ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতনে গৃহবধূ বাড়িছাড়া

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৭ নভেম্বর ২০১৪

শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতনে গৃহবধূ বাড়িছাড়া

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২৬ নবেম্বর ॥ চার বছরের বিরামহীন অঝোরধারার কান্না চিরদিনের জন্য থামাতে ভয়ঙ্কর আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিলেন রীনা বেগম। স্বামীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে দিশেহারা হয়ে এমন হুমকি দিলেন এ গৃহবধূ। কোথাও বিচার জোটেনি। কেউ তাঁকে সহায়তা দেয়নি। টাকায় যেন সব থমকে গেছেÑ এমন বিশ্বাস তাঁকে চরম হতাশ করে দিয়েছে। সাড়ে চার বছররের শিশুকন্যা মালিয়াকে প্রয়োজনে দত্তক দিবেন। দৃঢ়তার সঙ্গে নিজের দুটো কিডনি ও চোখ বিক্রি করে নীরবে জীবনাবসানের নির্মম সিদ্ধান্তের কথা বলে অঝোর কান্নায় ভেজালেন চোখ। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির টাকাও মেয়ের নামে ব্যাংকে গচ্ছিত রাখার কথা জানালেন। তাঁর ধারণা হয়তো বা মেয়ের লেখাপড়া না হলে পরিণত বয়সে তাঁর মতো দুর্গতি হবে। ঘুরবে রাস্তায় রাস্তায়। আর এ সবের চূড়ান্ত অবসানে এমন হুমকি এ হতভাগী মায়ের। সাড়ে চার বছরের সন্তানকে নিয়ে স্রোতে ভাসা শেওলার মতো ভাসছেন রীনা। বিয়ের প্রায় পাঁচটি বছরে পাঁচ মাসও স্বামীর সংসারে ঠাঁই মেলেনি। যে কটা দিন থেকেছেন তা ভয়াবহ নির্যাতনের দুঃসহ স্মৃতি। শ্বশুর সৈয়দ হাওলাদার, শাশুড়ি মুনসুরা বেগম, ভাসুর বেল্লাল হাওলাদার, কুদ্দুস হাওলাদার, দেবর মাদ্রাসাছাত্র সাদ্দাম বেধড়ক মারধর করেছে। লাঠিপেটা, লাথি, চুলেরমুঠি ধরে জুতাপেটা ছিল নিত্যদিনের নির্যাতন। এমনকি নিজের সংসার রেখে ননদেরা পর্যন্ত ভাড়াটে হয়ে মারধর করত অহরহ। মারধর নির্যাতন থেকে রক্ষায় ঘরের বাইরে দৌড়ে এলে পড়শীদের বলা হতোÑ ‘মাথা খারাপ’। এতো কিছুর পরও স্বামীর সংসারে টিকে থাকার প্রবল চেষ্টা করেছে রীনা। প্রায় এক বছর আগে বাড়িছাড়া করা হয় তাঁকে। রীনা জানান, জীবনের চাকা ঘোরাতে হাত পাততে হয়েছে সব দরজায়। তাঁর অসহায় হাতটি ধরে কেউ কিছুটা সহায়তা করেছেন। তবে সমাজের কীট নামের বহু নরপশু আবার হায়েনার মতো তামাটে রঙের শরীরের দিকে কালো হাত বাড়ানোর চেষ্টাও করেছে। তাঁর কাছে সবাইকে এখন বিচিত্র মনের মানুষ মনে হয়। নিজের সীমাহীন দুঃখ-কষ্ট অসহায়ত্ব এবং শিশুসন্তানের ভবিষ্যত পরিণতির কথা বলতে গিয়ে অঝোর ধারায় কান্না শুরু করে দেয় এ তরুণী গৃহবধূ। যেন অথৈ সাগরে ভাসছেন সন্তানকে নিয়ে। গা শিউরে ওঠা মর্মান্তিক সিদ্ধান্তের কথা বলে অঝোর ধারায় কান্না জুড়ে দেন। বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের এসব বললে অসহায় রীনার কান্না দেখে উপস্থিত সাংবাদিকরাও নীরব হয়ে যান।
×