ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিচারক বা আদালত কর্মচারীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ৩ ডিসেম্বর ২০১৪

বিচারক বা আদালত কর্মচারীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন বলেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার অবস্থান স্পষ্ট ও দৃঢ়। দুর্নীতির বিষয়ে কোন প্রকার শৈথিল্য গ্রহণ করা হবে না। তিনি বলেন, দুর্নীতি অবিচারের জন্ম দেয়। আর একস্থানে অবিচার সর্বত্র সুবিচারের জন্য হুমকি। বিচারকদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা অভিযোগ আমি কখনও আমলে নেব না। কিন্তু দুর্নীতির প্রতিটি যুক্তিগ্রাহ্য অভিযোগকে আমলে নেব এবং উপযুক্ত একজন জজ অভিযোগটির তদন্ত করবেন। দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট বিচারক বা আদালত কর্মচারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। মঙ্গলবার সুপ্রীমকোর্ট মিলনায়তনে (নতুন সম্প্রসারিত ভবন) দেশের সব জেলা জজ ও জেলা জজ পদমর্যাদার সমপর্যায়ের বিচারক এবং চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্র্রেট ও চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্র্রেট/ সমপর্যায়ের বিচারকদের উদ্দেশে দেয়া অভিভাষণে প্রধান বিচারপতি এ সব কথা বলেন। সুপ্রীমকোর্টের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্র্রার এসএম কুদ্দুস জামানের সঞ্চালনায় প্রায় তিন শ’ বিচারক এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবছরের ডিসেম্বরে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, যেখানে প্রধান বিচারপতি নি¤œ আদালতের বিচারক ও কর্মচারীদের বিভিন্ন বিষয়ে দিক নির্দেশনামূলক ভাষণ দেন, যা ‘অভিভাষণ’ নামে পরিচিত। আদালতে দুর্নীতির বিষয়ে সর্তক করে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, বিচার বিভাগের যে কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর দুর্নীতিবিষয়ক যে কোন তথ্যকে আমি গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করি। কারণ বিচার বিভাগে দুর্নীতির কোন স্থান নেই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার অবস্থান স্পষ্ট ও দৃঢ়। দুর্নীতির ব্যাপারে কোন প্রকার শৈথিল্য গ্রহণ করা হবে না। তিনি বলেন, দুর্নীতি অবিচারের জš§ দেয়, আর এক স্থানে অবিচার সর্বত্র সুবিচারের জন্য হুমকি। বিচারকদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা অভিযোগ কখনোই আমলে নেয়া হবে না। তবে দুর্নীতির প্রতিটি যুক্তিগ্রাহ্য অভিযোগ আমলে নিয়ে উপযুক্ত একজন জজের মাধ্যমে তা তদন্ত করে দেখা হবে। সেখানে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট বিচারক বা আদালত কর্মচারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সর্বাত্মক দুর্নীতি প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে দুর্নীতির প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের গোচরে আনার জন্যও সবাইকে নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি। মামলাজট নিরসনে দেশের প্রতিটি জেলা আদালতে ‘মোকাদ্দমা ব্যবস্থাপনা কমিটি’ গঠনের কথা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, সুপ্রীমকোর্টের নির্দেশে ইতোমধ্যে প্রায় সব জেলা আদালতেই কমিটি গঠন করা হয়েছে। যদি এখনও কোথাও বাকি তবে অবিলম্ব^ কমিটি গঠন করুন। বার ও বেঞ্চের সমন্বয়ে যতদ্রুত সম্ভব মামলাজট নিরসন করতে হবে। বিচারকদের নৈতিকতা ও আচরণ প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারক একজন মানুষ এবং তিনি অন্য সব মানুষের বিচার করেন। তাই সর্বকালে ও সর্বদেশে বিচারকদের জ্ঞান, কর্মদক্ষতা, সততা ও ব্যক্তিগত আচরণ বিষয়ে মানুষের প্রত্যাশা অনেক উঁচুমানের। জনমানুষের এ সঙ্গত ও যৌক্তিক প্রত্যাশা পূরণে বিচারকদের অবশ্যই সাবধান হতে হবে। জেলা জজদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, জেলা জজ কেবলমাত্র বিচারক নন। তিনি জেলার প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও বটে। বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি লাঘব ও দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিসহ আদালতের অফিসসমূহ অর্থাৎ নেজারত, রেকর্ডরুম, নকলখানাগুলো যাতে জনগণের বিশেষত নারী ও শিশুদের জন্য স্বাচ্ছন্দময় হয়, জেলা জজকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি তোমাদেরকে নতুন ও কার্যকর দুর্নীতি প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করার নির্দেশ দিচ্ছি। আদালত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আনিত দুর্নীতির প্রতিটি অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের গোচরে আনতে তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছি।
×