ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হল বন্ধ ও পরিবহন ধর্মঘটে বিপাকে ইবি শিক্ষার্থীরা ॥ ক্যাম্পাস থমথমে

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ২ ডিসেম্বর ২০১৪

হল বন্ধ ও পরিবহন ধর্মঘটে বিপাকে ইবি শিক্ষার্থীরা ॥ ক্যাম্পাস  থমথমে

ইবি সংবাদদাতা ॥ কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের তৃতীয়বর্ষের ছাত্র তৌহিদুর রহমান টিটু বাস চাপায় নিহত ঘটনায় সোমবারও থমথমে ছিল পুরো ক্যাম্পাস। নিহতের ঘটনায় ফের সংঘর্ষ এড়াতে রবিবারই বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরী সিন্ডিকেটে সকল আবাসিক হল বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়কে জিম্মি করে হঠাৎ কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলায় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিলে বিপাকে পড়ে শিক্ষার্থীরা। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে হল ছাড়তে পারেননি শিক্ষার্থীরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই যেসব শিক্ষার্থী বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে তাদের অনেককেই মাঝপথে আটকে ছিনতাই করার ঘটনাও ঘটিয়েছে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের পরিবহন শ্রমিকরা। এদিকে বাস পোড়ানোর ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ইবি থানায় অজ্ঞাত দেড় হাজার জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে। সূত্র জানায়, রবিবার কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি এ্যান্ড জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয়বর্ষের ছাত্র তৌহিদুর রহমার টিটুকে ঝিনাইদহগামী রাজ মর্টস নামে একটি গাড়ি তাকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কায় সে মাটিতে পড়ে গেলে সাগর পরিবহন নামে অপর একটি গাড়ি তার গলার ওপর দিয়ে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই টিটুর মৃত্যু হয়। টিটুর বাড়ি ঝিনাইদহের মহিষপুরে। টিটুর মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫টি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং পাঁচটি গাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। ভাংচুর আর আগুনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্ভাব্য বড় ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রবিবারই জরুরী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে। এ ক্ষেত্রে ছেলেদের জন্য সন্ধ্যা ছয়টা এবং মেয়েদের জন্য পরের দিন সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়কে জিম্মি করে হঠাৎ কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলায় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেন পরিবহন মালিকরা। একদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হল ত্যাগের নির্দেশ অন্যদিক পরিবহন ধর্মঘট ডাকায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। তবে অবস্থা বেগতিক দেখে সোমবার সকাল আটটার দিকে প্রভোস্ট কাউন্সিলের জরুরী সভা বসে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত পরিবহন সমস্যার সমাধান না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ইচ্ছা করলে হলে অবস্থান করতে পারবে। তবে প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভা অনেক দেরিতে হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী রবিবার রাত এবং সোমবার সকালেই বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। এসব শিক্ষার্থীকে কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর, বটতৈল, চৌরহাস এবং ঝিনাইদহের আরাপপুর ও গাড়াগঞ্জে আটকে ব্যাপক মারধর করে পরিবহন শ্রমিকরা। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ছিনতাই করে নিয়ে যায় তারা। এদের সঙ্গে যোগ দেয় স্থানীয় কিছু লোক। অনেক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এসব ঘটনা স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা এবং পরিবহন মালিকদের ছত্রছায়ায় হওয়ার কারণে বারবার প্রশাসনকে জানানোর পরও কোন সুরাহা হয়নি। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ এই ধ্বংসের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যাপারে পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত এক হাজার পাঁচ শ’ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও দুটি মামলার প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়কে দ্রুত সচল এবং শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক চলাচলের জন্য বিকেল সাড়ে পাঁচটায় কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলার ডিসি, এসপি, পরিবহন মালিক এবং প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বৈঠকে বসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ইবি থানার ওসি মোঃ মহিবুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অজ্ঞাত দেড় হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও দুটি মামলার প্রক্রিয়া চলছে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল হাকিম সরকার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে এবং বাইরের ঘটনা সম্পর্কে আমি অবগত। অতি দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা দুই জেলার (কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ) জেলার উর্ধতন কর্তাব্যক্তিদের ডেকেছি। আশা করি আলোচনা ফলপ্রসূ হবে এবং শিক্ষার্থীরা নিরাপদে বাড়ি যেতে পারবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে অনেক পদক্ষেপই দ্রুত নেয়া সম্ভব হয় না।
×