ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রস্তুতি ম্যাচে ৮৮ রানে জয়ী বিসিবি একাদশ

এবার পেসেই কাত জিম্বাবুইয়ে

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ২০ নভেম্বর ২০১৪

এবার পেসেই কাত জিম্বাবুইয়ে

মিথুন আশরাফ, চট্টগ্রাম থেকে ॥ পেসার আবুল হাসান রাজুকে কী তাহলে আবারও জাতীয় দলে দেখা যাবে? ১০ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান যে মাত্র ১৬ বলেই চার ছক্কা হাঁকিয়ে ৩৩ রান করে বসেছেন। আর জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে বল হাতেও দেখিয়েছেন ঝলক। ২ উইকেট নিয়েছেন। শুধু কী রাজুই, চট্টগ্রামে দুই ওয়ানডের দলে না থাকা নাসির হোসেনের নাম ঢাকায় তিন ওয়ানডের দলে থাকলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। তার ৬১ রানেই যে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে বিসিবি একাদশ ২৮২ রান করতে পেরেছে। জয়ও এসেছে ৮৮ রানের বড় ব্যবধানেই। যে জিম্বাবুইয়ে দলের ব্যাটসম্যানদের এত ভয় বাংলাদেশের স্পিনে, অথচ তারাই বুধবার বিসিবি একাদশের পেসারদের কাছে হার মেনেছে। স্পিনারদের ছাপিয়ে পেসাররাই জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানদের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছেন। ১০ উইকেটের ৭টিই পেসাররা তুলে নিয়েছেন। তিনটি নিয়েছেন স্পিনাররা। তাইতো ২৮ ওভারের আগে স্পিনার দিয়ে বলই করায়নি বিসিবি একাদশ। ম্যাচ শেষে দেখা গেছে জিম্বাবুইয়ে ১৯৪ রানের বেশি করতে পারেনি। দুই উইকেট করে নেয়া তিন পেসার শফিউল ইসলাম, রাজু, শহীদ, ১ উইকেট নেয়া মুক্তার আলী মিলেই জিম্বাবুইয়ের ইনিংসে ধস নামিয়ে দেন। পেসারদের আগ্রাসী বোলিংকে সামলাতে পেরেছেন শুধু টিমিসের মারুমা (৫০) ও সিকান্দার রাজা (৪৪)। যারা ওয়ানডে দল থেকে বাদ পড়লেন, তারাই প্রস্তুতি ম্যাচে ভাল খেললেন। আফসোস তাদের থাকতেই পারে। এ ম্যাচটা যদি দল ঘোষণার আগে হতো, তাহলে হয়ত সুযোগ মিলে যেত। কিন্তু তা হলো না। তাই নাসির হোসেন যে সর্বোচ্চ ৬১ ও শামসুর রহমান দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৯ রান করলেন, তা তাদের জন্য আপাতত কোন কাজেই এলো না। তবে এই দুইজনের বড় স্কোর অবশ্য বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের ঠিকই অনুপ্রাণিত করবে। এ দুইজনের ব্যাটিংয়ে যে প্রস্তুতি ম্যাচেও বিসিবি একাদশের কাছে পাত্তা পেল না জিম্বাবুইয়ের আসল ওয়ানডে দল, হারই হলো নিয়তি; তা বাংলাদেশ দলের জন্যও কাজে দেবে। জিম্বাবুইয়ের দুর্বলতা যে ধরা পড়ে গেল। কী সেই দুর্বলতা? এমনিতে টেস্ট সিরিজজুড়ে জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানরা বাংলাদেশের স্পিনারদের সামনে মাথানত করেই থেকেছে। প্রস্তুতি ম্যাচে দেখা গেছে, পেসাররা যদি ভাল করার সুযোগ পান, তাহলে সেই পেস আক্রমণেও দুর্বলতা রয়েছে জিম্বাবুইয়ের। তাইত ২৭ ওভার পর্যন্ত যে টানা পেসাররা বোলিং করেছে, এমন সময়ে গিয়ে ১১১ রানের বেশি করতে পারেনি জিম্বাবুইয়ে। ওয়ানডের নিয়মিত অধিনায়ক এলটন চিগুম্বুরা ম্যাচটিতে খেলেননি। হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকেও ম্যাচটিতে নামানো হয়নি। এছাড়া ব্রেন্ডন টেইলর, রেগিস চাকাবভা, সিকান্দার রাজা, সিবান্দা, তরুণ প্রতিভাবানরাও খেলেছেন। কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচেই জিম্বাবুইয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে টেস্টের মতো ওয়ানডেতেও বাংলাদেশই একতরফা আধিপত্য বিস্তার করতে পারে। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হওয়া এ একদিনের প্রস্তুতি ম্যাচটিতে টস জিতে বিসিবি একাদশকে আগে ব্যাট করতে পাঠায় জিম্বাবুইয়ে। ৫১ রানের মধ্যেই এনামুল, রনি, সৌম্য সরকারকে হারিয়ে বিপাকে পড়ে যায় স্বাগতিকরা। এর মধ্যে এনামুল ও রনি তালুকদারের উইকেট তুলে নিয়ে ওয়ানডেতেও যে তার কাছ থেকে আগ্রাসী বোলিং আসতে পারে, সেই জানান দেন মাত্র ৩ ওয়ানডে খেলা পেসার নেভিল মাদজিভা। এরপর জিম্বাবুইয়ে বোলারদের আর যেন খুঁজে পাওয়া যায়নি। নাসির ও শামসুর যে ওয়ানডেতে ফেরার জন্য আবারও ভাল ইনিংস খেলেন। তবে শেষে মাত্র ২ রানের মধ্যে তিন উইকেট হারায় বিসিবি একাদশ। চতুর্থ উইকেটে সাব্বির রহমান (২২) ও শামসুর মিলে ৬০ রানের ও ষষ্ঠ উইকেটে শুভগত হোম (৪০) ও নাসির হোসেন মিলে যে ৯৪ রানের জুটি গড়েন, সেখানেই দল এগিয়ে যায়। শেষে গিয়ে আবুল হাসান রাজু এমন ঝলকই দেখান, দলের স্কোর ২৫০ থেকে দ্রুতই ২৮০ রানে চলে যায়। রাজু প্রথম তিনটি বলে কোন রান পায়নি। নিজের ব্যাটিং করা তৃতীয় ও চতুর্থ বলে টানা ছক্কা হাঁকান। কামুঙ্গোজির বলেই তিনটি ছক্কা হাঁকান। ২৮০ রানে রাজু আউট হওয়ার ২ রান পরই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। অবশ্য পুরো ৫০ ওভারই খেলে। জিম্বাবুইয়ে পেসাররাও ঝলক দেখান। ভুসিমুজি সিবান্দা একাই ৪ উইকেট তুলে নেন। জিম্বাবুইয়ে পেসাররা যে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের জন্য বিপদ আনতে পারেন, তা টেস্টেও বোঝা গেছে। কিন্তু জিম্বাবুইয়ে যে স্পিনে ভয় পাওয়ার সঙ্গে পেসেও টালমাটাল হয়ে যায় তা ধরা পড়ল প্রস্তুতি ম্যাচেই। ওয়ানডে নির্ধারিত ওভারের খেলা। এ খেলায় এখন বাংলাদেশ স্পিনারদের সঙ্গে পেসাররাও সমান তালে এগিয়ে যেতে পারলে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেও জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না বাংলাদেশকে।
×