ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জনরোষের মুখে কোণঠাসা ॥ জামায়াত পালাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ১২ নভেম্বর ২০১৪

জনরোষের মুখে কোণঠাসা ॥ জামায়াত পালাচ্ছে

বিভাষ বাড়ৈ ॥ সরকারের কঠোর অবস্থান, একের পর এক যুদ্ধাপরাধীর বিচার, লাগাতার সন্ত্রাসী তৎপরতা আর গণজাগরণ মঞ্চের প্রভাবে ছোট হয়ে আসছে জামায়াত-শিবিরের বলয়। কোণঠাসা ও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিএনপির রাজনৈতিক মিত্র যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত এ দলটি। নেতাদের সমন্বয়হীনতা, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব আর জামায়াতের সঙ্গে শিবিরের মতবিরোধে কর্মসূচী দিয়েও সফলতার মুখ দেখছে না। চোরাগোপ্তা হামলা, ঝটিকা মিছিলে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে কর্মকা-। কর্মসূচী পরিচালিত হচ্ছে ই-মেইল, ফেসবুক, এসএমএসেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্ত অবস্থান আর জনরোষের ভয়ে নেতাকর্মীরা দেশ ত্যাগ করে পাড়ি জমাচ্ছেন। কেউ কেউ চাকরির চেষ্টা করছেন। দলের ভবিষ্যত নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে হতাশা। এদিকে দুর্বল হয়ে পড়েছে জামায়াতের ‘পাওয়ার হাউস’ হিসেবে স্বীকৃত ছাত্রশিবির। শিবির করাকে আর ভাল চোখে দেখছে না পরিবারগুলো। অভিভাবকরা জেনে গেছেন জামায়াত-শিবির ইসলামী সংগঠন নয়, রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে গেছে শিবিরের রিক্রুটমেন্ট। স্বাধীনতাবিরোধী এ গোষ্ঠীর অবস্থা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, নিজেদের ভয়াবহ সাংগঠনিক দুবর্লতার কথা সম্প্রতি বেরিয়ে এসেছে জামায়াতের নিজেদের এক পর্যালোচনাতেই। যেখানে শিবিরের রিত্রুুটমেন্ট বন্ধ, পরিবারগুলো থেকে সন্তানদের শিবির থেকে চলে আসার চাপসহ নেতাকর্মীদের নিজের স্বার্থে চাকরি বা বিদেশে চলে যাওয়ার প্রবণতাকে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক এমনকি জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, মোটা দাগে অন্তত পাঁচটি কারণে এই মুহূর্তে জটিল পরিস্থিতিতে পড়েছে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীটি। কারণগুলো হচ্ছেÑ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে একের পর এক জামায়াতের শীর্ষনেতাদের ফাঁসির আদেশ ও রায় কার্যকরের উদ্যোগ, গুরু গোলাম আযমের মৃত্যু, স্বল্পসময়ের ব্যবধানে কয়েক হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার এবং মানবতাবিরোধী বিচারবন্ধে ক্রমশ বিদেশীবন্ধু রাষ্ট্রগুলোর হস্তক্ষেপ ও প্রভাব হ্রাস। নিবন্ধন বাতিলের সঙ্গে সঙ্কট আরও ঘনীভূত হয়েছে দল হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগে। শীঘ্রই বিল আকারে মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর সংসদে উত্থাপনের প্রস্তুতি রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের। জনরোষের ভয়ে জোট ও ভোটবন্ধু বিএনপিও সেভাবে সমর্থন করতে পারছে না জামায়াতকে, যা জামায়াতের চিন্তার আর এক কারণ। তবে সব কিছু ছাপিয়ে সরকারের কঠোরতা ও সাধারণ মানুষের মাঝে লাগাতার সন্ত্রাসীমূলক কর্মকা-বিরোধী মনোভাব জেগে ওঠাকেই ভয় পাচ্ছে জামায়াত-শিবির। সাধারণ মানুষের মনে মুুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগিয়ে তোলার জন্য গণজাগরণ মঞ্চকে ভয় পাচ্ছে এ গোষ্ঠী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধীরে ধীরে একা হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াত। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার পর এত দুঃসময় কখনও যায়নি দলটির। জামায়াত-শিবির কোন সিদ্ধান্তই এখন আর ঠিকভাবে নিতে পারছে না। কর্মসূচী দিলেও আগের মতো কাজে আসছে না। গত কয়েক দিনের হরতাল ছিল নামকাওয়াস্তে। ভেঙ্গে পড়েছে সাংগঠনিক কাঠামো, কর্মসূচীতে লাভ হচ্ছে না ॥ দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে সক্রিয় নেতাকর্মীরাও রয়েছেন আত্মগোপনে। মগবাজারের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, পুরানা পল্টনের মহানগরী অফিসসহ অধিকাংশ মহানগর, জেলা-উপজেলা কার্যালয় এখন তালাবদ্ধ। প্রকাশ্যে কর্মসূচীর ঘোষণা দিলেও সফল করতে পারছে না দলটির নেতাকর্মীরা। ’৭৫-এর পরে এমন সঙ্কট আর আসেনি বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। দলীয় কার্যালয় দূরের কথা, বাসাবাড়ি, ব্যক্তিগত অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কোথাও একটানা অবস্থান করছেন না তারা। ঝটিকা মিছিল, ভাংচুর ছাড়া চলছে না প্রকাশ্য কোন সাংগঠনিক কার্যক্রম। নিত্যনতুন কৌশল নির্ধারণ করেও খুব বেশি সুবিধা করতে পারছে না। সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে অনেকে দেশ ত্যাগ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাকরির জন্য পাড়ি জমাচ্ছেন বলেও তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে তথ্য আসছে আবার কেউ কেউ রাজনীতি ছেড়ে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি নেয়ার চেষ্টা করছেন বলেও খবর আসছে কেন্দ্রে। এ বিষয়টিও ভাবিয়ে তুলেছে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্বকে। কেউ এ নিয়ে খোলামেলা কথা বলতে রাজি না হলেও তারা বলছেন, সঙ্কটে পড়লেও মাঠপর্যায়ে দল ত্যাগ করে চলে যাওয়া কিংবা দলের ঘোষণার পরেও মাঠে নামেনি এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। যা ঘটেছে গত কয়েক দিনে একের পর এক দলের নেতাদের ফাঁসির রায়ের পরে। সর্বশেষ তিন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায়ের পর টানা কর্মসূচী চললেও হরতাল ডেকে লাপাত্তা ছিল অধিকাংশ জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী আবার অনেক স্থানে নাশকতার চেষ্টা করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্ত অবস্থানে সফল হয়নি তারা। জামায়াত ও ছাত্রশিবির এ মুহূর্তে ঝুঁকি নিতে রাজি নয় বলে জানিয়েছেন মাঠপর্যায়ের নেতারা। দেশের যেসব এলাকায় জামায়াতের শক্ত অবস্থান রয়েছে, সেসব এলাকায়ও হরতালে দলটির তেমন তৎপরতা ছিল না। নেতৃত্ব সঙ্কটের কারণেও আন্দোলন জোরদার হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১০ জন জামায়াত নেতা বিচারের সম্মুখীন হওয়ায় দলটি নেতৃত্বহীন হয়ে পড়েছে। বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে জামায়াতের বিভিন্ন নেতাকর্মী সবচেয়ে বেশি সহিংস হয়ে উঠেছিলেন। তারা ধারণা করেছিলেন, জামায়াতের পর্যাপ্ত পেশীশক্তি রয়েছে এবং সঙ্গে রয়েছে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি সুতরাং পেশীশক্তি ব্যবহার করে বিচার বাধাগ্রস্ত করতে পারবেন। কিন্তু হিতে বিপরীত হয়েছে। দলটির সেই জৌলুস এখন আর অবশিষ্ট নেই। জামায়াতের ধারণা ছিল অসংখ্য নেতাকর্মী গ্রেফতার হলে দেশ ও বিদেশে প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে এবং সরকার ও অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিপাকে পড়বে, তা হয়নি। ইতোমধ্যেই জামায়াতের হাজার হাজার নেতাকর্মী দেশব্যাপী সহিংসতার পথ অবলম্বন করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছে। এ নিয়ে সরকার এখন কোন চাপই অনুভব করছে না। মাঠে বর্তমান পরিস্থিতি এমন, যেন জামায়াত একটি নিষিদ্ধ দল। জামায়াতের রাজনীতির অধিকার নয়, বরং তাদের বিরুদ্ধে যে কোন শক্ত অবস্থানকেই স্বাগত জানাচ্ছে সাধারণ মানুষ। আগামীকাল ১৩ নবেম্বর দশম সংসদের চতুর্থ অধিবেশন বসবে। ধারণা করা হচ্ছে, এই অধিবেশনে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিল উত্থাপিত হতে পারে। যদি তাই হয়, তাহলে দলটি আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। সে ক্ষেত্রে অনেকে মনে করেন, জামায়াত আন্ডারগ্রাউন্ড তৎপরতা শুরু করতে পারে। তাতে অবশ্য জামায়াতের মূল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। কারণ এমনিতেই আন্তর্জাতিক জঙ্গী গোষ্ঠীর আদলে আন্ডারগ্রাউন্ডে সক্রিয়। সেখানে সকল জঙ্গীর মূল শক্তি যে জামায়াত তার প্রমাণও মিলেছে বহুবার। নিষিদ্ধ হলে প্রকাশ্যে গণতান্ত্রিক দলের সুবিধা নিয়ে সাধারণ মানুষকে ব্যবহার করে আর তৎপরতা চালাতে পারবে না। জামায়াতের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য হচ্ছেÑ’বাড়িতে বাড়িতে প্রবেশ করে প্রচার চালিয়ে ও ধর্মের প্রতি মানুষের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে এককভাবে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া এবং বাংলাদেশকে ইসলামের নামে মূলত তালেবানী রাষ্ট্রে পরিণত করা। নিষিদ্ধ হলে প্রকাশ্যে অপতৎপরতা চালানো পথ বন্ধ হয়ে যাবে। এ পথে ’৭৫-এর পর তারা অনেকটা এগিয়েছিল। কিন্তু বড় ধরনের ধাক্কাটি এসেছে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় লাভের মধ্য দিয়ে। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর জামায়াত পুনরায় বাংলাদেশে রাজনীতির সুযোগ পেয়ে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে ১০টি, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ১৮টি, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তিনটি, ২০০১ সালের নির্বাচনে ১৭টি ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে দুটি আসন লাভ করে। ১৯৯৯ সালে বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াত শুধু ১৭টি আসনে জয়লাভই করেনি, দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। শুধু তাই নয়, মন্ত্রিপরিষদেও তারা হয়ে ওঠেন অত্যন্ত প্রভাবশালী। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয় এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন এই সরকার অনুধাবন করে যে বাংলাদেশে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র দিনে দিনে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন হয়ে উঠেছে। সুতরাং সরকার স্বাধীনতাবিরোধী, যারা ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালে খুন, হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। প্রাথমিকভাবে জামায়াতের ১০ শীর্ষ ও বিএনপির দু’জন প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠিত হয়। চলছে বিচার আর একের পর এক রায়ে এখন দিশেহারা স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী। জনবিচ্ছিন্ন জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে জাগছে পরিবার ॥ ধর্ম ব্যবসায়ী স্বাধীনতাবিরোধী দলটি এ যাবত একটি নির্দিষ্ট উগ্রবাদী জনগোষ্ঠীর সমর্থন নিয়ে টিকে থাকলেও লাগাতার সহিংস অবস্থান নেয়ায় জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো মাঠপর্যায়ে নেতাকর্মীদের মাঝে নানামুখী টানাপোড়েন দিয়ে বেকায়দায় জামায়াতের ‘পাওয়ার হাউস’ হিসেবে স্বীকৃত ছাত্রশিবির। শিবির নেতাকর্মীদের বাবা-মা ভাই-বোনরাও আছে আতঙ্কে। ছেলে কখন ধরা পড়ে। কখন কারাগারে যায়। কখন গুম হয়। কখন ক্রসফায়ারে পড়ে। এ উদ্বেগ তাদের নিত্যসঙ্গী। অনেক অভিভাবকই চাইছেন তার সন্তানরা শিবির ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক। অভিভাবকরা অভিযোগ করছেন, তাদের সন্তানদের লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কারণ অনেকেই জেনে গেছেন জামায়াত-শিবির যত না ইসলামী সংগঠন তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। শিবির অতীতে আর এত বড় সঙ্কটে পড়েনি বলেও মনে করছেন সংগঠনটির নেতারা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিবিরের উপস্থিতি এক তরফা আর নেই। চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছিল সংগঠনটির দাপট। সেখানেও দাপট একচ্ছত্র নেই। শিবিরের মাঠপর্যায়ে থেকে আনা নানা তথ্য ভাবিয়ে তুলেছে জামায়াত-শিবিরকেই। সূত্রগুলো বলছে, সারাদেশে শিবির করাকে এখন আর ভাল চোখে দেখছে না পরিবারগুলো। আসছে সংসার থেকেও চাপ। শিবিরের এসব সঙ্কট নিয়ে দলের নেতারা কেউ মুখ খুলছেন না। প্রতি মুহূর্তে তারা মোবাইলের সিম বদলান ধরা পড়ার ভয়ে। থাকারও নির্দিষ্ট জায়গা নেই। পুলিশ তাদের ধরেছে। তারা যেখানে থাকতেন সেখান থেকেই। এ নিয়েও সংগঠনটির মধ্যে চলছে নানা টানাপোড়েন। শিবিরের অনেক নেতা সন্দেহ করছেন সরকার হয়ত তাদের মধ্যেই নিজেদের লোক ঢুকিয়ে দিয়েছে। তা না হলে কী করে নেতারা হুটহাট ধরা পড়েন। এদিকে এসব প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে প্রথমবারের মতো সংগঠনটি রিক্রুটমেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। তরুণরা নতুন করে কেউ শিবিরে যোগ দিচ্ছে না। কারণ শিবির পরিচয়টি এখন ঝুঁকিপূর্ণ। সাধারণ মানুষের মধ্যে শিবিরের গ্রহণযোগ্যতা এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে। গণজাগরণ মঞ্চ শিবিরকে অনেকটাই কোণঠাসা করতে পেরেছে। গণজাগরণ মঞ্চ তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পেরেছে যে, জামায়াত ইসলামী দল নয়। এরা ধর্ম ব্যবসায়ী। এরা স্বাধীনতাবিরোধী। নারী অগ্রগতিবিরোধী। দেশবিরোধী। একাত্তরের ঘাতক। গণজাগরণ মঞ্চের অব্যাহত প্রচারে সাধারণ মানুষ দেখতে পারছে জামায়াত-শিবিরের আসল চেহারা। পরিবারগুলো বুঝতে পারছে, মুখে শান্তির ধর্ম আর বাইরে রগ কাটার নীতি একসঙ্গে চলতে পারে না। কর্মসূচী আটকে গেছে ই-মেইল, ফেসবুক, এসএমএসে ॥ কার্যক্রম চোরাগোপ্তা হামলার মধ্যে আটকে থাকা উগ্রবাদী সংগঠন জামায়াত-শিবিরের কর্মসূচীসহ দলীয় কর্মকা- সারাদেশে পরিচালিত হচ্ছে এখন ই-মেইলে ও এসএমএসে। সারাদেশ এমনকি বিদেশের নেতাকর্মীদের কাছেও কর্মসূচী ও সর্বশেষ অবস্থান পৌঁছানো হচ্ছে একই কৌশলে। একই সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে শিবিরের বাঁশের কেল্লাসহ নিজস্ব সব ওয়েবসাইট ও ওয়েবপেজ। কেবল তাই নয়, পুলিশের খাতায় পলাতক হলেও প্রায় দেড় বছর ধরে জামায়াত-শিবিরের সকল কর্মসূচী ও বক্তব্য গণমাধ্যমের কাছে আসছে আত্মগোপনে থাকা নেতাদের নামেও। এদিকে অস্তিত্বহীন ও নামমাত্র অনলাইন পত্রিকার ভুয়া কার্ড ব্যবহার করে জামায়াত-শিবিরের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করছে শিবিরের একটি বিশেষ গ্রুপ। তথাকথিত এ সাংবাদিকরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে জামায়াত-শিবিরকে নাশকতা চালাতে সাহায্য করছে। প্রকাশ্যে কোন সংবাদ সম্মেলন বা সমাবেশ করে কর্মসূচী না দিলেও কিভাবে কর্মকা- পরিচালিত হচ্ছে তা নিয়ে জনমনে জন্ম নিয়েছে বিশেষ কৌতূহল। তাহলে কিভাবে চলছে জামায়াত-শিবিরের কর্মকা-? এ বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে প্রযুক্তির এ ব্যবহারের কথাই জানা গেছে। অন্তত দুই বছর ধরে কর্মসূচীসহ দলীয় কর্মকা- পরিচালনা করা হচ্ছে এখন ই-মেইলে আর মোবাইলে এসএমএস পাঠানো হচ্ছে। তবে সারাদেশের নেতাকর্মীদের কাছে ফোন করা ছাড়া এসব মোবাইল সেট থেকে সাধারণত কোন ফোন রিসিভ করা হয় না। ফোন করেই বন্ধ করে দেয়া হয় সেট। জানা গেল, সাংবাদিকদের কাছে কেবল কল করার জন্যই কিছু মোবাইল সেট ও নম্বর ব্যবহার করছে জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ নেতারা। তবে কথা বলেই বন্ধ করে দেন সেট আবার কথা বলার দরকার হলেই কেবল সেট চালু করেন তারা। পুলিশের নজরদারির ভয়ে ভরকে গেছে তারা। কর্মসূচী ঘোষণা করে মাঠেও থাকেন না নেতারা। মাঠে না থাকলেও মাঝে মধ্যে চোরাগোপ্তা হামলা করে অস্তিত্ব জানান দেয় দলটি। যোগাযোগ করার জন্য জামায়াতের কোন পর্যায়ের নেতাকর্মীকেই পাওয়া যায় না। কেবল তাদের কথা বলার প্রয়োজন হলে দেয়া হচ্ছে কল। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শীর্ষ নেতারা আটক হওয়ার পর থেকেই মূলত এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দলটির কোন নেতাকর্মী এখন আর দলীয় কার্যালয়ে যান না। দারোয়ান মোহাম্মদ আলী বলেন, শীর্ষ নেতারা আটক হওয়ার পর কোন নেতাকর্মীকে এখানে আসতে দেখিনি এবং কে, কোথায় থাকে তাও জানি না। মোহাম্মদ আলী আরও বলেন, বর্তমানে কে, কোন্ দায়িত্বে আছেন তা আমার ভালভাবে জানা নেই। জনরোষের ভয়ে জোট বন্ধু বিএনপিও ছায়া দিতে পারছে না ॥ জামায়াত ও বিএনপির মধ্যে মানিকজোড় সম্পর্কে ফাটল ধরতে শুরু করেছে। যার মূল কারণ জনরোষ। বিএনপি এখন বুঝতে পারছে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে জামায়াতের প্ররোচনায় কোনক্রমেই সহিংসতায় অংশ নেয়া উচিত হয়নি। কারণ রাস্তায় মানুষ পুড়িয়ে মারার সে দায় অনেকটাই বিএনপির ওপর বর্তেছে। দ্বিতীয়ত, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রশ্নে বিএনপি চুপ হয়ে গেছে। এর প্রধান কয়েকটি কারণ রয়েছে। এক. বিএনপি এখন আর নিজেদের মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের সহযোগী শক্তি হিসেবে দেশবাসীর সামনে পরিচয় দিতে চায় না। কারণ শুধু ধর্মভিত্তিক কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ছাড়া এ দেশের নতুন প্রজন্মের ভোটারদের কাছে প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক আদর্শ পছন্দনীয় নয়। দুই. বিএনপি তার চেয়েও বেশি উপলব্ধি করেছে যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ, বিশেষ করে ভারত, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি উষ্ণ আচরণ করবে না। সুতরাং বিএনপি নিজেদের প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির আধার হিসেবে যে বদনাম রয়েছে সেই দাগটি মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের গাঁটছড়ায় চিড় ধরার বিষয়টি অতিসম্প্রতি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রতিটি রায়ের পর জামায়াত হরতালের যে ডাক দিচ্ছে, তাতে বিএনপি কোন সমর্থন দিচ্ছে না। মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির আদেশ দেয়ার পরও বিএনপি মুখ খোলেনি। বিচারের রায়ের বিষয়ে কোন প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেনি। এমনকি সাবেক আমির গোলাম আযমের সাজা খাটা অবস্থায় বার্ধক্যজনিত মৃত্যুর পর বিএনপির কোন শীর্ষ নেতা তার জানাজায় অংশগ্রহণ করেননি। বিষয়টি ভাল চোখে দেখেনি জামায়াত। তারই বহির্প্রকাশ ঘটেছে গোলাম আযমের পুত্র আমান আযমীর মন্তব্যে। তিনি বিএনপিকে অকৃতজ্ঞ আখ্যা দিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘জামায়াতের সহযোগিতা ছাড়া বিএনপি ক্ষমতায় যেতে পারবে না।’ হয়ত বিএনপির প্রতি জামায়াতের খেদ আরও বেশি দেখা যেত। কিন্তু এই মুহূর্তে বিএনপির সঙ্গে গায়ে গা মিলিয়ে লেগে থাকা ছাড়া জামায়াতের কোন উপায় নেই। সেটা তারা ভালই বুঝতে পেরেছে। তাই বিএনপির সঙ্গে একাকার হয়ে থাকার পুরনো কৌশল আবারও দেখা গেছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাটোরের সমাবেশে। নাটোরের নবাব সিরাজউদ্দৌলা সরকারী কলেজ মাঠের জনসভা জামায়াতের কর্মীরা দখল করে নেয়। জামায়াতের ছাত্রসংগঠন শিবিরের নেতাকর্মীদের চাপের মুখে জনসমাবেশের সম্মুখভাগ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় যুবদল-ছাত্রদলের কর্মীরা। পিঠ বাঁচাতে পালাচ্ছে, ভারতেও জামায়াতী তৎপরতা ॥ সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে দলের অনেকে দেশ ত্যাগ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাকরির জন্য পাড়ি জমাচ্ছেÑ এমন খবর কিছুদিন ধরেই তৃণমূল থেকে জানতে পেরেছিল জামায়াত। কেউ কেউ রাজনীতি ছেড়ে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি নেয়ার চেষ্টা করছেন বলেও তথ্য আসে কেন্দ্রে। বাংলাদেশ সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে, এই আশঙ্কায় বহু কট্টর জামায়াতী মৌলবাদী নেতাকর্মী সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছে বলে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা আশঙ্কা করছেন। এই নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিএসএফকে সতর্কও করে দিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সতর্কবার্তা পেয়ে বাংলাদেশ-সীমান্তে নদীপথে বিএসএফ নজরদারিও বাড়িয়ে দিয়েছে। এমন তথ্য দিচ্ছে ভারতের সংবাদ মাধ্যমগুলো। ভারতীয় গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, খুলনা, চট্টগ্রাম এলাকায় ব্যাপক তৎপরতা চলছে। মূলত সাতক্ষীরা এলাকায় জামায়াতে ইসলামীর শক্তিশালী সংগঠন রয়েছে। সেখান থেকেই কট্টর মৌলবাদীরা নদী পেরিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করছে। কিন্তু ওই মৌলবাদীরা ভারতে প্রবেশ করলে এলাকার পরিস্থিতিও খারাপ হতে পারে বলে বিএসএফ এবং পুলিশ আশঙ্কা করছে। ভারতীয় গোয়েন্দাদের ধারণা, বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার যে মনোভাব নিয়ে এগোচ্ছে, তাতে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হতে পারে। সেই কারণেই মৌলবাদীরা নদী পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করছে। তারা আপাতত রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগনা দেগঙ্গা, হাসনাবাদ প্রভৃতি এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। কেউ কেউ দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং ও নামখানা এলাকায় প্রবেশ করেছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে খবর। বিএসএফ সূত্রে জানা গেছে, ইছামতী, কালিন্দী ও রায়মঙ্গল নদী দিয়ে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। তাই এই তিনটি নদীপথেই স্পিডবোটের মাধ্যমে নজরদারি চলছে। সামশেরনগর এলাকাটি নদী দিয়ে ঘেরা। এখান থেকে বাংলাদেশ খুবই কাছে। এই এলাকায় বিএসএফের একটি ভ্রাম্যমাণ সীমান্ত চৌকি আছে। এদিকে সাতক্ষীরা জেলাজুড়ে নারকীয় তা-ব ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত জামায়াতের শতাধিক শীর্ষনেতা দীর্ঘদিন ধরে ভারতে আত্মগোপন করে আছে বলে জানা গেছে। সাজানো আত্মীয়তার পরিচয় নিয়ে ওরা সাময়িক মাইগ্রেশন করে দেশের মধ্যেই একস্থান থেকে অন্যস্থানে আশ্রয় নিয়ে আছে আবার পুলিশ ও বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে মোস্ট ওয়ানটেড অনেক শীর্ষ জামায়াত নেতা দীর্ঘদিন ধরে ভারতে লুকিয়ে আছে। সাতক্ষীরা জেলার ১শ’ ২৮ কিলেমিটার এলাকায় সীমান্তে রয়েছে অবৈধপথে ভারতে যাতায়াতের নিরাপদ রুট। মানুষ পারাপার ও চোরাচালানের মাল পাচারের ঘাট হিসেবে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে দু’দেশের চোরাচালান ও পাচারকারী চক্র। মানুষ ও চোরাচালানি পণ্য পাচারের পাশাপাশি এসব ঘাট এখন জঙ্গীদের পারাপারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার ইছামতী নদী পার হলেই ভারত। সদর উপজেলার ভোমরা, ঘোজাডাঙ্গা লক্ষিদাড়ি, গাজিপুর, বৈকারী, কালিয়ানি ছয়ঘরিয়া, তলুইগাছা; কলারোয়ার চান্দুড়িয়া, চন্দনপুর, ভাদিয়ালি, কাকডাঙ্গাসহ শতাধিক ঘাট রয়েছে অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে। অপরাধ সংঘটনের পর এসব ঘাট দিয়ে জঙ্গীরা অবাধে দু’দেশের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে ভারতে জঙ্গী কর্মকা-ে জামায়াতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) ষড়যন্ত্রে জামায়াতে ইসলামীও জড়িত এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে ভারতীয় তদন্তেও। জেএমবি ছাড়াও উলফাসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের একাধিক জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে জামায়াত। পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনআইএ) তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য রয়েছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের জামায়াতুল মুজাহেদিনের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে শামিল বাংলাদেশের মৌলবাদী সংগঠন জামায়াতে ইসলামীও। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে নাশকতার পরিকল্পনা ছাড়াও উলফাসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের একাধিক জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী যোগাযোগ রাখছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শেরপুর জেলার বিভিন্ন ঘাঁটিতে চলছে জঙ্গী প্রশিক্ষণ। পাকিস্তানী প্রশিক্ষকরা এসব ঘাঁটিতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এ রকম দুটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং সেখানকার প্রশিক্ষকদের নামও উল্লেখ করা হয়েছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। তাহলে কোন্ পথে জামায়াত? স্বাধীনতার পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জামায়াত নিষিদ্ধ ছিল। নিষিদ্ধ করেছিল বঙ্গবন্ধুর সরকার। পরে জিয়ার সরকার এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেন। প্রথম দিকে তারা ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক লীগ (আইডিএল) নামে তাদের কার্যক্রম চালায়। পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমানের সরকারের তথাকথিত গণতন্ত্র চালু করলে জামায়াতে ইসলামী আবারও রাজনীতি করার সুযোগ পায়। সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জামায়াত নিষিদ্ধ হলে ভিন্ন কোন নামে কার্যক্রম চালাবে দলটি। এ ক্ষেত্রে একজন সিনিয়র আইনজীবী নেতার তত্ত্বাবধানে একটি প্রতিনিধি দল কাজ করছে। দলের একটি অংশ মনে করে, নতুন নামে নতুনভাবে এলে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতার মতো গালমন্দ থেকেই রেহাই পাওয়া যাবে। তবে নেতাকর্মীরা অপেক্ষা করছেন জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত। ইতোমধ্যে নামও চূড়ান্ত হয়ে গেছে বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। যদিও জামায়াত সরাসরি এসব তথ্য স্বীকার করছে না। নতুন সংগঠনের নাম-ইসলামী লিবারেল পার্টি-আইএলপি হতে পারে বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় জামায়াতের ভবিষ্যত রাজনীতি নিয়ে কৌতূহল চারদিকে। ২০১১ সালে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক পত্রিকায় লেখা এক কলামে নিজের রাজনৈতিক ভাবনা প্রকাশ করেছিলেন। ওই লেখায় তিনি লিখেছিলেন, ভারতে ৬০ বছরের জামায়াত তার নাম পরিবর্তন করে ওয়েলফেয়ার পার্টি অব ইন্ডিয়া নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে পুরনো জামায়াতের ব্যর্থতার কারণে। ভারতের নতুন দলটিতে ১৬ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ক্যাথলিক খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের একজন ফাদারসহ ৫ অমুসলিমকে রাখা হয়। জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান কারাগার থেকে লেখা এক চিঠিতে দলে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছিলেন। ওই চিঠিতে তিনি নতুন নামে দল গঠনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। চিঠিতে গণতান্ত্রিক ধারায় রাজনীতি অব্যাহত রাখতে বর্তমানে কার্যকর নেতাদের পরামর্শ দেয়া হয়।
×