ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকার পরিবহন

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ১৩ নভেম্বর ২০১৪

ঢাকার পরিবহন

দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীসহ দেশের গণপরিবহন ব্যবস্থার সময়োপযোগী ও এর আধুনিকীকরণ করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছেÑ এমনটাই অভিমত ব্যক্ত করে আসছেন সংশ্লিষ্টরা। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে নাগরিক সেবা প্রদানে পরিবহন অন্যতম মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত। আমাদের এখানে পরিবহন ব্যবস্থা অবকাঠামোগতভাবে ততটা উন্নতি সাধন করতে পারেনিÑ উপরন্তু যথাযথ আইনকানুন ও নিয়মনীতি না মেনে চলায় পরিবহন ক্ষেত্রে নানা সমস্যা বিরাজ করছে। এসব সমস্যার কারণে সাধারণ মানুষকে নানা রকম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। সময় এসেছে এসব সমস্যা ও ভোগান্তি থেকে মুক্তি লাভের। মানুষ আনন্দে দিন কাটাতে চায়Ñ চায় মুক্ত নিরাপদ স্বাধীন ও স্বচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে। জানা যায়, পরিবহন খাতে বিরাজমান অনিয়ম, সমন্বয়হীনতা ও অব্যবস্থার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু চক্র এ খাতে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারায় ব্যস্ত। তারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়। দেশের সড়কপথগুলো এসব চক্রের হাতে জিম্মি। সড়ক পরিবহন খাতে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার সাধারণ মানুষ নিরাপদ সড়ক পেতে রাজপথে নামছে। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারায়, আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে অনেকেই। সাধারণ মানুষ পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন চাইলেও পরিবহন ব্যবসায় যুক্ত ব্যবসায়ীরা সেদিকে খুব একটা গা করে না। তাদের অনেকেই প্রশাসনের নাকের ডগায় আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে লক্কড়-ঝক্কড়, ফিটনেসবিহীন মোটরযান, অবৈধ যানবাহন এবং লাইসেন্সবিহীন চালক দিয়ে গাড়ি চলাচল করিয়ে মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। ‘একটি মৃত্যু একটি পরিবারের সারা জীবনের কান্না’Ñ এমন মানবিক বিষয়টিও পরিবহন খাতের অসাধু চক্রটিকে সজাগ করে না। মঙ্গলবার সহযোগী এক দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সড়কপথে কঠোর তদারকি শুরু করে। সারাদেশে ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও লাইসেন্সবিহীন গাড়িচালকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার লক্ষ্যে বিআরটিএ মঙ্গলবার থেকে অভিযান পরিচালনা করে। বিলম্বে হলেও এ অভিযানকে পরিবহন মালিকদের একটি অংশ স্বাগত জানিয়ে বলেছে, সড়ক দুর্ঘটনারোধ ও সড়ক ব্যবস্থাপনার স্বার্থে এটি একটি জরুরী পদক্ষেপ। তবে পরিবহন খাতের অসাধু চক্রটি এ অভিযানের ফলে বেকায়দায় পড়ে যায়। ফলে রাজধানীসহ সারাদেশের সড়কপথে যানবাহনের সংখ্যা অনেকাংশে কমে যায়। ফিটনেসবিহীন ও অবৈধ মোটরযান, ভুয়া লাইসেন্সধারী গাড়ি চালকদের একটি বড় অংশ এ অভিযানে গৃহবন্দী হয়ে পড়ে। বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে জানা যায়, অভিযানের প্রথম দিনে রাজধানীর ৩টি স্থানে অভিযান চালিয়ে ৭৭টি মামলা এবং ৯৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এ ছাড়া একজন গাড়িচালককে ৫ দিনের জেল, একটি গাড়ি ধ্বংস ও ২টি গাড়ি ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়েছে। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে পরিবহন খাত লাভজনক সেক্টর। বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম। তাঁরা বলছেন, দেশের পরিবহন খাত যদি সুশৃঙ্খল নীতিমালা ও নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যে পরিচালিত হয় তাহলে মানুষ তাদের প্রাপ্য নাগরিক সেবা ভোগ করতে পারে। পরিবহন খাতকে একটি নীতিমালার মধ্যে নিয়ে আসতে পারলে দেশের মানুষ উপকৃত হবেÑ একই সঙ্গে এ খাত থেকে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয়ের সংস্থানও হবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশাবাদ ব্যক্ত করছেন।
×