ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের কাছ থেকে এখনও সুনির্দিষ্ট তথ্য মেলেনি

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ৯ নভেম্বর ২০১৪

ভারতের কাছ থেকে এখনও সুনির্দিষ্ট তথ্য মেলেনি

তৌহিদুর রহমান ॥ ভারতের বর্ধমানের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় দিল্লীর দেয়া প্রাথমিক তথ্যে সন্তুষ্ট হতে পারছে না ঢাকা। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে সংঘটিত ওই ঘটনার প্রাথমিক তথ্য ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সরকারকে দিয়েছে ভারত। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ থেকে ভারতের কাছে যেসব তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছিল, সেসব বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য এখনও মেলেনি। তবে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফরের পর বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছে ঢাকা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, বর্ধমান বোমা বিস্ফোরণ ঘটনার পর দিল্লীর কাছে সুনির্দিষ্ট ৮টি বিষয়ে তথ্য চেয়েছিল ঢাকা। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছেÑ বোমা বিস্ফোরণ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে কারা জড়িত। কোন ধরনের ব্যক্তিরা এর সঙ্গে যুক্ত। তাদের পরিকল্পনা কী। তাদের লক্ষ্য কে বা কারা। বাংলাদেশে তাদের সহযোগী কারা। কোন রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে কিনা। আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন এদের আর্থিক মদদ দিচ্ছে কিনা। কতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের পরিচয় কী। বাংলাদেশ সরকার তার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দিল্লীর কাছে এসব তথ্য চেয়েছিল। ভারতের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই একটি প্রাথমিক তথ্য বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ যেসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়েছিল, ভারত এখনও সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাতে পারেনি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী দিল্লীতে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘বর্ধমানের বোমা বিস্ফোরণ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ভারত সরকারের পক্ষ থেকে যে প্রাথমিক প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে, সেখানে সম্পূর্ণ তথ্য নেই। আশা করছি, ভারতের গোয়েন্দারা যখন ঢাকা আসবেন, তখন সে তথ্য তাঁরা দেবেন’। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সরকারকে ভারত যে তথ্য দিয়েছে, সেখানে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। সে কারণে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারছে না বাংলাদেশ। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, বর্ধমানের বোমা বিস্ফোরণ ঘটনার বিষয়ে দিল্লীর কাছেও পর্যাপ্ত তথ্য নেই। দিল্লী এখনও এ বিষয়ে তদন্ত করছে। সে কারণে বিস্তারিত তথ্য দেশটি এখনও বাংলাদেশকে দিতে পারেনি। তবে ভারতের এনআইএ বাংলাদেশের সরেজমিনে তদন্তের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলে আশা করছে ঢাকা। সূত্র জানায়, ভারতের বর্ধমান জেলার খাগড়াগড় এলাকার একটি বাড়িতে গত ২ অক্টোবর বোমা বিস্ফোরণে শাকিল আহমদে ও সুবহান ম-ল নামের দুইজন নিহত হন। প্রথমে নিছক দুর্ঘটনা মনে করা হলেও পরে এর সঙ্গে বাংলাদেশের নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় বলে ভারতের গোয়েন্দারা দাবি করেন। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ওই ঘটনার তদন্তের ভার রাজ্য পুলিশের কাছ থেকে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার হাতে হস্তান্তর করা হয়। ভারতের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, জঙ্গীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কঠোর অবস্থান নেয়ায় তারা পশ্চিমবঙ্গে ঘাঁটি গাড়ছে। এছাড়া বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় সারদা গ্রুপ জামায়াতকে অর্থ সহায়তা দিয়েছে এমন খবরেও উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ। এছাড়া ভারতে বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রতিবেশী দেশটিকে সতর্ক হওয়ারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এনআইএর প্রাথমিক তদন্তে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণে শাকিল আহমেদ ও সুবহান ম-ল নামে দুইজন নিহত এবং আবদুল হাকিম নামে একজন আহত হন। এই তিনজন জেএমবির সদস্য। বোমা বিস্ফোরণের ব্যাপারে আরও তথ্য জানতে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) একটি প্রতিনিধি দল ৯-১০ নবেম্বর বাংলাদেশ সফর করবে। বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের পর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে গত ৮ অক্টোবর ভারতের কাছে বিস্তারিত তথ্য জানাতে অনুরোধ করা হয়। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও জানিয়েছিলেন, বর্ধমান বিস্ফোরণের বিষয়ে ভারতের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেলে এ বিষয়ে সরকার থেকে পদক্ষেপ নেয়া আরও সহজ হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। এ প্রেক্ষিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও জানানো হয়েছিল, বর্ধমানের ঘটনায় বাংলাদেশকে বিস্তারিত তথ্য দেয়া হবে। এসবের ধারাবাহিকতায় গত সোমবার বাংলাদেশের কাছে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন পেশ করে ভারত। তবে ওই প্রতিবেদনে বিস্তারিত তথ্য মেলেনি। এখন ভারতের জাতীয় সংস্থার প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরের পর বিস্তারিত তথ্য মিলতে পারে বলে আশা করছে সরকার। ‘প্রধান সন্দেহভাজন’ ব্যক্তির নাম প্রকাশ ॥ বর্ধমানের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত ‘প্রধান সন্দেহভাজন’ ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেছে এনআইএ। সম্প্রতি ভারতের টেলিগ্রাফ পত্রিকায় এনআইএর বরাদ্দ দিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, প্রধান সন্দেহভাজন ব্যক্তিটির নাম শাহানুর আলম। ৩৩ বছর বয়সী শাহানুরের বাড়ি আসামের বরপেটা জেলার চাতলা গ্রামে। গ্রামে তিনি চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত। জঙ্গী নিয়ে দিল্লীকে তথ্য দিয়েছে ঢাকা ॥ বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছে একশ’ জঙ্গীর একটি তালিকা দিয়েছে। তারা ভারত থেকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে অস্ত্র পাচার করছে। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী দিল্লীতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, সম্প্রতি সিলেট থেকে যে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, তা ভারত থেকেই এসেছে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থার কাছে প্রমাণ আছে, নিয়মিত ভারত থেকে বাংলাদেশে অস্ত্র পাচার হচ্ছে। সেসব তথ্য ভারত সরকারের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
×