ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পাকি জঙ্গীসহ আটক ৫ জন রিমান্ডে

ছালামতউল্লাহর মাদ্রাসায় তল্লাশি

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ২৫ নভেম্বর ২০১৪

ছালামতউল্লাহর মাদ্রাসায় তল্লাশি

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস/ কক্সবাজার প্রতিনিধি ॥ চট্টগ্রামের আবাসিক হোটেল থেকে আটক পাকি নাগরিকসহ ৫ জঙ্গীর রোহিঙ্গা কানেকশন নিয়ে কোন সন্দেহ নেই গোয়েন্দাদের। গ্রেফতারকৃত ৫ জনের সোমবার যাওয়ার কথা ছিল কক্সবাজার। সেখানে গিয়ে উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়িতে রোহিঙ্গাদের আর্থিক অনুদান প্রদান ও আরএসও নেতা ও সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করার কর্মসূচী ছিল পাকিস্তানী নাগরিক মোহাম্মদ আলমের। আটক এই পাঁচজনকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। সোমবার রাত থেকেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি এলাকায় অবস্থিত ‘হোটেল লর্ডস ইন’ থেকে গ্রেফতার ৫ জনের মধ্যে পাকিস্তানী নাগরিক মোহাম্মদ আলম (৪৫) নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংস্থার গ্লোবাল রোহিঙ্গা সেন্ট্রালের (জিআরসি) পরিচালক বাংলাদেশ আশ্রয়দাতা রোহিঙ্গাদের আর্থিক অনুদান ও নানা ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকে। আটক ছালামত উল্লাহ (৪৫) জামায়াত নেতা এবং শফিউল্লাহ (৪০) আওয়ামী লীগ নেতা। এরা দুজন পাকিস্তানী নাগরিকের পুরো কর্মসূচী সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও রয়েছে। গ্রেফতারকৃত অপর দুইজনের নাম মোঃ আমিন (৫০) ও আবদুল মজিদ (৩০)। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার সাংবাদিকদের জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিসি (ডিবি) কুসুম দেওয়ানের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি কমিটি কাজ করছে। নগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। পাকি মোহাম্মদ আলম জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে অবস্থানের পর তাদের কক্সবাজার যাওয়ার কথা ছিল। সৌদি আরবের দুই ধনাঢ্য ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া বড় অঙ্কের আর্থিক অনুদান নিয়েই তিনি বাংলাদেশে এসেছেন বলে গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন। গোয়েন্দা সূত্র আরও জানায়, নেদারল্যান্ডসভিত্তিক জিআরসি মূলত কক্সবাজার ও বান্দরবানে রোহিঙ্গা এবং কওমী মাদ্রাসা নিয়ে কাজ করে থাকে। সেখানে স্থাপিত মাদ্রাসাগুলোতে যেমন তাদের আর্থিক অনুদান রয়েছে তেমনিভাবে নতুন মাদ্রাসা স্থাপনে সহায়তা প্রদান করা হয় বিদেশ থেকে আসা ঐ ফান্ড থেকে। জিজ্ঞাসাবাদে বাংলাদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাছ করার বিষয়টি স্বীকার করেন জামায়াত স্থানীয় নেতা ছালামত উল্লাহ ও আওয়ামী লীগ নেতা শফিউল্লাহ। ৫ জঙ্গী নিয়ে আরও কিছু তথ্য ॥ মাত্র চার ঘণ্টায় রামু বৌদ্ধবিহার ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত করার ঘটনার মূল হোতা রোহিঙ্গা জঙ্গী ছালামত উল্লাহ পাঁচ জঙ্গীকে চট্টগ্রামে গ্রেফতার করার পর কক্সবাজারে ঘাঁপটি মেরে থাকা জঙ্গীদের অনেকে আত্মগোপনে চলে যেতে শুরু করেছে। আটক জঙ্গী ছালামত উল্লাহর আরও একটি মাদ্রাসার আদলে গড়ে তোলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে সোমবার সকালে। কক্সবাজার শহরতলী লিংক রোড মুহুরিপাড়ায় খাস জায়গা জবরদখল করে জঙ্গী ছালামত উল্লাহ রোহিঙ্গাদের জন্য এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলেছে। সোমবার সকালে সদর থানার এস আই ফারুকের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ও আনসার আদর্শ শিক্ষা নিকেতন নামে ওই প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে রোহিঙ্গাদের শিক্ষাদানকারী কয়েক রোহিঙ্গা মৌলভী শিক্ষক গা ঢাকা দেয়। পুলিশ সেখান থেকে কিছু ফাইলপত্র উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এদিকে জঙ্গী ছালামত উল্লাহর সঙ্গে চট্টগ্রামে গ্রেফতার হওয়া বিদেশী নাগরিক আবু সালমান ওরফে মোঃ আলমকে ছাড়িয়ে নিতে আরএসওকে সহযোগিতাকারী একটি মহল ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে। তারা সরকারদলীয় কিছু নেতাকে বশে আনার তৎপরতা চালাচ্ছে। সোমবার সকালে জঙ্গী ছালামত উল্লাহর আরও একটি রোহিঙ্গা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পুলিশ অভিযানে গেলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে রোহিঙ্গাদের শিক্ষাদানকারী ‘মিয়ানমারের’ মৌলভীরা গা ঢাকা দেয়। ও সময় স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশকে জানায়, অবৈধভাবে সরকারী জায়গা দখল করে মিয়ানমারের বাসিন্দা মৌলভী ছালামত উল্লাহ বহু বর্মী শিক্ষক ও বর্মী যুবকদের মাদ্রাসায় শিক্ষাদানের নামে ট্রেনিং দিচ্ছে। তাদের এসব কর্মকা- দেখে স্থানীয় গরিব লোকজন ঐ মসজিদে নামাজ আদায় করতেও যায় না বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, কক্সবাজার লিংকরোড দক্ষিণ মুহুরিপাড়া লম্বাঘোনা এলাকায় সরকারী খাস জায়গা জবরদখল করে জঙ্গী ছালামত উল্লাহ বিশাল ভবন গড়ে তুলেছেন। সেখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে রোহিঙ্গা নাগরিকদের সন্তানরা। শিক্ষকদের সবাই মিয়ানমারের বাসিন্দা হওয়ায় পুলিশ দেখে দ্রুত পালিয়ে যায়। আরএসওর নেতৃত্বে স্থানীয় আ’লীগ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা বান্দরবান থেকে জানান, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলার রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ পরিবারের নেতৃত্ব দিচ্ছে রোহিঙ্গাসহ রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) সদস্যরা। আর এসব রাজনৈতিক নেতারা দেশবিরোধী কর্মকা- সংগঠিত করায় স্থানীয়দের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার শেষ নেই।
×