ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিএমডিএর ৪৯ কোটি টাকার দরপত্র ভাগাভাগি

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ১২ নভেম্বর ২০১৪

বিএমডিএর ৪৯ কোটি টাকার দরপত্র ভাগাভাগি

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহীতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গ্রামীণ রাস্তা পাকাকরণ কাজের ৪৯ কোটি টাকার দরপত্র সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর মধ্যস্থতায় বাটোয়ারা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েও ৩৯টি লটের ৩৯ ঠিকাদারকে কাজ না দিয়ে উচ্চ দরদাতাকে দেয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী ঠিকাদাররা এ ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ঠিকাদারদের অভিযোগ, এই প্রকল্পের পরিচালক বিএমডিএর প্রকৌশলী আবুল কাশেম অর্থের বিনিময়ে পিপিআর লঙ্ঘন করে কাজ বণ্টন করেছেন। বিএমডিএর একাধিক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে বিএমডিএর চেয়ারম্যান পদটি শূন্য থাকায় এবং নির্বাহী পরিচালক বদলি হওয়ায় সুবর্ণ লোপাটের সুযোগ একাই গ্রহণ করেন প্রকল্প পরিচালক আবুল কাশেম। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিএমডিএর অধীনে কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের জন্য গত ১৭ জুলাই ৮৩টি লটে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর বিপরীতে প্রায় সাড়ে সাতশ’ সিডিউল জমা দেন ঠিকাদাররা। গত রবিবার ঠিকাদারদের কার্যাদেশ প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়। ঠিকাদারদের লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, রাজশাহীর গোদাগাড়ী-১ নম্বর লটের কাজ পাওয়ার জন্য মেসার্স বর্ষা এন্টারপ্রাইজ ৫২ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯৫ টাকা সর্বনিম্ন দর দেয়। সব কাগজপত্র ঠিক থাকা সত্ত্বেও তাকে কাজ না দিয়ে ৯ নম্বর দরদাতা গোলাম রাব্বানিকে কাজ দেয়া হয়, যিনি দর দিয়েছেন ৬১ লাখ সাত হাজার ৬০৫ টাকা। একইভাবে পবা-৪ নম্বর লটের জন্য পঞ্চম দরদাতা সরকার অ্যান্ড কোম্পানিকে, পবা-৫ লটের জন্য আষ্টম দরদাতা ফরিদ উদ্দীনকে, মোহনপুর-৬-এর জন্য পঞ্চম দরদাতা মেসার্স আসিফ কন্সট্রাকশনকে, বাগমারা-৭ এর জন্য দশম দরদাতা মেসার্স ইভান এন্টারপ্রাইজকে, দুর্গাপুর-৮ এর জন্য তৃতীয় দরদাতা মেসার্স মদিনা কন্সট্রাকশনকে, দুর্গাপুর-৯ এর জন্য নবম দরদাতা মেসার্স পোদ্দার কন্সট্রাকশনকে, চারঘাট-১৫ এর জন্য তৃতীয় দরদাতা মেসার্স সুমন ট্রেডার্সকে, নওগাঁর মান্দা-১০ এর জন্য চতুর্থ দরদাতা মেসার্স ঊষা কন্সট্রাকশনকে, পাবনার আটঘরিয়া-৪ এর জন্য চতুর্থ দরদাতা মেসার্স শীলা এন্টারপ্রাইজকে, সুজানগর-১১ লটে চতুর্থ দারদাতা হীরক এন্টারপ্রাইজকে, নাটোর-২ লটে চতুর্থ দরদাতা জিএস এন্টারপ্রাইজকে, গুরুদাসপুর-৬ লটে চতুর্থ দরদাতা মেসার্স হাসান এন্টারপ্রাইজকে, চাঁপাই-১ লটে তৃতীয় দরদাতা মের্সাস আসিফ কন্সট্রাকশনকে, গোমস্তাপুর-৮ লটের জন্য তৃতীয় দরদাতা মেসার্স রোলেক্স এন্টারপ্রাইজকে, নাচোল-১১ লটে ষষ্ঠ দরদাতা মেসার্স জামান ব্রাদার্সকে, নাচোল-১২ লটে পঞ্চম দরদাতা মেসার্স ঊষা কন্সট্রাকশনকে কাজ দেয়া হয়। সব মিলিয়ে ৩৯টি লটে অনিয়মের মাধ্যমে সর্বমিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতাকে কাজ দেয়া হয়েছে। পাবনার আটঘরিয়া-৪ লটের কাজ না পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তাপস কন্সট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী তাপস খান অভিযোগ করেন, তিনি ওই কাজের জন্য সর্বনিম্ন দর দেন এক কোটি তিন লাখ ৩১ হাজার ১০০ টাকা। তার কাগজপত্র সঠিক থাকা সত্ত্বেও তাকে কাজ না দিয়ে প্রায় ৯ লাখ টাকা বেশি দরাদাতা মেসার্স শীলা এন্টারপ্রাইজকে কাজ দেয়া হয়েছে। তাপস বলেন, প্রজেক্ট ডাইরেক্টর আবুল কাশেমকে ঘুষ না দেয়ায় তিনি অন্য ঠিকাদারকে কাজ দিয়েছেন। একইভাবে ৩৯ জন সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েও পাননি কার্যাদেশ। ঘুষ বাণিজ্যের কাছে পরাজিত হয়েছেন সর্বনিম্ন দরদাতা ঠিকারদাররা। জানা গেছে, প্রকল্প পরিচালক আবুল কাশেম রাজশাহীর আড়ানি এলাকায় একটি বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করছেন। ওই বাড়ি নির্মাণে ইট নিতেও তিনি তিনজন ভাটা মালিককে রাস্তা নির্মাণের এ কাজ দিয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন বিএনপি নেতাও রয়েছেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক আবুল কাশেম বলেন, নিয়ম মেনেই কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। তবে সর্বনিম্ন দারাদাতাকে কাজ না দিয়ে উচ্চ দরদাতাকে কাজ দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
×