ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধূলিসাত করেছেন জিয়া

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১৩ নভেম্বর ২০১৪

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধূলিসাত করেছেন জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, জিয়াউর রহমানই শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধূলিসাত করেছেন। এরপর বেগম খালেদা জিয়া জামায়াতের দুই নেতার গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশে প্রতিহিংসার রাজনীতি চলছে। জাতীয় সংসদের মধ্যেই গণতন্ত্র আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় আনার মাধ্যমে এদেশ থেকে প্রতিহিংসার রাজনীতি দূর করতে হবে। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বুধবার বিকেলে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে এ কথাগুলো বলেন। প্রায় ১৬ বছর পর চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত জাতীয় পার্টির এ মহাসমাবেশে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৫ জেলা থেকে জনসমাগম ঘটানো হয়। জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন ঠিক। কিন্তু তিনিই পরে বিচ্যুত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধূলিসাত করে দিয়েছেন। শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী এবং আরও দুই রাজাকারকে জিয়া মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়েছিলেন। পরে বেগম খালেদা জিয়া আরও একধাপ এগিয়ে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদকে মন্ত্রী বানিয়ে তাঁদের গাড়িতে পতাকা তুলে দেন। বেগম জিয়ার এ কাজের সমালোচনা করে এরশাদ বলেন, আমি কোন রাজাকারকে মন্ত্রী করিনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সত্যিকারের জাতীয়তাবাদী দল জাতীয় পার্টি। এ পার্টির পতাকাতলে সমবেত হয়ে জাতীয় স্বার্থকে উর্ধে তুলে ধরতে হবে। মহাসমাবেশের বক্তব্যে এরশাদ বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সমালোচনা করে বলেন, প্রায় ২৪ বছর আগে আমি ক্ষমতা ছেড়েছিলাম। এ দেশে গণতন্ত্রের জন্য আর কোন সংগ্রাম ও রক্ত ঝরবে না এটিই আশা ছিল। কিন্তু এরপর শুরু হয়েছে প্রতিহিংসার রাজনীতি। জাতীয় পার্টি প্রতিহিংসার রাজনীতি, হরতালের রাজনীতি ও সন্ত্রাসের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। নিজ শাসনামলের কর্মকা-ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি উপজেলা পরিষদ সৃষ্টি করেছিলাম। উপজেলা পর্যায়ে আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরের সরকার এ পদ্ধতি বাতিল করেছে। উপজেলা চেয়ারম্যানকে ক্ষমতাহীন করা হয়েছে। প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদে ক্ষমতায়ন করতে হবে। জাতীয় পার্টি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে দেশে প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে। এই চট্টগ্রাম হবে একটি প্রদেশ। চট্টগ্রামের উন্নয়নে তাঁর সরকারের ভূমিকা প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, আমিই কর্ণফুলী নদীর ওপর সেতু প্রতিষ্ঠা করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে মহানগরীকে যুক্ত করেছিলাম। চট্টগ্রামে আমার সরকারের আমলেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দুটি সার কারখানা। দেশের উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি জাতীয় পার্টিকে আবারও ক্ষমতায় আনার আহ্বান জানান। জাতীয় পার্টির চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির আহ্বায়ক মাহজাবীন মোরশেদ এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু, এমএ হান্নান এমপি, এ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন কমিটির নেতৃবৃন্দ। ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০১৯ সালে। এদেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পার্টিকে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠিত করার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। পার্টির মহাসচিব জিয়া উদ্দিন বাবলু বলেন, জনগণ এ দুই দলের শাসন থেকে মুক্তি চায়। এ দুই দলকে দেশের মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এ দেশের মানুষ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের উন্নয়নের জন্য হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টিকেই ক্ষমতায় আনবে। দলের নেতাকর্মীদের সংগঠিত হওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ নিয়ে প্রায় মাস ধরে পাল্টাপাল্টি অবস্থান ছিল স্থানীয় নেতাদের মধ্যে। সোলায়মান আলম শেঠ মহানগর কমিটির সভাপতির পদ থেকে বাদ পড়ার পর তার অনুসারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় মাহজাবীন মোরশেদ এমপিকে। আর নতুন আহ্বায়কের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া অংশটি এরশাদের মহাসমাবেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তবে বুধবারের মহাসমাবেশে সোলায়মান আলম শেঠের অনুসারী ছোট একটি গ্রুপ মাহজাবীন মোরশেদের বিরুদ্ধে মিছিল করলেও বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয় এরশাদের মহাসমাবেশ।
×