২৫/৩০ কি.মি. দূরে জাহাজটির চালক, মাস্টার ও সুকানি ছাড়া জাহাজটি মেঘনার জোয়ারের পানিতে ভাসতে ভাসতে কমলনগর উপজেলার বাত্তিরখাল এলাকায় এসে আটকে পড়ে। বর্তমানে জাহাজটি কমলনগর থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। এর আগে জাহাজটি বাত্তিরখালের কাছে মেঘনায় গভীর রাতে পশ্চিমে অপর একটি মালবাহী চলন্ত জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে সেই জাহাজের নাবিকদের সন্দেহ হয়। এরপর চলন্ত জাহাজের কর্মচারী শ্রমিকরা জাহাজের ভেতরে প্রবেশ করলে আটকানো কর্মচারীদের বাঁচাও বাঁচাও শব্দ শুনে তাদের একটি কেবিন থেকে উদ্ধার করে তারা। এ সময় জাহাজের পাটাতনে জমাট বাঁধা রক্ত দেখা যায়। কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, এটি কোন নৌডাকাতির ঘটনা নয়। জাহাজের শ্রমিকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে এ ঘটনা ঘটতে পারে। জাহাজের উদ্ধার হওয়া তিনজন কর্মচারী হলেন লস্কর মাহবুব (৫০), জাহিদ (১৮) ও গ্রিজার পারভেজ (২২)। ওসি জানান, ওই তিনজনকে কেবিনের ভেতর বাইরে থেকে দরজার ছিটকানি মেরে আটকে রাখা হয়। তাদের মধ্যে পারভেজ ও মাহবুবের মোবাইল নিয়ে গেছে তাদেরই জাহাজের কর্মচারী শামীম ও টিটু। এছাড়া আর কোন মালামাল খোয়া যায়নি বলে তিনি উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের বরাত দিয়ে জানান। তিনি আরও বলেন, ওই সময় সম্ভবত অপর কোন জাহাজে উঠিয়ে শ্রমিকদের নিয়ে যায় তারা।
×