ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রুশ সামরিক বিমানের ‘আগ্রাসী’ টহল নিয়ে ব্রিটেনের উদ্বেগ

রাশিয়ার ফের ॥ সামরিক মহড়ার প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ৩ ডিসেম্বর ২০১৪

রাশিয়ার ফের ॥ সামরিক মহড়ার প্রস্তুতি

রাশিয়া অভিযোগ করেছে যে, ন্যাটো উত্তর ইউরোপ ও বাল্টিক অঞ্চলে সামরিক মহড়া চালিয়ে সেখানকার স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করছে। মস্কো নতুন করে সামরিক মহড়া চালাবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে। এতে ইউক্রেন সঙ্কট নিয়ে রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেল। মস্কোর অভিযোগের জবাবে ন্যাটো ঐ অঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টির দায়ে মস্কোকে দোষারোপ করেছে। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড তার দেশের আকাশসীমায় বিমানগুলোর “অত্যন্ত আগ্রাসী” চলাচলে উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন। ব্রাসেলসে ন্যাটো সদর দফতরে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডগলাস লুট বলেছেন, রুশ সামরিক বিমানগুলো যোগাযোগের যন্ত্রপাতি বন্ধ রেখে এবং ফ্লাইট পরিকল্পনা না জানিয়ে বেসামরিক বিমানগুলোর প্রতি হুমকির সৃষ্টি করেছে। খবর ইয়াহুনিউজের। রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেস্কি মেশকভ বলেছেন, ন্যাটো বিশ্বের সবচেয়ে স্থিতিশীল অঞ্চল উত্তর ইউরোপে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। সীমাহীন সামরিক মহড়ায় পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম এমন বিমান বাল্টিক রাষ্ট্রগুলোতে পাঠানো হচ্ছে। এ বাস্তবতা খুবই নেতিবাচক। রাশিয়া ২০১৫ সালে চলতি বছরের তুলনায় আরও বেশিবার সামরিক মহড়া চালাবে বলে জানিয়েছে। একটি মহড়া হবে মস্কোসহ কেন্দ্রীয় সামরিক অঞ্চলে এবং অন্যটি হবে বেলারুশকে নিয়ে। ন্যাটো বলছে যে পশ্চিমা সামরিক জোটটি রাশিয়ার মার্চ মাসে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করা এবং ইউক্রেনের কোন কোন অংশে বিচ্ছিন্ন আবাদিদের মদদদান শুরু করার পর থেকে এর সদস্যদের নিরাপত্তা জোরদার করেছে। ক্রেমলিন এখন ঐসব অংশকে ‘নয়া রাশিয়া’ বলে অভিহিত করে থাকে। ঐ সংঘর্ষে অন্তত ৪ হাজার ৩শ’ লোক নিহত হয়েছে। ইউক্রেন সঙ্কট চলাকালে মস্কো অস্থিরতা সৃষ্টির দায়ে ঐ সামরিক জোটকে অভিযুক্ত করে। মস্কো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যুদ্ধের মহড়াও দেয়। ন্যাটো বলছে, মস্কো এক অস্ত্রবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহায়তা করতে সম্প্রতি ইউক্রেনে সৈন্যদল অস্ত্রশস্ত্র পাঠিয়েছে। মস্কো সেখানে সৈন্য পাঠানোর কথা অস্বীকার করে যদিও অনেক রুশ সৈন্য সেখানে মারা গিয়েছিল। ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টোলটেনবাস ব্রাসেলসে বলেন, আমরা ইউক্রেনে ও এর আশপাশে এক গুরুতর সমরসজ্জা দেখতে পাচ্ছি। রাশিয়ার উন্নত অস্ত্রশস্ত্র, যন্ত্রপাতি ও সেনাদলের এক বড় চালান হিংসাশ্রয়ী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। ১৯৯০ এর দশকের পর পূর্ব ইউরোপের বেশিরভাগ সাবেক কমিউনিস্ট দেশ ন্যাটোতে যোগ দেয়। তবে খোদ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কেবল তিনটি বাল্টিক রাষ্ট্র লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও এস্তোনিয়াই ঐ সামরিক জোটের সদস্য হয়। ইউক্রেন ন্যাটো সদস্য নয়। ন্যাটোতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত সোমবার বলেন, জোটের নেয়া অতিরিক্ত ব্যবস্থা আত্মরক্ষামূলক। ডগলাস লুট ব্রাসেলসে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যদি আপনার প্রথমে ক্রিমিয়া ও এখন ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে রুশদের তৎপরতার মাত্রার দিকে দৃষ্টি দেন, তবে তারা যে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী লন্ডনে পার্লামেন্টের এক কমিটিতে বলেন, ন্যাটো এবং ন্যাটোর সদস্য নয় এমন ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি রাশিয়ার আচরণে যে পরিবর্তন ঘটেছে, তার জবাব দিতে বিশেষত ন্যাটো সদস্যদের একসঙ্গে কাজ করা উচিত। ন্যাটো বলছে, ইউক্রেন সঙ্কটে রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে পূর্ব-পশ্চিম উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়া ২০১৩ সালে ন্যাটোর সীমান্তের কাছে রুশ সামরিক বিমান চলাচলরত জোরদার করে। ন্যাটো বিমান চলতি বছর চারশয়েরও বেশিবার রুশ বিমানকে বাধা দিতে তৎপর হয়। এটা ২০১৩ সালের মোট বারের চেয়ে শতকরা ৫০ ভাগ বেশি। ডগলাস লুট বলেন, বহু ঘটনায় রুশ সামরিক বিমানের চালককৃত ফ্লাইট প্ল্যান জানাননি বা বেসামরিক বিমান চলাচল কন্ট্রোলারদের সঙ্গে কথা বলেননি এবং ট্রান্সপন্ডারগুলো বন্ধ রাখেন। এসব ট্রান্সপন্ডারই বিমান সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহ করে থাকে। তিনি বলেন, এর ফলে বিমানগুলো এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের দৃষ্টির বাইরে থেকে যায়। তিনি বলেন, রুশদের এসব তৎপরতা কা-জ্ঞানহীন এবং বেসামরিক বিমান চলাচলের প্রতি হুমকির সৃষ্টি করছে। রাশিয়া যে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি নগ্নভাবে লঙ্ঘন করছে, তাও দেশটির ঐ তৎপরতা থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
×