ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাপান এদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে চায় ॥ বহুমাত্রিক শিল্পায়নেও আগ্রহী

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২০ নভেম্বর ২০১৪

জাপান এদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে চায় ॥ বহুমাত্রিক শিল্পায়নেও আগ্রহী

এম শাহজাহান ॥ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশের সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত বৈদেশিক সম্পর্ক বিস্তারের একটি কার্যকর পরিকল্পনা নীতি হচ্ছে ‘পুবে তাকাও’। এবার এই নীতির পথ ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায় জাপান। এজন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন। এ লক্ষ্যে আগামী ১ ডিসেম্বর জাপানের সরকারী সংস্থা এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) উদ্যোগে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে; যার নাম দেয়া হয়েছে ‘ইন্টারন্যাশনাল সিম্পোজিয়াম অন লুক ইস্ট’। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনে জাপান-বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানো। এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার ভূমি হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে পরীক্ষিত বন্ধু জাপান। কম খরচের এই দেশটিতে তাই বিনিয়োগ বাড়াতে চায়। পাশাপাশি এদেশের বহুমাত্রিক শিল্পায়নে সহায়তা করতে চায় এশিযার অন্যতম এই অর্থনৈতিক শক্তি। ওই দেশের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বড় মাপের কারখানা স্থাপনেও আগ্রহ দেখাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফর এবং জাপানী প্রধানমন্ত্রী শিনজে আবের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে ইতোমধ্যে মূলত দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। জাপানের আগ্রহকে বাস্তবে পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টোকিও সফরের সময় শুধু জাপানের বিনিয়োগকারীদের জন্য চট্টগ্রামে ৫০০ একরের একটি বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন। সে সময় বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) ও জাপানের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা জেটো একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করে। এছাড়া বাংলাদেশকে জাপান ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আগামী চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে এ ঋণের অর্থে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের প্রস্তাব আছে বাংলাদেশের। এর মধ্যে গঙ্গা ব্যারাজ, যমুনা নদীর নিচে টানেল, যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতুর মতো শুধু রেলের জন্য আরেকটি সেতু, বহুমুখী ঢাকা ইস্টার্ন বাইপাস ও ঢাকার চারপাশে থাকা চার নদীর জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনার মতো বৃহৎ অর্থায়নের প্রকল্প। এ প্রকল্পগুলোই বাছাই, সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও তদারকির জন্য যৌথ কাঠামো চেয়েছে জাপান। এছাড়া ইতোপূর্বে বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে পুরো বাংলাদেশকে জাপানী বিনিয়োগের আওতায় আনতে ‘বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট’ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন নিয়েও এবারের সেমিনারে আলোচনা করা হবে। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, জাপান এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি। এই দেশটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার। এবারের আন্তর্জাতিক সেমিনারেও অর্থনৈতিক ইস্যুগুলো প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, জাপানের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগেও আগ্রহী বাংলাদেশী বিনিয়োগকারীরা। দেশের বিদ্যুত ও জ্বালানি, ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট, ফার্মাসিউটিক্যালস, আইটি, অটোমোবাইল, ইলেক্ট্রনিক্স এবং যমুনা রেলসেতু নির্মাণ খাতে বিনিয়োগ নিয়ে এবারের সেমিনারে আলোচনা করা হবে। অন্যতম প্রধান বাণিজ্য অংশীদার জাপান বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য অংশীদার জাপান। জাপান প্রতিবছর বাংলাদেশে ১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর জাপানে মাত্র ৭৫০ মিলিয়ন মূল্যমানের পণ্য রফতানি করা হয়। দু’দেশের মোট বাণিজ্য মাত্র ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। বাণিজ্যিক ভারসাম্য জাপানের অনুকূলে রয়েছে। তবে বাংলাদেশে জাপানী বিনিয়োগ ও জাপানী শিল্প-কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে এই অসমতা দূর করা সম্ভব। জেট্রো জাপানের জন্য বাংলাদেশকে এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় বৃহৎ লাভজনক ব্যবসায়িক স্থান মনে করে। এ কারণে শতকরা ৮৭ ভাগ জাপানী ব্যবসায়ী বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।
×