ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টেস্ট ক্রিকেটের ১৪ বছর পূর্তি আজ

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১০ নভেম্বর ২০১৪

টেস্ট ক্রিকেটের ১৪ বছর পূর্তি আজ

মিথুন আশরাফ ॥ দিনটি বাংলাদেশের জন্য খুবই আনন্দের। এই দিনেই যে টেস্ট ক্রিকেটে পা রেখেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট। ২০০০ সালের ১০ নবেম্বর ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট দিয়ে শুরু হয় সেই যাত্রা। তা চলছেই। আজ টেস্ট ক্রিকেটের ১৪ বছর পূর্তি বাংলাদেশের। সোমবার পা রাখবে ১৫ বছরে। এই ১৪ বছরে বাংলাদেশ কী পারল বিশেষ কিছু অর্জন করতে? পারল। টেস্ট ইতিহাসের সেরা সাফল্যটিইত এসেছে এ বছরে। কোন দলকে নিজেদের শক্তি দেখিয়ে প্রথমবারের মতো টানা ২ টেস্টে হারাল। এরচেয়েও বড় বিষয়, এ দুই জয়ে প্রথমবারের মতো টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের ৯ নম্বরে নিজেদের যোগ্যতায় উঠেছে বাংলাদেশ। এ বছরটিতে টেস্টে সেরা সাফল্যেই ভাসছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। এর আগেও বাংলাদেশ ৯ নম্বরে অবস্থান করেছে। কিন্তু সেটি নিজেদের যোগ্যতায় নয়। ২০০৬ সালে টেস্ট ক্রিকেট থেকে প্রায় ৬ বছরের স্বেচ্ছা নির্বাসনে যায় জিম্বাবুইয়ে। এ সময়টিতে টেস্টে ৯ দেশ খেলেছে। স্বাভাবিকভাবেই ৯ নম্বরে থেকেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এবার জিম্বাবুইয়েকে টানা ২ টেস্টে হারিয়েই যোগ্যতা দেখিয়ে প্রথমবারের মতো র‌্যাঙ্কিংয়ের ৯ নম্বরে উঠেছে। আরেকটি বিষয়ে সামান্য খটকা লাগতে পারে। সেটি কী? এর আগেও তো বাংলাদেশ ২০০৯ সালে টানা দুই টেস্টে জিতেছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। কিন্তু সেই সময়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ছিল ‘দুর্বল’। বড় কোন তারকাই সেই দলে ছিল না। তাই পুরো শক্তির দলকে হারাতেও পারেনি বাংলাদেশ। টেস্ট সিরিজ জয় হয়েছে ঠিক। কিন্তু সেই জয়ে প্রতিপক্ষ দল ছিল ‘দুর্বল’। সেই বিষয়টি তো গায়ে সেটেই আছে। তাই এ বছরে যে জিম্বাবুইয়েকে টানা ২ টেস্টে নিজেদের দক্ষতা দেখিয়ে হারিয়েছে বাংলাদেশ, সেটিই এগিয়ে থাকছে সবার আগে। এই এগিয়ে থাকা ক্রিকেটারদের জন্যই। আর সেই ক্রিকেটারদের জন্য বিশেষ কিছু থাকবে না, সেরা বছরটি পেয়ে থাকবে না কোন আয়োজন, এমনটি কী হয়? এমনই হচ্ছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের জন্য বিশেষ কিছু থাকছে না আবার থাকছে না কোন আয়োজনও। এমনটিই জানালেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ও প্রথম টেস্ট খেলা সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান, ‘না বিশেষ কোন আয়োজনত নেই।’ কেন নেই? সেই ব্যাখ্যাও অবশ্য দিলেন আকরাম, ‘আসলে এখনও সিরিজের একটা টেস্ট বাকি।’ তবে এমনদিনে সেই প্রথম টেস্টের স্মৃতি ঠিকই শিহরন জাগাচ্ছে আকরামকে, ‘আসলে সেই দিনটি যে কেমন লেগেছিল, তা বলে বোঝাতে পারব না। প্রথম টেস্ট খেলছি আমরা। সে কী আনন্দ! দিন যেতে যেতে এখন বাংলাদেশ ১৪ বছর অতিক্রম করে ফেলছে। ভাবতেই ভাল লাগছে। বছরটিতে আবার বাংলাদেশ শেষ সময়ে এসে ২টি টেস্টও জিতে গেল। অনেক ভাল লাগছে।’ বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট খেলেছেন হাবিবুল বাশার সুমন। বর্তমানে তিনি নির্বাচক কমিটির সদস্য। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০০৫ সালে প্রথম টেস্ট জিতেছে। দেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট সিরিজও জিতেছে। এবার যখন দল দ্বিতীয়বারের মতো দেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতল, তখনও প্রতিপক্ষ দল জিম্বাবুইয়ে। সেই সিরিজ জয়ী টেস্ট আবার খুলনায় দেখেছেনও হাবিবুল। তার অনুভূতি, ‘দুইটার অনুভূতিই একই রকম। ২০০৫ সালে মাঠে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। মাঠেই ছিলাম। আর এবারেরটা মাঠের বাইরে থেকে দেখেছি। তবে দলের সঙ্গীই ছিলাম। অবশ্য প্রথম টেস্ট জয় ছিল ২০০৫ সালে। স্বাভাবিকভাবেই অনুভূতির দিক দিয়ে সবসময়ই সেটাই এগিয়ে থাকবে।’ আসলেই প্রথম জয় সবসময়ই মধুর। তাই ২০০৫ সালের জয়টি শুধু হাবিবুলের কাছেই নয়, সবার কাছেই এগিয়ে থাকবে। তবে এবার যে বাংলাদেশ দল করে দেখাল, প্রথমবারের মতো যোগ্যতাবলে ৯ নম্বরে উঠল; এ জন্যই এ বছরটি বিশেষ হয়ে থাকল। সেই বিশেষ কিছু পেতে কিন্তু বাংলাদেশকে খেলতে হয়েছে ৮৭টি টেস্ট। এর মধ্যে জয় এসেছে ৬টি। হার হয়েছে ৭০টি। আর ড্র করেছে ১১টি ম্যাচে। দেশের মাটিতে তিনটি ও দেশের বাইরে সমানসংখ্যক টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ। ২০০৫ সালে দেশের মাটিতে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জিতে। এরপর টেস্ট জিততে অপেক্ষা করতে হয় চারবছর। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে হারায়। আর গতবছর জিম্বাবুইয়েতে গিয়ে ১ টেস্ট জেতার পর এবার দেশের মাটিতে টানা ২ টেস্ট জিতে। প্রথমবারের মতো নিজেদের পূর্ণশক্তি দেখিয়ে, শক্তিশালী দলের বিপক্ষেই টেস্ট সিরিজ জিতে নেয় বাংলাদেশ। এ নিয়ে ১৪ বছরে ৪৪ টেস্ট সিরিজ খেলে ৩ টেস্ট সিরিজ জিতে বাংলাদেশ। ৩৯টিতে হারে। আর ২টি টেস্ট হয় ড্র। ১৪ বছরে বাংলাদেশের এমন নৈপুণ্যের সামনে অনেক দলই দাঁড়াতে পারেনি। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ডের মতো দলগুলোতে ১৪ বছরে কোন টেস্টই জিততে পারেনি। আর সিরিজ জয়ত ছিল দূরের বিষয়। এমন নৈপুণ্য বাংলাদেশকে তাই এগিয়েই দিয়েছে। আজ ১৪ বছর পূর্তির দিনে র‌্যাঙ্কিংয়ের ৯ নম্বরে উঠে সেরা সাফল্যেই ভাসছে।
×