ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৩২ দেশের শিল্পীর শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে

শিল্পের বৈভবে শুরু এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২ ডিসেম্বর ২০১৪

শিল্পের বৈভবে শুরু এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে ক্রমশই এগিয়ে চলেছে চারুশিল্প। দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এখন সমাদৃত বাংলার চিত্রকলা। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিকশিত হচ্ছে এদেশের শিল্পভুবন। আর সেই গতিময় পথচলার প্রত্যয়কে সঙ্গী করে শিল্পের বৈভবে শুরু হলো মাসব্যাপী ১৬তম দ্বিবার্ষিকী এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী। শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালায় অনুষ্ঠিত প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে বাংলাদেশসহ এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ৩২টি দেশের শিল্পীদের শিল্পকর্ম। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডমি আয়োজিত আন্তর্জাতিক মানের এ প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে দেশ-বিদেশের শিল্পীদের সৃজিত ভাস্কর্য, চিত্রকর্ম, ছাপচিত্র ও স্থাপনাশিল্প। সোমবার সকালে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে বসে প্রদর্শনীর উদ্বোধনী আয়োজন। সদ্য প্রয়াত দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে শুরু হয় উদ্বোধনী আয়োজনের কার্যক্রম। প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সংস্কৃতি সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। প্রদর্শনীর প্রতিবেদন প্রকাশ করেন জুরিবোর্ডের সভাপতি শিল্পী হাশেম খান। ডাক বিভাগের স্মারক ডাক টিকেট উন্মোচন করেন অর্থমন্ত্রী। প্রদর্শনী উপলক্ষে সন্ধ্যায় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উদ্বোধন শেষে চিত্রশালা প্লাজার ফটকে স্থাপিত সদ্য প্রয়াত শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অর্থমন্ত্রী, সংস্কৃতিমন্ত্রী, সংস্কৃতি সচিব ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক। এরপর অতিথিরা বিদেশী শিল্পীদের নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গ্র্যান্ড এ্যাওয়ার্ড ও সম্মানসূচক এ্যাওয়ার্ড এই দুই ক্যাটাগরিতে নয় চিত্রশিল্পীকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। এর মধ্যে গ্র্যান্ড এ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত তিন শিল্পী দুই লাখ টাকা ও ক্রেস্ট প্রদানের পাশাপাশি সম্মানসূচক এ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত ছয় শিল্পীকে পঞ্চাশ হাজার টাকা, মেডেল ও ক্রেস্ট তুলে দেন অর্থমন্ত্রী। গ্র্যান্ড এ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত শিল্পীরা হলেন বাংলাদেশের গুলশান হোসেন, মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন মিল্টন ও কাতারের হেসা আহমেদ কল্লা। সম্মানসূচক পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন বাংলাদেশের নুরুল আমিন, কামরুজ্জামান স্বাধীন, মাইনুল ইসলাম, বিশ্বজিৎ গোস্বামী এবং ওমানের হামেদ আল জাবেরি ও ড. ফখরিয়া আল ইয়াহিয়া। উদ্বোধনী বক্তব্যে কাইয়ুম চৌধুরীকে স্মরণ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, তিনি নেই এটা বলাটা ভুল হবে। তাঁর সৃষ্টির মধ্য দিয়ে তিনি আমাদের শিল্পাঙ্গন তথা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে চির অমর হয়ে থাকবেন। আর প্রদর্শনীর গুরুত্ব তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, এশিয়ার সংস্কৃতির দর্পণ হিসেবে এই প্রদর্শনী ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এই প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে মানুষের সঙ্গে মানুষের এবং সংস্কৃতির সঙ্গে সংস্কৃতির বন্ধন তৈরি হবে। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মধ্য দিয়ে এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের, শিল্পের সঙ্গে শিল্পের এবং শিল্পীর সঙ্গে শিল্পীর সম্পর্ক অনেক বেশি জোরদার হবে। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, কাইয়ুম চৌধুরী ছিলেন এদেশের সকল সংস্কৃতি অঙ্গনের অভিভাবক। তাঁর চলে যাওয়াতে দেশের শিল্প ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের যে ক্ষতি হয়েছে তা কখনও পূরণ হওয়ার নয়। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ দেশের সকল আন্দোলন-সংগ্রামে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন এই শিল্পী। মাসব্যাপী এ প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে তাঁর প্রতি সম্মান জানানো হবে। মাসব্যাপী প্রদর্শনীতে দেশের শিল্পীদের সৃজিত পৃথিবীর জন্মকাল, অসংলগ্ন বিন্যাসে মুখশের অন্তরালে, স্বপ্নের গভীরতা, জীবন ও ঘুড়ির গল্প, গণতন্ত্র প্রতীকী অন্বেষণ, সাতকাহন, প্রত্যাশার সঙ্গে বসবাস, পরিস্থিতির বাস্তবতা, অনিশ্চয়তার পথে যাত্রা, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ শিরোনামের নানা ছবিতে উঠে এসেছে বৈচিত্র্যময় বিষয়। বাংলাদেশসহ এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৩২টি দেশের শিল্পীদের রংতুলির ক্যানভাসে শিল্পসুষমায় শোভিত হয়েছে একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা প্লাজার প্রতিটি গ্যালারি। উপস্থাপিত হয়েছে দেশের ২০৯ শিল্পীর ২২৮টি শিল্পকর্ম। আর দেশের বাইরে অংশগ্রহণ করেছেন আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, ভুটান, ব্রুনাই, চীন, পূর্ব তিমুর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, জাপান, কুয়েত, কাজাকিস্তান, লেবানন, মিয়ানমার, নেপাল, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, ফিলিপিন্স, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, সিরিয়া, থাইল্যান্ড, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৩২টি দেশের শিল্পীবৃন্দ। এশিয়ার সর্ববৃহৎ এই প্রদর্শনী উপলক্ষে ব্রোশিয়র ও পোস্টার মুদ্রণ করা হয়েছে। প্রদর্শনীটিকে উৎসবমুখর ও দৃষ্টিনন্দন করার জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবের কদম ফোয়ারা থেকে শাহবাগ পর্যন্ত এবং ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানকে আকর্ষণীয়ভাবে সাজানো হয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে মাসব্যাপী এ প্রদর্শনী। দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত আটটা এবং শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জন্য উন্মুক্ত থাকবে। প্রথমবারের মতো এবারের প্রদর্শনীতে ‘পারফরমেন্স আর্ট’ প্রদর্শিত হচ্ছে। এতে ১০ জন শিল্পী অংশগ্রহণ করবেন। শিল্পের এ বৃহৎ আয়োজনের অংশ হিসেবে প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী বিদেশী শিল্পী, শিল্প-সমালোচক ও জুরি কমিটির সদস্যবৃন্দ জাতীয় স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, লালবাগ কেল্লা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর পরিদর্শন করবেন।
×