ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সার্কভুক্ত দেশে অভিন্ন মুদ্রা চালুর উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ১৩ নভেম্বর ২০১৪

সার্কভুক্ত দেশে অভিন্ন মুদ্রা চালুর উদ্যোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ফুলবাড়ি বাণিজ্যপথ দিয়ে উভয় দেশের নাগরিকদের যাতায়াত ব্যবস্থা চালুর ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এবার সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অভিন্ন মুদ্রা (কমন কারেন্সি) চালু করার চিন্তা-ভাবনাও শুরু হয়েছে। ওই সীমান্তপথে বাসিন্দাদের যাতায়াত ব্যবস্থা চালুর ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে এসে এ কথাই জানিয়েছেন বাংলাদেশে থাকা ভারত, নেপাল এবং ভুটানের হাইকমিশনাররা। গত মঙ্গলবার শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে ফুলবাড়ি সীমান্ত ঘুরে দেখেন সার্কভুক্ত চারটি দেশের প্রতিনিধিরা। সঙ্গে ছিলেন জলপাইগুড়ির জেলা শাসক পৃথা সরকার এবং শিলিগুড়ির মহকুমা শাসক দীপাপ প্রিয়া। সোমবার শিলিগুড়িতে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ওই সীমান্তপথে যাতায়াত ব্যবস্থা চালু নিয়ে বৈঠকে যে সমস্ত প্রস্তাব পাওয়া গেছে তার মধ্যে একই মুদ্রা চালু করার কথাও উঠে এসেছে বলে স্বীকার করেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ। তিনি বলেন, ‘এই ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব আগে থেকেই ছিল। নতুন করে বৈঠকেও আলোচনা করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে শীঘ্রই ঠিক করা হবে।’ কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এদিন সকাল আটটায় শিলিগুড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে ফুলবাড়ি সীমান্ত এলাকায় যায় দলটি। তার মধ্যে ভুটানের হাইকমিশনার পেমা চোডেন, নেপালের হাইকমিশনার হরিকুমার শ্রেষ্ঠাসহ বিদেশ মন্ত্রকের কয়েকজন কর্তা ছিলেন। তাঁরা পরিকাঠামো খতিয়ে দেখেন। আলাদা করে তাঁরা শুল্ক দফতর, অভিবাসন দফতর এবং সীমা সুরক্ষা দলের কর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেন। এরপর সেখান দিয়েই বাংলাদেশে চলে যান। ওপারে দলটিকে অভ্যর্থনা জানাতে হাজির ছিলেন বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল। এদিন ভারতীয় হাইকমিশনার শরণ অভিন্ন মুদ্রা চালুর ব্যাপারে জোর দেন। বাকি প্রস্তাবের সঙ্গে মুদ্রার বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের কাছে পাঠানো রিপোর্টে আলাদা করে জোর দেয়া হবে বলে তিনি জানান। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরাও এই বিষয়টি চালুর দাবিতে তাঁদের কাছে জোরালো সওয়াল করেছেন বলে জানান। এই ব্যবস্থা চালু না থাকায় প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের সঙ্গে ভারতের লেনদেনের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ী সংগঠন ফোসিনের সদস্যরা। বিশেষ করে নেপাল ও ভুটানি মুদ্রা ভারতে ভাঙ্গানোর ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয় বলে জানানো হয়। ভুটান ও নেপালের সঙ্গে ভারতের ব্যবসায়িক সম্পর্ক আর পাঁচটা দেশের মতো নয়। তাই সেসব দেশের অর্থ ভাঙ্গিয়ে লাভ হয় না বলে দাবি করেন ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিত দাস। তিনি বলেন, ‘ভারতের কোন বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র বা ব্যাঙ্ক এই সমস্ত দেশের মুদ্রা ভাঙ্গিয়ে দিতে চায় না। সে কারণে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে সাধারণ মুদ্রার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’ এর আগে প্রণব মুখোপাধ্যায় অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে ‘ইউরো’র ধাঁচে অভিন্ন মুদ্রা চালুর ব্যাপারে আলোচনা হয়েছিল বলে বিশ্বজিত বাবু জানান। তবে তখন বিষয়টি বেশিদূর এগোয়নি। এবার নতুন উদ্যোগে আশাবাদী ফোসিন। দিনাজপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, মঙ্গলবার রাতে দিনাজপুর চেম্বারের সঙ্গে মতবিনিময় করেন চার দেশের রাষ্ট্রদূত। এ সময় ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ বলেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের অসমতা কমিয়ে আনতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। যেন অধিকসংখ্যক পণ্য রফতানি করা যায় সেক্ষেত্রে মান ও গুণ বজায় রাখা অপরিহার্য। অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্র প্রস্তুত হওয়ার পর বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি স্থলবন্দরের কার্যক্রম শুরু হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে মস্তবড় ব্যবধান রয়েছে। যে কোন পণ্য ভারতে রফতানি করার পূর্বে নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মান ও গুণ সম্পর্কে নিশ্চিত হলে তারপর রফতানি কার্যক্রম শুরু করা হয়। নেপালের রাষ্ট্রদূত হরি কুমার শ্রেষ্ঠা বলেন, এই অঞ্চলের ৪টি দেশের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের যে সম্ভাবনা রয়েছে তাকে কাজে লাগাতে হবে। আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে সড়ক ও রেলপথের গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতের রাধিকাপুর আর বাংলাদেশের বিরলের মাধ্যমে নেপালের বাণিজ্য সম্প্রসারণে রেলের উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ভুটানের রাষ্ট্রদূত প্রেমা চোডেন বলেন, ভুটান বাংলাদেশের ৯০টি পণ্যের প্রবেশাধিকার শুল্কমুক্ত করেছে। পারস্পরিক সহযোগিতা ও আলোচনার মাধ্যমে ৪ দেশের বাণিজ্যক্ষেত্রে একযোগে কাজ করার সুযোগকে সময়মতো ব্যবহার করতে পারলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। চেম্বারের সভাপতি মোঃ মোসাদ্দেক হুসেনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় নেপালের রাষ্ট্রদূত হরি কুমার শ্রেষ্ঠা, ভুটানের রাষ্ট্রদূত প্রেমা চোডেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক জাহিদ-উল-ইসলাম, জেলা প্রশাসক আহমদ শামীম আল রাজী, পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, চেম্বারের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম, বাংলাহিলি আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন-উর-রশিদ ও বিরল স্থলবন্দর কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন বক্তব্য রাখেন। চেম্বারের সিনিয়র সহসভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য দেন। চেম্বারের পক্ষ থেকে ৩ বিদেশী অতিথিকে ক্রেস্ট ও ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। এর আগে অতিথিবৃন্দ দিনাজপুরের ঐতিহাসিক কান্তজীর মন্দির পরিদর্শন করেন। অতিথিবৃন্দ কান্তজী মন্দিরকে আন্তর্জাতিকমানের পর্যটন হিসেবে গড়ে তুলতে সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন এবং বিভিন্ন দিক ঘুরে দেখেন।
×