ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘পাকিস্তান কাঁপাতে খেলতে যাচ্ছি’

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১০ নভেম্বর ২০১৪

‘পাকিস্তান কাঁপাতে খেলতে যাচ্ছি’

রুমেল খান ॥ ‘২০১২ সালে সাফে আমাদের যে দলটি খেলেছিল, এই দলটি তার চেয়ে অনেক বেটার বলে মনে করি।’ সুইনু প্রু মারমার কথা। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়কের কথা। রবিবার বাফুফে ভবনে এমন কথাই বললেন তিনি। সোমবার তারা খেলতে যাবেন পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য ‘সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ’-এ খেলতে। ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। অনুর্ধ ১৬ দলের দুর্দান্ত ফরোয়ার্ড সানজিদা আক্তার সাফগামী জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েও খেলতে পারছেন না। বাধ সেধেছে তাঁর জেএসসি পরীক্ষা। সানজিদা থাকলে কি দলের আক্রমণভাগ আরেকটু শক্তিশালী হতে পারত না? ‘আমি তা মনে করি না। কেননা, দলে যারা আছে তারা সানজিদার চেয়েও বেটার।’ তৃষ্ণা চাকমা ও নুবাই চিং মারমার কথা আলাদা করে উল্লেখ করলেন সুইনু, ‘উইঙ্গার পজিশনে ওরা খুবই ভাল খেলছে।’ কদিন আগেই ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্ব।’ এতে বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৬ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল বাছাইপর্ব উৎরাতে না পারলেও তাদের সেরা খেলাটাই খেলে। হারায় জর্দান ও আরব আমিরাতকে। আর অল্পের জন্য হেরে যায় ভারত ও ইরানের কাছে। এই আসরে স্বদেশী জুনিয়র প্লেয়ারদের খেলা দেখে সুইনুরাও ইসলামাবাদে গিয়ে ভাল রেজাল্ট করার তাগিদ অনুভব করছেন, ‘ওরা এতটাই ভাল খেলেছে যে, এখনও আমাদের ভাল খেলা জরুরী হয়ে পড়েছে। ওরা ভাল খেলেছে আর আমরা কি করে খারাপ খেলব! এটা এখন প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের জন্য।’ কাকে কঠিন প্রতিপক্ষ মনে করছেন? ‘যদি গ্রুপটা জানতে পারতাম, তাহলে এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারতাম। এখনও গ্রুপ নির্ধারণ হয়নি। তবে আমরা প্রতিপক্ষ নিয়ে উদ্বিগ্ন নই। যেই আসুক, আমরা তাদেরই হারাতে বদ্ধপরিকর।’ ৪ অক্টোবর থেকে জাতীয় মহিলা দলের কোচের দায়িত্ব নেন জাপানের সুকিতাতে নোরিও। এর আগে স্থানীয় কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের অধীনেই অনুশীলন করে আসছিলেন সুইনুরা। দুই কোচের অধীনে অনুশীলনÑ এ প্রসঙ্গে সুইনুর অভিমত, ‘স্বভাবতই বিদেশী কোচের কোচিং স্টাইল দেশী কোচের চেয়ে ভিন্ন ও বেটার। কিন্তু তাই বলে দেশী কোচও কিন্তু মন্দ কোচিং করাননি।’ ইসলামাবাদ যাওয়ার আগে আরও কটি প্র্যাকটিস ম্যাচ খেললে প্রস্তুতিটা যথাযথ হতো বলে জানান সুইনু। বাফুফে আর্টিফিসিয়াল টার্ফ, কমলাপুর ও বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে দুই বেলা করে অনুশীলন করেছে মহিলা দল। ‘অনুর্ধ-১৬ দলের সঙ্গে ৪ ম্যাচ খেলেছি আমরা। এছাড়া অনুশীলনের সময় নিজেরাও ভাগ হয়ে কয়েকটি ম্যাচ খেলেছি’Ñ সুইনুর ভাষ্য। দলের সহ-অধিনাযক সাবিনা খাতুন। তিনি ঘরোয়া ফুটবলে প্রতি ম্যাচেই ব্যক্তিগতভাবে গোলের বন্যা বইয়ে দেন, কিন্তু আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোতে নিষ্প্রভ থাকেন। এ প্রসঙ্গে সুইনু বলেন, ‘বিদেশী কোচ এসে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন সাবিনাকে নিয়ে। ওর দুর্বলতা শ্যূটিংয়ে, সেটা নিয়ে নিয়ে অনেক খেটেছেন। আশা করি সাফে সাবিনা ভাল খেলবে।’ সাফে নিজের কোন টার্গেট নেই সুইনুর, ‘আমার টার্গেট দল নিয়ে। যেভাবেই হোক ফাইনাল খেলতে হবে।’ এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো দলকে নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন সুইনু। এর আগে এশিয়ান কোয়ালিফাইংয়ে দলের হয়ে ক্যাপ্টেন্সি করেছেন। অধিনায়কত্ব নিয়ে কোন চাপ অনুভব করছেন না বলে জানালেন সুইনু, ‘কোন প্রেসার ফিল করছি না। প্রেসার নিলে তো খেলতেই পারব না!’ দলের ২০ খেলোয়াড়ের মধ্যে ৬ জন হচ্ছে অনুর্ধ-১৬ দলের। সিনিয়র-জুনিয়র কোন সংঘাত বা সমস্যা? ‘মোটেও না। আমাদের সবার মধ্যে বেশ ভাল বোঝাপড়া আছে। সবাই সবাইকে সাহায্য করে। দলে কোন ইনজুরি সমস্যাও নেই।’ সুইনুর জবাব। তিনি আরও বলেন, ‘আগে আমাদের প্রধান সমস্যা ছিল ফিনিশিংয়ে। সেটা নিয়ে অনেক কাজ করেছেন কোচ। এই আত্মবিশ্বাই নিয়েই বলছি আমাদের ফাইনাল খেলা উচিত।’ কদিন আগে হাসপাতালে শয্যাশায়ী বাফুফের মহিলা ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাচ্চু বলেছিলেন, ‘আশা করি পাকিস্তানে গিয়েও আমাদের মেয়েরা ভাল খেলবে। তবে একটা সমস্যা হতে পারে। খেলা হবে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে। এ জন্য অক্সিজেন গ্রহণে অসুবিধে হতে পারে মেয়েদের। খেলাটা লাহোরে এলে এই সমস্যা হতো না। এ জন্য আমাদের মেয়েদের অনুশীলন ক্যাম্প পাহাড়ী অঞ্চল, বিশেষ করে চট্টগ্রামে করলে উপকার হতো। তারপরও আশা করি তারা ভাল খেলবে।’ উচ্চতা ও অক্সিজেনের এই সমস্যার কথা সুইনুকে স্মরণ করিয়ে দিলে সুইনু বলেন, ‘ফুটবল এমন একটি খেলা, যা যে কোন স্থানেই খেলা যায়। আমার মনে হয় না উচ্চতা বা অক্সিজেনের কারণে আমাদের খেলতে কোন সমস্যা হবে।’
×