ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বহুজাতিক কোম্পানিকে আগ্রহী করতে নতুন পিএসপি হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২৭ নভেম্বর ২০১৪

বহুজাতিক কোম্পানিকে আগ্রহী করতে নতুন পিএসপি হচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বহুজাতিক কোম্পানিকে আগ্রহী করতে মডেল উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি)- ২০১৫ প্রণয়ন করা হচ্ছে। উপমহাদেশের অন্যান্য দেশে বহুজাতিক তেল গ্যাস কোম্পানিকে যেসব সুবিধা দেয় নতুন পিএসসিতে তা বিবেচনা করা হবে। এতে সাগরে গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়লেও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাতে আগ্রহী হবে বলে সরকার আশা করছে। পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, মায়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে সমুদ্র জয়ের পর বিডিং রাউন্ড ২০১৫ (দরপত্র আহ্বান) করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু ২০০৮ থেকে এখন পর্যন্ত ডাকা দরপত্রে যথেষ্ট সাড়া পায়নি পেট্রোবাংলা। প্রত্যেকবারই দরপত্র আহ্বানের পর বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর তরফ থেকে পেট্রোবাংলাকে জানান হয়েছে দেশে গ্যাসের দাম অনেক কম। এই দামে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। বিশেষত মায়ানমারে কোম্পানিগুলো এখন প্রায় আট থেকে নয় ডলার প্রতি ইউনিট গ্যাসের দামে চুক্তি করছে। অতি সম্প্রতি মার্কিন কোম্পানি কনোকো ফিলিপসও সাগরের ব্লক ছেড়ে যাওয়ার কথা সরকারকে জানিয়েছে। পিএসসি-২০০৮ অনুযায়ী গ্যাসের এ দামে কোম্পানিটির পক্ষে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করা সম্ভব নয় বলে জানান হয়েছে। পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক সফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে পিএনসি ২০১৫ প্রণয়ন করার জন্য ১০ সদস্যর একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ১৮ নবেম্বর গঠিত কমিটিকে আগামী ৩০ নবেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটিকে একই সঙ্গে বিডিং রাউন্ড-২০১৫ এর বিডিং ডকুমেন্ট (দরপত্র), ব্লক নির্ধারণী মনচিত্র প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে। জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার একজন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের দেশে গ্যাসের দাম ভারত এবং মায়ানমার থেকে বেশ কম। এই দামে বিদেশী কোম্পানিগুলো সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে এগিয়ে আসতে চায় না। অন্যদিকে সরকার চাইছে সংকট সমাধানে ব্যাপকভাবে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করতে। এজন্যই পিএসসি সংশোধন করার প্রয়োজন পড়েছে। মডেল পিএসসি-২০১২ সংশোধন করে নতুন পিএসসি-২০১৫ প্রণয়ন করা হবে। অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, নতুন পিএসসিতে গ্যাসের মজুদ কি পরিমাণ হলে কত দাম হবে। পাইপ লাইনের মূল্য কস্ট রিকভারি হিসেবে গ্যাস কোম্পানিগুলো তুলে নিলেও ইউনিট প্রতি তার দাম কীভাবে সমন্বয় করা হবে এসব বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে। পিএসসি প্রণয়নের ক্ষেত্রে উপমহাদেশের অন্য দেশগুলোর পিএসসির বিভিন্ন ধারা অনুসরণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন কোন গ্যাস কোম্পানি কাজ পেলেও তারা অনুসন্ধান শেষ করে গ্যাস উৎপাদনে আসতে আরও অন্তত পাঁচ বছর সময় প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম বেড়ে যাবে। ফলে এতে আমাদের খুব একটা লোকসানের আশঙ্কা থাকবে না। এজন্য মডেল পিএসসি-২০১২ সংশোধন করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করার পরও বহুজাতিক কোম্পানি আগ্রহী হচ্ছে না বলেও জানান তিনি। ভারতের সঙ্গে সমুদ্র জয়ের পর অগভীর সমুদ্রে এসএস-০১ ও এসএস-০৫ এবং গভীর সমুদ্রে ডিএস-০৯, ডিএস-১৪, ডিএস-১৫, ডিএস-১৯, ডিএস-২৪, ডিএস-২৫ নম্বর ব্লকে ভারত আমাদের কোন বাঁধা দিতে পারছে না। এর আগে ২০১২ সালে মায়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা রায়ের চেয়েও ভারতের সঙ্গে দেয়া আন্তর্জাতিক আদালতের রায়কে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে মায়ানমার যেসব এলাকায় বড় গ্যাস ব্লক পেয়েছে বিরোধপূর্ণ ওই এলাকা বাংলাদেশের ভাগে পড়েনি। কিন্তু এরপরও মায়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে বিস্তর এলাকা পাওয়ার পরও বাংলাদেশ সেভাবে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করতে পারেনি। প্রতিবেশী দেশগুলো সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে বলা হচ্ছে বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগ, বাপেক্সর অংশিদারিত্বের মাধ্যমে সাগরে বিনিয়োগ এবং দরপত্রের মাধ্যমে বিদেশী কোম্পানিকে ইজারা প্রদান এই তিন পদ্ধতি সাগরে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। গভীর সমুদ্রে কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে চুক্তির পর আবারও মহাজোট সরকার গভীর এবং অগভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের চুক্তি করে। তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ১০ ডিসেম্বর ২০১২ তে গভীর ও অগভীর অংশের মোট ১২টি ব্লকের জন্য ‘বাংলাদেশ অফশোর বিডিং রাউন্ড-২০১২’ আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে গভীর সমুদ্রে তিনটি ব্লকের জন্য কোন আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি (আইওসি) দরপত্র দাখিল করেনি। শুধুমাত্র অগভীর সাগরের ৯টি ব্লকের জন্য দর প্রস্তাব জমা পড়ে। প্রাথমিক বাছাইয়ে ৭ নম্বর ব্লকে কনোকো এবং ৪ ও ৯ নম্বর ব্লকে ভারতীয় কোম্পানি ‘ওএনজিসি’ নির্বাচিত হয়। ওএনজিসির পিএসসি সাক্ষর করে পেট্রোবাংলা। এর পরের বছর অর্থাৎ ২০১৩ এর ২৮ মে অগভীর সাগরের ছয়টি ব্লকের জন্য আবারও দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে শুধুমাত্র ১১ নম্বর স্যান্টোস ও ক্রিস এনার্জি যৌথভাবে দর প্রস্তাব দাখিল করে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সাগরের দিকে তাকালে দেখা যাবে কনোকো ফিলিপস পরবর্তীতে আর চুক্তি করেনি। অন্যদিকে ২০০৮ এ আহ্বান করা দরপত্র অনুযায়ী গভীর সমুদ্রের ব্লক দুটিও তারা ছেড়ে দিতে চাইছে। এখন ওএনজিসি, সান্টোস ও ক্রিস এনার্জির সঙ্গে চুক্তি রয়েছে। যদিও এখনও কোন কোম্পানিই কাজ শুরু করেনি।
×