ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রামের মানুষ পর্যন্ত পাচ্ছে ই-হেলথ ও টেলিমেডিসিন সেবা ॥ নাসিম

ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্ক এখন বিশ্বে মডেল

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২২ নভেম্বর ২০১৪

ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্ক এখন বিশ্বে মডেল

নিখিল মানখিন ॥ বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের সর্বত্র বিস্তার লাভ করেছে স্বাস্থ্যসেবার ডিজিটাল নেটওয়ার্ক। এমন মজবুত অবকাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যাপক মাত্রায় বিস্তার ঘটেছে। জনবল বৃদ্ধি, অবকাঠামোর উন্নয়ন, মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হ্রাস, ওষুধের সরবরাহ বৃদ্ধি, কমিউনিটি ক্লিনিক চালু, স্বাস্থ্য খাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম ইত্যাদি উন্নয়নমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। দেশের ৯৯ ভাগ উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে রয়েছে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা। বর্তমানে প্রতিমাসে ৮০ থেকে ৯০ লাখ মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা নেন। দেশে অনুর্ধ ১২ মাস বয়সের শিশুদের টিকা প্রাপ্তির হার ৮১ ভাগ। বিদ্যমান অবকাঠামোর যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার মান সারাবিশ্বের অনুকরণীয় হতে পারে। আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন, স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জনকণ্ঠকে জানান, দেশব্যাপী একটি ব্যাপকভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে সরকারের সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। একটি সুস্থ জাতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। এসব ক্লিনিকে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের দেয়া হয়েছে ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট সংযোগ । রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ দেয়া হচ্ছে। আর চালু করা হয়েছে ই-হেলথ ও টেলিমেডিসিন সেবা কার্যক্রম। স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্কের স্তরগুলো উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেনÑ স্বাস্থ্যকর্মী, প্রাইমারী, সেকেন্ডারি, টারসিয়ারি ও বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং উভয়মুখী রেফারেন্স পদ্ধতি প্রবর্তন করেছি; যা বিশ্বে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত বিষয়কে কর্মপরিকল্পনায় গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দেশে গড়ে উঠেছে স্বাস্থ্যসেবার ডিজিটাল মজবুত অবকাঠামো। স্বাস্থ্য খাতে সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে দেশের জনগণের প্রতি নিজেদের অঙ্গীকার পূরণ করছে বর্তমান সরকার। আর সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা করতে নিজেদের দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নেও সরকার সব সময় আন্তরিক। তিনি আরও জানান, দেশের মানুষ আজ স্বাস্থ্যসেবার ডিজিটাল সুবিধা পাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর শুধু সেøাগান নয়, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এর সুবিধা পৌঁছে গেছে। দেশের সকল পর্যায়ের হাসপাতালে বেডের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। নির্মাণ করেছি নতুন নতুন জেনারেল ও বিশেষায়িত হাসপাতাল। সরকার নতুন নতুন মেডিক্যাল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, হেলথ টেকনোলজি ইনস্টিটিউট, নার্সিং কলেজ এবং নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছে। আর ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্যখাতের প্রতিটি বিভাগেই জনবল বাড়ানো হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, জেন্ডার সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং পরিকল্পিত পরিবার নিশ্চিত করতে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। নারী ও শিশুস্বাস্থ্য উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য এবং জীবনমান সহায়ক নানামুখী সেবা ও সহায়তা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে সরকার। জাতিসংঘের মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশ্ব কৌশলপত্র বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা দেশব্যাপী মা ও শিশুর নিবিড় পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি প্রবর্তন করেছি। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের ‘কমিশন অন ইনফরমেশন এ্যান্ড এ্যাকাউন্টেবিলিটি অন উইমেন’স এ্যান্ড চিল্ড্রেন’স হেলথের ১১ সূচক ব্যবহার করা হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক নিবন্ধন পদ্ধতি নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ডক্টরস ফর হেলথ এ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট এবং বিএমএ’র সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ রশিদ-ই মাহবুব জনকণ্ঠকে জানান, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের সর্বত্র বিস্তার লাভ করেছে স্বাস্থ্যসেবার ডিজিটাল নেটওয়ার্ক। বিদ্যমান অবকাঠামোর যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার মান সারাবিশ্বের অনুকরণীয় হতে পারে বলে মনে করেন অধ্যাপক ডাঃ রশিদ-ই মাহবুব। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ(স্বাচিপ) ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ ইকবাল আর্সলান জনকণ্ঠকে জানান, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো ও উন্নয়ন অতুলনীয় এবং বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে। কেন্দ্র থেকে মফস্বল পর্যন্ত তথ্য প্রযুক্তিতে সাজানো হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার এমন অবকাঠামো বিশ্বের কোথাও নেই। বিশ্বের অনেক দেশের চিকিৎসাসেবা অত্যাধুনিক হতে পারে। কিন্তু ওসব দেশে স্বাস্থ্যসেবার ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের মতো শক্তিশালী নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্বাস্থ্যবিষয়ক সহস্রাব্দ অর্জনে বাংলাদেশের বেশ অগ্রগতি হয়েছে। অনুর্ধ ৫ শিশুর কম ওজন হার ১৯৯০ সালের ৬৬ ভাগের তুলনায় হ্রাস পেয়ে ২০১১ সালে ৩৬.৪ ভাগে নেমে এসেছে। অনুর্ধ ৫ বছর বয়সী শিশু মৃত্যুর হার ১৯৯০ সালের তুলনায় ৭১ ভাগ কমে এমডিজি ৪ অর্জিত হয়েছে। মাতৃ মৃত্যুর হার ১৯৯০ সালের প্রতি লাখে জীবিত জন্মে ৫৭৪ থেকে কমে ১৯৪ হয়েছে। এইচআইভি আক্রান্ত মানুষের নিম্ন হার বজায় রয়েছে। শতকরা ৪৫ ভাগ এইচআইভি আক্রান্ত মানুষ এআরভি পাচ্ছে। ম্যালেরিয়া ও যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। দেশের শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষ নিরাপদ পানীয় জল পাচ্ছে এবং ৮০ ভাগ মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থার উন্নতি ঘটেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীন উপজেলা থেকে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত চালু স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সংখ্যা ১৪ হাজার ৩৫৬টি। রোগী শয্যা সংখ্যা ১৮ হাজার ৭৮০টি। উপজেলা পর্যায়ে রয়েছে ৪৩৬টি হাসপাতাল। ইউনিয়ন পর্যায়ে ৩১টি হাসপাতাল ও ১ হাজার ৩৬২টি আউটডোর ক্লিনিক রয়েছে। ওয়ার্ড পর্যায়ে রয়েছে ১২ হাজার ৫২৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মোট স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১৪ হাজার ৪৮২টি। দেশের ৯৯ ভাগ উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে রয়েছে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা গ্রহীতার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে প্রতিমাসে ৮০ থেকে ৯০ লাখ মানুষ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা নেন। সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে শিশু ও মহিলাই বেশি। প্রসূতি স্বাস্থ্য পরিষেবারও প্রসার ঘটেছে। সরকারী-বেসরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো ১৯ লাখ ৬৫ হাজার প্রসব-পূর্ব সেবা দিয়েছে। সরকারী প্রতিষ্ঠানে সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যাই বেশি। এক্ষেত্রে সরকারী প্রতিষ্ঠানে ৬৭ ভাগ এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে মাত্র ৩৭ ভাগ। উন্নতি হয়েছে শিশু স্বাস্থ্য পরিষেবার। দেশে অনুর্ধ ১২ মাস বয়সের শিশুদের সকল টিকা প্রাপ্তির হার ৮১ ভাগ। এক্ষেত্রে হাম ৮৫ ভাগ, ওপিভি ৯৩ ভাগ, বিসিজি ৯৯ ভাগ ও ডিপিট ৩/ পেন্টা ৩ সফলতা পেয়েছে ৮৯ ভাগ। আইএমসিআই কর্মসূচীর আওতায় ৫৩ লাখ ৬০ হাজার শিশুকে বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বিভাগীয় পর্যায় থেকে শুরু করে মফস্বল পর্যন্ত ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে বলে দাবি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্ক ॥ পুরোদমে এগিয়ে চলছে স্বাস্থ্য খাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম। মাঠ পর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে ল্যাপটপ ও ট্যাবলেট কম্পিউটার। গ্রাম এলাকার প্রতিদিনের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের সব পরিসংখ্যান তাৎক্ষণিকভাবে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করা সম্ভব হবে। দেশের ৬৪ জেলা এবং ৪১৮ উপজেলা হাসপাতালে ইতোমধ্যে একটি করে মোবাইল ফোন দেয়া হয়েছে। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত প্রায় ৮শ’টি স্বাস্থ্য প্রতিস্থানে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক এবং জেলা সিভিল সার্জনের অফিসে। সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে চালু করা হয়েছে টেলিমেডিসিন সুবিধা। স্বাস্থ্যসেবায় থাকছে জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম এবং কম্পিউটারাইজড অটোমেশন ব্যবস্থা। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরামর্শ নিতে পারবে সাধারণ মানুষ। মোবাইল ফোনের নম্বর স্থানীয় পর্যায়ে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের ওয়েব সাইটেও () নম্বরগুলো দেয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টাব্যাপী কোন না কোন চিকিৎসক এই মোবাইল ফোনের কল রিসিভ করবেন। একটি মাত্র কল করেই ব্যস্ত মানুষও রোগের শুরুতেই পরামর্শ নিতে পারেন চিকিৎসকের। এতে রোগ জটিল হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক কমে যায়।এভাবে ঘরে বসেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া সম্ভব হবে। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত প্রায় ৮শ’টি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে এমন কোন সরকারী হাসপাতাল নেই যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ নেই। এতে তথ্য আদান-প্রদান ও মনিটরিং ব্যবস্থার উন্নতি ঘটায় স্বাস্থ্যসেবার মানের গুণগত উন্নতি ঘটছে। অনলাইন ডাটাবেসসহ ই-মেইলের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে তথ্য পাওয়ায় দেশের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। আর সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে। সাধারণভাবে প্রতিটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান দৈনিক কমপক্ষে চারবার ই-মেইল চেক করে থাকে। প্রতিটি বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক এবং জেলা সিভিল সার্জনের অফিসে ওয়েব ক্যামেরা প্রদান করা হয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠান বা মতবিনিময় করাই এর মূল উদ্দেশ্য। এখন একটি বিশেষ সফটওয়ার সংগ্রহ করা হয়েছে যা দিয়ে একই সঙ্গে ২৫ জন ভিডিও কনফারেন্সিং করা যাবে। আগামী কিছু দিনের মধ্যে দেশে থ্রী জি টেলিফোন সেবা চালু হবে। ইতোমধ্যে ভিডিও ফোন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে চালু করা হয়েছে টেলিমেডিসিন সুবিধা। এছাড়া দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের ৮টি হাসপাতালে উন্নত ভিডিও কোয়ালিটির টেলিমেডিসিন সুবিধা স্থাপন করা হবে। এর সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা আধুনিক মানের টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে বিশেষায়িত হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে পারবেন। ফলে নিম্ন পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি রোগীদের জন্য উচ্চ পর্যায়ের হাসপাতালসমূহে কর্মরত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নেয়া সহজ হবে। রোগীদের ভ্রমণের প্রয়োজন ও ভোগান্তি কমবে বহুগুণ। বিদেশীদের কাছেও একটি সফল ডিজিটাল চিকিৎসক সমাজ হিসাবে সম্মানিত হবে। স্বাস্থ্য বিভাগ মোবাইল ফোনের শর্ট মেসেজ সার্ভিস বা এসএমএস ব্যবহার করে উদ্ভাবনামূলক হেলথ ক্যাম্পেন, স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার কাজ শুরু করেছে এবং তা ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে চলেছে। এ জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মোবাইল ফোন নম্বরের একটি ডাটাবেস তৈরি করা হয়েছে। একটি এসএমএস কমপ্লেইন/সাজেশন বক্স চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে যেকোন নাগরিক ১৪২৪২ নম্বরে এসএমএস-এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অভিযোগ বা পরামর্শ জমা দিতে পারেন। স্বাস্থ্যসেবায় থাকছে জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম(জিআইএস) এবং কম্পিউটারাইজড অটোমেশন ব্যবস্থা। জিআইএস পদ্ধতি প্রয়োগে দেশের কোথায় কি স্বাস্থ্যসেবা আছে, কোথায় নেই, কোথায় প্রয়োজন-এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে সঠিক পরিকল্পনা ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যবস্থা ধীরে ধীরে গড়ে তোলা হচ্ছে। এ জন্য দেশের প্রতিটি সিভিল সার্জনের অফিসে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস নামক যন্ত্র সরবরাহ করা হবে। পোলিও মুক্ত বাংলাদেশ ॥ অবশেষে পোলিও মুক্ত দেশ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সার্টিফিকেট গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ । ভারতের মুম্বাইয়ে নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার সামিনা নাজ গত মে মাসে মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারের গবর্নর কে. শংকরনারায়ণনের কাছ থেকে এ সার্টিফিকেট গ্রহণ করেন। শিশু স্বাস্থ পরিষেবা ॥ দেশে অনুর্ধ ১২ মাস বয়সের শিশুদের সকল টিকা প্রাপ্তির হার ৮১ ভাগ। এক্ষেত্রে হাম ৮৫ ভাগ, ওপিভি ৯৩ ভাগ, বিসিজি ৯৯ ভাগ ও ডিপিট ৩/ পেন্টা ৩ সফলতা পেয়েছে ৮৯ ভাগ। আইএমসিআই কর্মসূচীর আওতায় ৫৩ লাখ ৬০ হাজার শিশুকে বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থা ॥ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বর্তমানে সরকারী হাসপাতালের সংখ্যা ৫৯৩টি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের রয়েছে ১২৬টি। এই দু’টি স্তরে চালু রয়েছে ২৬ হাজার ৮৪১টি শয্যা। যা সরকারী শয্যার ৫৯ ভাগ। শয্যা সংখ্যা স্নাতকোত্তর হাসপাতাল পর্যায়ে ২ হাজার ৩শ’ মেডিক্যাল/ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল পর্যায়ে ১১ হাজার ৯৬০ এবং জেলা ও সদর হাসপাতাল পর্যায়ে রয়েছে ৯ হাজার ২শ’টি। আরবান হেলথ সার্ভে-২০১৩ ॥ গত সাত বছরে শহরে স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। এসময় জন্ম হার নিয়ন্ত্রণে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। ‘বাংলাদেশ আরবান হেলথ সার্ভে ২০১৩’ শীর্ষক এক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। গত ১১ নবেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নগর স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ইউএসএইড বাংলাদেশ এবং ডিএফআইডির অর্থায়নে যুক্তরাষ্ট্রের মেজার ইভালুয়েশন এবং আইসিডিডিআরবির কারিগরি সহায়তায় জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট) এ জরিপ পরিচালনা করে। জরিপে বলা হয়েছে, সরকারের দু’সন্তান লক্ষ্য পুরোপুরিই বাস্তবায়িত হয়েছে বস্তিগুলোয়। সিটি করপোরেশন এলাকার সাধারণ পরিবারের মধ্যেও যা অনেক কম। প্রতিবেদনে বলা হয়, সিটি করপোরেশনের বস্তি ও অবস্তি এলাকার ৯৫ ভাগ এবং অন্যান্য শহর এলাকার ৯০ ভাগ জায়গায় দুই কিলোমিটারের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র রয়েছে। তবে এনজিও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিস্তৃতি বেশি। দুই-তৃতীয়াংশ বস্তি এলাকা এবং অর্ধেক অবস্তি ও অন্যান্য শহর এলাকায় কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছে। গত ৭ বছরে বস্তি এলাকায় ৫ বছরের কম বয়সের শিশু মৃত্যু ৩০ ভাগ এবং এক বছরের কম বয়সের শিশু মৃত্যু ২২ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। একইভাবে নবজাতক মৃত্যুর হার এবং ১-৪ বছরের শিশু মৃত্যু উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। তবে ১-১১ মাস বয়সে মৃত্যুহার অপরিবর্তিত রয়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেন ॥ নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য বিশ্বের ১৭০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩০তম। ১৩০তম অবস্থান হলেও গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার কমেছে। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের ‘বিশ্বে মায়েদের অবস্থান-২০১৪’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। বিশ্বব্যাপী মাতৃস্বাস্থ্য বিষয়ক ১৫তম এই বার্ষিক প্রতিবেদনটি সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে সেভ দ্য চিলড্রেন। ১৭০টি দেশের প্রসূতিদের স্বাস্থ্যসেবা, শিশুর মৃত্যু, শিক্ষা ও আয় বিশ্লেষণের মাধ্যমে স্টেট অব দ্য ওয়ার্ল্ডস মাদারস শীর্ষক প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে গত ১৫ বছরের মাতৃমৃত্যুর হার প্রায় ৬০ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে শিশু মৃত্যুর হার কমেছে প্রায় অর্ধেক। ল্যানসেটের প্রতিবেদন ॥ পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য বাংলাদেশের এমডিজি পুরস্কার প্রাপ্তি এবং স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের সাফল্য নিয়ে ব্রিটিশ চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, , বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ হওয়ার পরও গত ৪০ বছরে স্বাস্থ্য খাতে ‘যুগান্তকারী সফলতা’ অর্জন করেছে বাংলাদেশ।এই সময়ে শিশু মৃত্যুর হার কমেছে, গড় আয়ু বেড়েছে এবং রোগ নিয়ন্ত্রণে দারুণ অগ্রগতি হয়েছে বলে ল্যানসেটের প্রতিবেদনে বলা হয়। আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত প্রধানমন্ত্রী ॥ জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। এজন্য জাতিসংঘের বিশেষ সম্মাননা পান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁকে জাতিসংঘের আসন্ন সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য দেয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর আগে মাতৃ ও শিশুমৃত্যু রোধে অবদান রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘সাউথ সাউথ’ এ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ যা বলেন ॥ গত অক্টোবরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. মার্গারেট চ্যান বলেন, বাংলাদেশ কয়েক দশক ধরে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন এবং গড় আয়ু বৃদ্ধিতে দেশটি যে অসাধারণ অগ্রগতি সাধন করেছে তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তিনি বলেন , স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের এ সাফল্য থেকে এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের অনেক কিছুই গ্রহণ করার আছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার ভূয়সী প্রশংসা করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ড. পুনম ক্ষেত্রপাল সিং বলেন, অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যসেবায় অনেকদূর এগিয়েছে বাংলাদেশ। নারী ও শিশু স্বাস্থ্য রক্ষায় বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বের অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। একত্রিত হয়ে কাজ করলে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট সমস্যা মোকাবেলায় আমরা জয়ী হতে পারব। সুস্বাস্থ্য বিলাসিতা নয়, এটি একটি বিনিয়োগ। একুশ শতকের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে হতে হবে একুশ শতকের মতোই গতিশীল। এ অঞ্চলের দেশগুলো যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে তার কারিগরি সমাধানই একমাত্র উপায় নয়। তিনি এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবায় তার ভিশন ব্যাখ্যা করেন এবং তা অর্জনের চারটি মূল মাধ্যম তুলে ধরেন। এগুলো হলোÑ বিদ্যমান ও ভবিষ্যত মহামারীসংক্রান্ত এবং জনসংখ্যাবিষয়ক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করা, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং শক্তিশালী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করা; টেকসই উন্নয়নের জন্য আপৎকালীন ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য বিষয়ে আঞ্চলিক মতামত দৃঢ়তার সঙ্গে তুলে ধরা।
×