ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নারীর অগ্রযাত্রার প্রধান অন্তরায় মৌলবাদ

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ২৫ নভেম্বর ২০১৪

নারীর অগ্রযাত্রার প্রধান অন্তরায় মৌলবাদ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নারীর এগিয়ে চলার পথে প্রধান প্রতিবন্ধকতা মৌলবাদ। মৌলবাদী শক্তির হুমকির মুখে সততা, মেধা এবং একনিষ্ঠ পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশে ২ হাজার নারী সাংবাদিকতা পেশায় কাজ করছে। তবে নারী সাংবাদিকরা নানাভাবে নানা কাঠামোতে বৈষম্যের শিকার। অন্যান্য পেশার পাশাপশি গণমাধ্যমের প্রতিটি শাখায় ৩৩% নারী সাংবাদিক ও নারীকর্মী নিয়োগ নিশ্চিত করা হলে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর হবে বলে মনে করছেন নারী নেত্রীরা। এর সঙ্গে একাত্ম হলেন গণমাধ্যম নেতা এবং কর্মীরা। গণমাধ্যমের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের মতবিনিময় সভায় গণমাধ্যমে নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দূর করে নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানাল বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। প্রবন্ধের মূল বক্তব্যে বলা হয়, উর্ধতন পর্যায়ের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভা আয়োজনের অন্যতম উদ্দেশ্য গণমাধ্যমের সকল দায়িত্বশীল পদে নারীর অধিকতর অংশগ্রহণের কার্যকর ও পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এর পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে নারী সাংবাদিকরা যে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হন, জেন্ডার সংবেদনশীলতার সঙ্গে তা দূর করার উদ্যোগ নেয়া। এর মধ্যে দিয়ে নারী-পুরুষের সম্মিলিত অবদানে সুস্থ, সুন্দর, কার্যকর ও উন্নততর গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠিত হবে এবং গণমাধ্যম সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা যথাযথভাবে পালনে সমর্থ হবে। দিল মনোয়ারা মনু তাঁর প্রবন্ধে আরও জানান, নারীদের বাইরের কাজের ক্ষেত্রে যেসব প্রতিকূল অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয় সাংবাদিকতা পেশায় তা আরও প্রকট। এ পেশায় কর্মরত নারীরা এখনও নানাভাবে, নানাকাঠামোতে বৈষম্যের শিকার। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে গণমাধ্যমে নারীর উপস্থিতি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারাদেশে প্রায় দুই হাজার নারী সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত থাকলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ এখনও প্রান্তিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে কেউ কেউ সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃত্ব এবং পত্রিকার সম্পাদনা করছেন। মহিলা পরিষদ এ পেশায় ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদানের দাবি জানান। সংগঠনের প্রচার ও গণমাধ্যম সম্পাদক দিল মনোয়ারা মনু উপস্থাপিত প্রবন্ধে গণমাধ্যমে নারীর অবস্থান এবং বাংলাদেশে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে মহিলা পরিষদের ভূমিকা তুলে ধরেন। গণমাধ্যমে নীতিনির্ধারকদের করণীয় হিসেবে ২৯টি দাবি এবং নারী সাংবাদিকদের দায়িত্বশীলতা বাড়াতে করণীয় তুলে ধরলেন তাসকিনা ইয়াসমিন। এর ওপর আলোচনা করতে গিয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টের (বিএফইউজে) সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল জলিল ভুঁইয়া বলেন, কর্মক্ষেত্রে নারী এখনও বৈষম্যের স্বীকার। বিএফইউজে নেতা বলেন, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা প্রমাণ করে নারীর এগিয়ে চলার পথে প্রধান প্রতিবন্ধকতা মৌলবাদ। দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত নারী সাংবাদিকদের সমালোচনা করে বলেন, দক্ষতার অভাবে নারী সাংবাদিক নিয়োগ দেয়া যায় না। তিনি অভিযোগ করেন এখনও অনেক নারী রিপোর্টিংয়ে আসতে অনাগ্রহী, তাঁরা ডেস্কে কাজ করতে চান। তার অভিযোগ নারীরা অনেক ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে চায় না। দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদক কাজী রফিক বলেন, রাত ১০টার পর কোন নারী কাজ করলে তাঁকে বাসায় ফেরার জন্য যানবাহন দিতে হবেÑ এটা ওয়েজবোর্ডের আইন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এটা মানা হয় না বলে অনেকে রিপোর্টিংয়ের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে চায় না। উপস্থিত অতিথিবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ চ্যানেল আইয়ের প্রধান বার্তা সম্পাদক প্রণব সাহা, দৈনিক ইত্তেফাকের ফরিদা ইয়াসমিন ও রাবেয়া বেবী, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক পারভীন সুলতানা ঝুমা, দৈনিক সংবাদের সোহাগ মজুমদার, দৈনিক জনকণ্ঠের সুমি খান, বাসসের মাহফুজা জেসমিন ও জুনান নাশিত। ২৯ দফা সুপারিশমালায় উল্লেখ করা হয়, সকল দৈনিক পত্রিকা অনলাইন ও স্যাটেলাইট চ্যানেলে জেন্ডার পলিসি থাকতে হবে এবং তা মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে। নারী সাংবাদিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটির নিশ্চয়তা থাকতে হবে। মতবিনিময় সভায় সংগঠনের সহ-সভাপতি ডাঃ ফওজিয়া মোসলেম, নাহার আহমেদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগমসহ বিভিন্ন পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার ৩৫ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উপপরিষদ সদস্য পারভীন সুলতানা ঝুমা। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় প্রচার ও গণমাধ্যম উপপরিষদের উদ্যোগে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সুফিয়া কামাল ভবন মিলনায়তনে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
×