ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপি নেতা খোকন রাজাকারের মামলার রায় আজ

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ১৩ নভেম্বর ২০১৪

বিএনপি নেতা খোকন রাজাকারের মামলার রায় আজ

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র ও পলাতক বিএনপি নেতা জাহিদ হোসেন খোকন ওরফে খোকন রাজাকারের মামলার রায় আজ বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে। একাত্তরে হত্যা, ধর্ষণ, ধর্মান্তরে বাধ্য করা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের ১১টি অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এ পর্যন্ত ১১টি মামলায় ১২ জনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-সহ বিভিন্ন দ- প্রদান করেছেন। বিএনপি নেতা খোকন রাজাকারের রায়টি হবে ট্রাইব্যুনালের ১২তম রায়। আর ট্রাইব্যুনাল-১ এর হবে এটি পঞ্চম রায়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এর আগে সাতটি রায় প্রদান করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এর আগে যেসব রায় দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম আজাদ (মৃত্যুদ-), কাদের মোল্লা (আমৃত্যু কারাদ- (আপীলে মৃত্যুদ-, পরবর্তীতে রায় কার্যকর), দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (মৃত্যুদ-) আপীলে আমৃত্যু কারাদ-, কামারুজ্জামান (মৃত্যুদ-) আপীল বিভাগেও মৃত্যুদ- বহাল, গোলাম আযম (৯০ বছরের কারাদ-) অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ (মৃত্যুদ-), সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (মৃত্যুদ-), আব্দুল আলীম (আমৃত্যু করাদ-) অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ, চৌধুরী মাঈনুদ্দিন এবং চীফ মোঃ আশরাফুজ্জামান খান (মৃত্যুদ-), মতিউর রহমান নিজামী (মৃত্যুদ-) মীর কাশেম আলী (মৃত্যুদ-)। বর্তমানে দুটি ট্রাইব্যুনালে আরও তিনটি মামলা রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় পার্টির নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার, আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত মোঃ মোবারক হোসেন ও জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজাহারুল ইসলাম। খোকন রাজাকার মামলার তদন্ত শুরু হওয়ার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, খোকন রাজাকারের ছেলে লিনকন, মেয়ে সামছুন্নাহার বেগম ও জামাতা মোঃ বদিউজ্জামান শেখ সুইডেনের বসবাস করছেন। সেখানেই খোকন রাজাকার বহাল তবিয়তে রয়েছেন। সেখানকার ঠিকানা ব্রিড্যানগভাগেন, এপার্টমেন্ট ১০০১,১২৭ ৩২ সার্কহোলমেন, স্টকহোম সুইডেন। টেলিফোন নাম্বার ০৮-৩৮৬৮২৯। খোকন রাজাকারের ছেলে সম্প্রতি যুবদল সুইডেন শাখার সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। মামলার কার্যক্রম ॥ খোকন রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয় ২০১২ সালের ১২ এপ্রিল। তদন্ত শেষ হয় ২০১৩ সালের ২৮ মে। তদন্ত সংস্থা দীর্ঘ তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ১৩টি অভিযোগ দখিল করে প্রসিকিউশন শাখায়। ২০১৩ সালের ১৮ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল খোকন রাজাকারের অভিযোগ আমলে নেন। আসামিকে হাজির হওয়ার জন্য একই বছরের ৩০ জুলাই দৈনিক জনকণ্ঠসহ দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। আসামি হাজির না হওয়ায় তার অনুপস্থিতিতেই ২০১৩ সালে ১৪ আগস্ট খোকন রাজাকরের বিচার শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট রাষ্ট্রীয় খবচে আইনজীবী নিয়োগ। ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল খোকন রাজাকারের বিরুদ্ধে ১১টি চার্জ গঠন করেন। ১৯ নবেম্বর তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ২০১৪ সালের ২ এপ্রিল খোকন রাজাকারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল থেকে যুক্তিতর্ক শুরু হয়। যুক্তিতর্ক শেষে ১৭ এপ্রিল রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়। যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় খোকন রাজাকার ফরিদপুরে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন তাঁর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষীরা সাক্ষ্যপ্রদান করেছেন। যারা সাক্ষী দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আবুল কাশেম, কানাইলাল ম-ল, মোঃ ইকরামুল হক মোল্লা, আব্দুল হাই মোল্লা, ইউসুফ মোল্লা, ইদ্রিস সরদার, আব্দুল আজিজ মাতুব্বর, মোঃ জাফিজুর রহমান চান, আলাউদ্দিন শেখ, রবীন্দ্র নাথ দত্ত, জগন্নাথ দত্ত, হান্নান মুন্সি, রমেশ চন্দ্র রায়, মোঃ আবুল কাশেম মাতুব্বার, আব্দুস সালাম মাতুববর, মোঃ কলম শেখ, মোঃ ইয়াকুব আলী মোল্লা, মোঃ চুন্নু শেখ, এক ভুক্তভোগী নারীর ক্যামেরা ট্রায়াল, গফুর মোল্লা, মঞ্জু আরা বেগম, বতু মিয়া, জীবন কৃষ্ণ দাশ, তদন্ত কর্মকর্তা সত্য রঞ্জন দাশ। যুক্তিতর্ক ॥ খোকন রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবীর যুক্তিতর্ক (আগুমেন্ট) শেষে ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়। প্রসিকিউশন পক্ষের প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ১৩,১৪ ও ১৫ এপ্রিল যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। পরে ১৭ এপ্রিল মোখলেসুর রহমান বাদল পাল্টা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এর পর ১৬ ও ১৭ এপ্রিল খোকন রাজাকারের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আব্দুস শকুর। যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল বলেন, জাহিদ হোসেন খোকন ওরফে খোকন রাজাকারের অপরাধ এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, তার হাত থেকে শিশু, বৃদ্ধ, নারী কেউই রক্ষা পায়নি। তার অপরাধের নৃশংসতা সভ্যতার জঘন্যতম নৃশংসতাকেও হার মানিয়েছে। নৃশংসতম অপরাধের এসব অভিযোগ প্রসিকিউশন সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছেন দাবি করে প্রসিকিউটর বাদল খোকন রাজাকারের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-াদেশ দেয়ার আরজি জানান ট্রাইব্যুনালের কাছে।
×