ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আজকের দিনে বগুড়ায় ১৪ মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে হানাদার বাহিনী

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ১১ নভেম্বর ২০১৪

আজকের দিনে বগুড়ায় ১৪ মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে হানাদার বাহিনী

সমুদ্র হক ॥ মুক্তিযুদ্ধের শেষের বেলায় আজকের এই দিনে বগুড়ার বাবুরপুকুরে হানাদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকাররা ১৪ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে ও বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে ফেলে রাখে। কৃতজ্ঞ জাতি সেই ১৪ কবরের ধারে নির্মাণ করেছে স্মৃতিস্তম্ভ। যা নির্মিত হয়েছে বগুড়া জেলা পরিষদের উদ্যোগে ও তাদেরই অর্থায়নে। প্রায় ৫ বছর আগে নির্মিত হয় স্মৃতিস্তম্ভ। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে শাজাহানপুর উপজেলার খরনা ইউনিয়নের গ্রাম বাবুরপুুকুর। স্মৃতিস্তম্ভের জন্য বাবুরপুকুরে ১৫ শতাংশ জায়গা দান করেছেন সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পাশের তিতখুর গ্রামের আলতাফ হোসেন। ১৪ শহীদের সারিবদ্ধ কবরকে সম্পৃক্ত করেই মূল কাঠামো তৈরি হয়েছে। পূর্বাংশে ৭৫ ফুট প্লাটফর্মের ওপর বেদি রাখা হয়েছে ২৫ ফুট উঁচু, যাতে মহাসড়কের চলাচলকারী যানবাহন থেকে দেখা যায়। কবরের সারির উত্তর ধারে ছোট্ট লেক আছে। কবরের উপরে বসানো হয়েছে লাল রঙের টাইলস। এই প্রতিচ্ছায়া গিয়ে পড়বে লেকে। মূল কাঠামো অর্ধ চন্দ্রাকৃতির, যা মানুষের বুকের বিমূর্ত রূপ। এই বুকে ১৪টি ছিদ্র রেখে বোঝানো হয়েছে ১৪ জন শহীদ হয়েছেন গুলিবিদ্ধ হয়ে। বুকের পাশ দিয়ে নেমে আসা এক হাত কবর ও পাশের লেক স্পর্শ করেছে আরেক হাত উর্ধমুখী। এতে বোঝানো হয়েছে মরন সাগর পাড়ে গিয়েও আমরা এনেছি স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের এই দিনে বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া শাহপাড়া ম-লপাড়া তেতুলতলা হাজিপাড়া ও পশারিপাড়া এলাকায় রেইড দিয়ে হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী রাজাকারদের দেখিয়ে দেয়া বাড়ি থেকে এক মহিলা মুক্তিযোদ্ধাসহ ১৪ জনকে ধরে নিয়ে যায় ভোরের কিছু আগে। ওই বছর তখন ছিল পবিত্র রমজান মাস। সেহেরি খাবারের সময় একে একে তাদের ধরে হাত ও চোখ বেঁধে তোলে সেনা কনভয়ে। তারপর গাড়ি যায় নাটোর সড়ক ধরে। বাবুরপুকুরে পৌঁছার পর তাদের টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারের পর বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে চলে যায় হানাদাররা। এই স্মৃতি স্মারক বানিয়ে প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাতায়ন খুলে দেয়া হয়েছে।
×