ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার নেপথ্যে প্রভাবশালীরা

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ২ ডিসেম্বর ২০১৪

অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার নেপথ্যে প্রভাবশালীরা

ফিরোজ মান্না ॥ অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা আবার আলোচনায় উঠে এসেছে। এই ব্যবসা করে রাতারাতি অনেকেই টাকার পাহাড় গড়ে তুলছেন। প্রভাশালীদের দখলে থাকা ভিওআইপি ব্যবসার লাগাম কিছুতেই টানতে পারছে না নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বিটিআরসি। মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশ থাকার পরও এই ব্যবসা চলছে আপন গতিতেই। বিটিআরসির চোখের সামনে দিয়ে ব্যবসা চললেও তাদের বলার কোন সাহস নেই। প্রভাবশালীদের হাতে নিয়ন্ত্রিত অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার বিন্দু পরিমাণ ব্যাঘাত ঘটাতে পারেনি বিটিআরসি। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালিয়েই দায়িত্ব শেষ করছে তারা। অবৈধ ভিওআইপির কারণে প্রতিবছর দেশ থেকে বিদেশে চলে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এই ব্যবসা যেন ‘আলাদীনের চেরাগ’-হাতে পেলেই অল্পদিনেই গড়ে ওঠে টাকার খনি। সূত্র জানিযেছে, বিটিআরসি অবৈধ ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) বন্ধের জন্য নানা রকম পদক্ষেপ নিলেও কোন ফল হয়নি। দুই বছর আগে অবৈধ ভিওআইপি বন্ধের জন্য ‘অবৈধ ভিওআইপি অনুসন্ধান’ নামে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয় বিটিআরসি। এই কমিটি দীর্ঘ তিন মাস অনুসন্ধান করে (বিটিসিএল,মোবাইল অপারেটর, ভিস্যাট, পিএসটিএনসহ অন্য যে সব ক্যারিয়ারের মাধ্যমে ভিওআইপি করা হয়) তারা কিছু কারণ খুঁজে পেয়েছে। কমিটি পরবর্তীতে এই কারণগুলোই সুপারিশ আকারে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। পূর্ণাঙ্গ ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স), অত্যাধুনিক সফটওয়্যার, রেডিও লিং ব্যবহার, কল লিস্ট মুছে ফেলাসহ মোট ১৩ টি কারণ উদ্ধার করেছে তারা। এগুলো বন্ধ হলে অবৈধ ভিওআইপি বহুগুণে কমে যাবে। গত বছরের এই সময়েও প্রতিদিন বৈধপথে সাড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৬ কোটি মিনিট আন্তর্জাতিক কল দেশে আসত। বর্তমানে তা ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি মিনিটে দাঁড়িয়েছে। বাকি প্রায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ কোটি মিনিট কল অবৈধ পথে আসছে। অবৈধ ভিওআইপি নিয়ে সংসদেও আলোচনা হয়েছে। বিটিআরসি জানিয়েছে, সবচেয়ে বেশি ভিওআইপি হচ্ছে বিটিসিএল ও টেলিটকের মাধ্যমে। অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের দিয়েই অবৈধ ভিওআইপি কল অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে তারা লোকবল কম থাকায় কমিটিতে সদস্যসংখ্যা বেশি করা যায়নি। কমিটিতে বেশি সংখ্যক লোকবল দেয়া হলে অবৈধ ভিওআইপি কলের পূর্ণাঙ্গ চিত্র ফুটে উঠত। গঠিত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে অনুসন্ধান প্রতিবেদন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে কমিটি কয়েক দফা সময় বাড়ানোর আবেদন করে মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও দেয়। কমিটি তিন মাস বিটিসিএল ও টেলিটকের ভিওআইপি কল কিভাবে হয় তার কারণ খুঁজে দেখে। এরপর তারা একটি সুপারিশমালা তৈরি করে। সুপারিশের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার কথা রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, অবৈধ ভিওআইপি শনাক্ত করা এখন খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। অবৈধ ভিওআইপি পরিচালনাকারীরা টেলিযোগাযোগ খাতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে কললিস্ট মুছে ফেলা হচ্ছে। অবৈধ কলের জন্য নানা ধরনের আধুনিক সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। ফলে অবৈধ ভিওআইপি ধরাও এখন কষ্টকর হয়ে পড়েছে। অবৈধ ভিওআইপি পরিচালনাকারীদের তুলনায় বিটিআরসির হাতে ওই পরিমাণ আধুনিক যন্ত্রপাতি বা সফটওয়্যার নেই। বেসরকারী মোবাইল অপারেটরদের অবৈধ ভিওআইপি কলের ব্যাপারে এখনও কোন কাজ করা হয়নি। লোকবল এবং সময়ের অভাবে তাদের কললিস্ট পরীক্ষা করা যায়নি। দু’জন দক্ষ প্রকৌশলীকে কমিটিতে যুক্ত করতে মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে দুই প্রকৌশলী কমিটিতে যোগ করে বেসরকারী মোবাইল অপারেটরদের অবৈধ ভিওআইপি কল পরীক্ষা করা হবে। এদিকে সূত্র জানিয়েছে, বিটিআরসি এর আগে অবৈধ ভিওআইপি ধরার জন্য ঢাকায় অভিযান চালাত। এখন চট্টগ্রাম, সিলেট, বগুড়া, রংপুর, খুলনাসহ সীমান্ত এলাকার জেলাগুলোতেও এ ব্যবসা চলছে।
×