ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চবিতে ছাত্রলীগ থামাতে নাছির ও মহিউদ্দিনকে হাসিনার কঠোর নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ১৩ নভেম্বর ২০১৪

চবিতে ছাত্রলীগ থামাতে নাছির ও মহিউদ্দিনকে হাসিনার কঠোর নির্দেশ

মোয়াজ্জেমুল হক/মহসিন চৌধুরী ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার দিনব্যাপী চট্টগ্রাম সফরে এসে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের তিন ব্যাটালিয়নকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান করেছেন। উদ্বোধন করেছেন নগরীর মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ৫ কিলোমিটারেরও বেশি ‘আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু’ ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ। বলেছেন, বাংলাদেশ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদমুক্ত হয়েছে। নির্দেশ দিয়েছেন এখনই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সচল করতে। বলেছেন, যে ছাত্রলীগ অশান্তি সৃষ্টি করে সে ছাত্রলীগের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজনে এদের বহিষ্কার করার নির্দেশ দিয়েছেন। কড়া ভাষায় আওয়ামী লীগ নেতাদের শাসিয়েও দেন। প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে কঠোর মনোভাব দেখিয়ে আরও বলেছেন, কোনভাবেই এ বিশ্ববিদ্যালয়কে অচল করতে দেয়া হবে না। চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ॥ সকাল ১০টায় হেলিকপ্টারযোগে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম সেনানিবাসে অবতরণ করেন। প্রথমে যোগ দেন চট্টগ্রাম সেনানিবাসে সেখানে সেনাবাহিনীর ৩৪, ৩৬ ও ৩৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান করেন। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত দেশে পরিণত হবে। এ লক্ষ্যে তাঁর সরকার রূপকল্প অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছে। তাই সেনাবাহিনীকেও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দক্ষ, সুশৃঙ্খল এবং শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে ফোর্সেস গোল-২০৩০ চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেনাবাহিনীকে আত্মনির্ভরশীল এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে সরকার মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে পরিণত করতে চায়। এ জন্য সকলের মিলিত শক্তি দিয়ে এদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৩৪, ৩৬ এবং ৩৮ ব্যাটালিয়নের কুচকাওয়াজ পরিদর্শনের পর সেনাবাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তা ও সৈনিকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, সশস্ত্র বাহিনী দেশের ঐক্য এবং সার্বভৌমত্বের প্রতীক। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে অবদান রেখেছে। সৌম্য, শক্তি, ক্ষিপ্রতাÑএ মূলমন্ত্রে দীক্ষিত ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবময় এবং ঐতিহ্যপূর্ণ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চেয়েও এ রেজিমেন্টের ইতিহাস পুরনো। তারা শুধু দেশের অখ-তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেনি, পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে দুর্যোগময় মুহূর্তে মানবতার সেবায় পাশে দাঁড়িয়েছেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলে কাজ করছে। জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলা, দেশের অবকাঠামোর উন্নয়ন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকা প্রণয়ন, জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সহযোগিতা প্রদান, গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়ন ও সেবামূলক কর্মকা-ে সশস্ত্র বাহিনী সদস্যদের অবদান রয়েছে। দেশের বাইরেও জাতিসংঘের মিশনে বাংলাদেশের অবস্থান উজ্জ্বল করেছে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। সেবা এবং কর্তব্য পরায়ণতায় তারা জাতির আস্থা অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মাটি এবং মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছেন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দুই বীর সেনানী। বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল ও বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোহাম্মদ হামিদুর রহমান। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের উদ্বোধন ॥ বেলা সোয়া ২টায় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের বৃহত্তম ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজের উদ্বোধনী ঘোষণা দিয়ে বলেন, এ ফ্লাইওভার আগামীতে পতেঙ্গা বিমানবন্দর পর্যন্ত বিস্তৃত করা হবে। আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ফ্লাইওভার নামে ৫ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ এ ফ্লাইওভার উদ্বোধনের স্থান ছিল মুরাদপুরে। দশ মিনিটব্যাপী এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, চট্টগ্রামের সঙ্গে আমার আত্মার আত্মীয়তার সম্পর্ক। বর্তমান সরকার চট্টগ্রামকে প্রকৃত অর্থে দ্বিতীয় রাজধানীর মর্যাদা দিতে কাজ করে চলেছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামবাসীকে কথা দিয়েছিলাম এ নগরীকে বাণিজ্যিক রাজধানীতে পরিণত করা হবে। আর সে কারণে চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব আমি নিজ হাতে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছি। চট্টগ্রাম হবে প্রকৃত বাণিজ্যনগরী। সরকারের এ কার্যক্রমে তিনি চট্টগ্রামবাসীর সহযোগিতা চান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চার লেনের কাজ এগিয়ে চলছে। ভবিষ্যতে এটা ছয় লেনে উন্নীত করা হবে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়ে গেছে। মহেশখালির মাতারবাড়িতে এলএনজি টার্মিনাল ও বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। বাংলাদেশ এখন ১১ হাজার ৭৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বিশাল সমুদ্রসীমা বিজয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সমুদ্রসম্পদকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছি। খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, দেশে খাদ্যাভাব দূর হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন এত বেশি হয়েছে যে, বাংলাদেশ এখন খাদ্য রফতানিও করছে। ইতোমধ্যে শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশ থেকে চাল রফতানি হয়েছে। বাংলাদেশের একজন মানুষও খাদ্য ছাড়া থাকবে না বলে তিনি জানান। বাসস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এদেশের সকল মানুষ একটি করে ঘর পাবে। সকলের জন্য ঘরের সংস্থান করা হবে। চবি পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর মনোভাব ॥ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সকালে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নির্ধারিত অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে ইবিআরসি প্রশিক্ষণ মাঠে আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার আগে ও পরে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন উপস্থিত মন্ত্রী, এমপি ও চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন সাংঘাতিক ক্ষুব্ধ। তিনি উপস্থিত দলীয় নেতাদের উদ্দেশ করে বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ছাত্রলীগ অশান্তির সৃষ্টি করবে সে ছাত্রলীগের প্রয়োজন নেই। অশান্তি সৃষ্টিকারীদের প্রয়োজনে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেন তিনি। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কোনভাবেই অচল করা যাবে না। এখানে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে উপস্থিত নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনকে নির্দেশ দেন। তিনি দুজনের ওপরই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি এখনই স্বাভাবিক করার ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে এসব নির্দেশনা দেয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, এমপি ড. হাছান মাহমুদ, এমপি ডাঃ আফসারুল আমিন, এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, এমপি মাঈন উদ্দিন খান বাদল, এমপি শামসুল হক চৌধুরী, এমপি মোস্তাফিজুর রহমান, এমপি আবু রেজা নদভী, এমপি ওয়াসিকা এ খান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ সালাম, দক্ষিণ জেলা সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। অনতিদূরে ছিলেন চবি ভিসি অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদ-উল-আযহার দীর্ঘ ছুটি শেষে খোলার পর পরই গত ১০ নবেম্বর ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের অন্তর্কোন্দলে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। মূলত আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং আ জ ম নাছির গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এ ঘটনা চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এর আগে শিবিরের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের পর শিবির ক্যাম্পাস ছাড়া হয়েছে। এখন ছাত্রলীগ নিজেদের মধ্যে অন্তর্কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয় পর্যবেক্ষণে রেখেছিলেন। বুধবার দলীয় নেতাদের কাছে পেয়ে তাঁর কঠোর মনোভাব জানিয়ে দিলেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতিতে। সেনানিবাসে মধ্যাহ্নভোজের আগে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনকে কাছে পেয়ে জানতে চান, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে কারা? প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বললেন এসব নাকি তোমার ছেলে। জবাবে আ জ ম নাছির অস্বীকার করে জানালেন, মহিউদ্দিন ভাইয়ের কর্মীরা বিশৃঙ্খলা করছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে থামিয়ে ধমক দিয়ে বলেন, ‘আমি কিছুই শুনতে চাই না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে কোনভাবেই অচল করা যাবে না। ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ রক্ষার জন্য সকল দায়দায়িত্ব তোমার (নাছির)। এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ কর। আর দু’জনে মিলেই কাজ কর। কোন প্রকার ব্যর্থতা সহ্য করা হবে না।’ প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনে আ জ ম নাছির তাৎক্ষণিক চবি ভিসি, এসপির সঙ্গে কথা বলেন। মধ্যাহ্নভোজ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেষে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করার আগে চবি পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে তিনি আবারও আওয়ামী লীগের উপস্থিত সকল নেতাকে ডাকেন। প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন ও আ জ ম নাছিরকে সামনাসামনি ডেকে নিলেন। জানিয়ে দিলেন চবি পরিস্থিতি সম্পর্কে সকলের সামনে তাঁর কঠোর মনোভাবের কথা। বললেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ যা করছে তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যে ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্তি সৃষ্টি করে এমন ছাত্রলীগের প্রয়োজন নেই। চিহ্নিত করে তাদের দল থেকে বহিষ্কারের নির্দেশও দেন তিনি। ছাত্রলীগের মধ্যে অন্তর্কোন্দলের বিষয়টি নিজের এলাকা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ সালাম। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকা গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বিষয়টি সমাধা করার জন্য মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছিরকে অনুরোধ জানালেন প্রধানমন্ত্রীর সামনে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে উদ্দেশ করে এখনই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্বাভাবিক করতে নির্দেশ দেন। মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় অশান্তির পেছনে কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে জানালেন, ‘কিভাবে সমাধান হবে? ভিসি সাহেব নিজেই ব্যবসায়ী।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহিউদ্দিন চৌধুরীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি মুরব্বি মানুষ, আপনাকে সম্মান করি। আপনারা মিলেমিশে বিশ্ববিদ্যালয় সচল রাখুন।’ মহিউদ্দিনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথোপকথনের সময় আ জ ম নাছির বার বার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সচলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে প্রধানমন্ত্রীকে নিশ্চয়তা দিতে থাকেন। তিনি এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করবেন বলে জানিয়ে দেন। পাশাপাশি সকলে মিলেই এ বিশ্ববিদ্যালয় স্বাভাবিক রাখবেন বলে প্রধানমন্ত্রীকে নিশ্চয়তা প্রদান করেন। উপস্থিত মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতারা আ জ ম নাছিরকে বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী সচল রাখতে তাগাদা দেন। মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির দু’জনকেই বার বার একযোগে কাজ করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের কথোপকথনের সময় নিকটেই অবস্থান করছিলেন চবি ভিসি প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ, চট্টগ্রামের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম এবং এসপি হাফিজ আকতার। এসপি হাফিজ আকতার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এবং অবস্থান সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবেই আ জ ম নাছিরের কাছে জানতে চান। চবি ভিসি আনোয়ারুল আজিম আরিফও বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরার পদক্ষেপ নিতে তারা পরামর্শ দেন। আ জ ম নাছির জনকণ্ঠকে জানান, নেত্রী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সচল রাখতে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্তি সৃষ্টিকারী ছাত্রলীগ কর্মী নামধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তার অনুগতরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে এমন বক্তব্য অস্বীকার করেন। বিশৃঙ্খলাকারীরা বহিরাগত বলে তিনি দাবি করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আনোয়ারুল আজিম আরিফ জনকণ্ঠকে জানান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সচল করতে প্রশাসন সব সময় চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের সহায়তা পেলে চবিতে শিক্ষার পরিবেশ স্বাভাবিক থাকবে। তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
×