ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘তোমার সমাধি ফুলে ফুলে ঢাকা’...

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ৪ ডিসেম্বর ২০১৪

‘তোমার সমাধি ফুলে ফুলে ঢাকা’...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নিউসাউথ ওয়েলসের ছোট্ট শহর ম্যাকসভিল। ছবির মতো সাজানো গোছানো, তাকালে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। এখানেই ২৬ বছর আগে জন্ম হয়েছিল ক্রিকেট রূপকাথার ছোট্ট এক রাজপুত্রের। নাম তার ফিলিপ হিউজেস। মাত্র ছাব্বিশটি বসন্তের আয়ু দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন বিধাতা। বিধাতার বিধি খ-নে সাধ্য কার? তাই তো ২৬তম জন্মদিনের ঠিক দুই দিনের মাথায় অপরূপ সুন্দর সেই ম্যাকসভিলেই হিউজেসকে চিরবিদায় জানালেন হাজারও অস্ট্রেলিয়ান! সন্তানকে চিরবিদায় জানিয়ে ফের কাঁদলেন বাবা-মা, ভ্রাতৃতুল্য সতীর্থের কফিন কাঁধে নিয়ে অশ্রুভারাক্রান্ত হলেন অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক। যে কফিনে কাঁধ লাগালেন বাবা গ্রেগরি আর ভাই জেসন হিউজেস, পেছনে ক্লার্ক। শব যাচ্ছে শেষ ঠিকনায় ...। খানিক দূরে দাঁড়িয়ে অঝোর ধারায় কাঁদছেন মা ভার্জিনিয়া হিউজেস। হিউজেসকে চিরবিদায় জানাতে ম্যাকসভিল হাইস্কুল মিলনায়তনের শেষকৃত্যে হাজির হয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়া দলের সবাই। যার বাউন্সারে দুর্ঘটনা সেই শন এ্যাবোটের মনটা ফের দুমড়ে মুচড়ে উঠেছে তীব্র যন্ত্রণায়। ভীষণ রকমের আবেগাক্রান্ত দেখিছে তাকে। অনুষ্ঠানে ছিলেন স্যার রিচার্ড হ্যাডলি, মার্ক টেলর, স্টিভ ওয়াহ, ব্রায়ান লারা, শেন ওয়ার্ন, গ্লেন ম্যাকগ্রা, এ্যাডাম গিলক্রিস্টের মতো সাবেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার। যোগ দিয়েছেন সরকারী সফরে অস্ট্রেরিয়ায় থাকা ভরতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সিরিজ খেলতে অস্ট্রেলিয়ায় থাকা ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক বিরাট কোহলি, ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রীসহ আরও অনেকেই। সকাল থেকেই ম্যাকসভিল স্কুল প্রাঙ্গণে ভিড় জমান হাজারও ভক্ত-অনুরাগী। অনুভূতি জানাতে গিয়ে ফের কান্না সংবরণ করতে পারেননি অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। মাইকেল ক্লার্ক বলেন, ‘আমি ওর কণ্ঠ শুনতে পাই, মনে হয় হিউজেস এখনও কথা বলছে, ও সবসময় সঙ্গেই থাকবে।’ কান্না বিজরিত কণ্ঠে কথা বলেন হিউজেসের ভাই ও বোন। বোন মেগান হিউজেস বলেন, ‘ফিলিপ আমি অত্যন্ত ভাগ্যবান যে তোমার মতো একজনে বোন। আমি জানি আমাদের জীবনে যখন কঠিন সময় আসবে তখন তুমিই হাসি ফোটাবে। তুমি বিশ্বের সেরা ভাই। এমন একটা দিন যাবে না, যেদিন আমি তোমার কথা মনে করব না। এই কদিনে আমি অনেক কিছু শিখেছি, শিখেছি গুডবাই বলতে। গুডবাই কখনও চিরবিদায় হতে পারে না। আই লাভ ইউ ব্রাদার।’ ভাই জেসন বলেন, ‘আমাদের ক্রিকেট খেলাটা কখনই শেষ হতো না। আমি ঘণ্টার পর ঘণ্ট বল করে যেতাম, হাত ব্যথা হয়ে যেত, কিন্তু ব্যাট করেই যেতে। তুমি দেখতে রাজপুত্র, তোমার চুলগুলোও দারুণ স্টাইলিশ। আমাদের কথা এক মুহূর্তের জন্যেও যেন ভুল না ভাই।’ ক্রিকেটই ইতিহাসে অনেক অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা, মৃত্যুর ইতিহাস রয়েছে। হিউজেসের অকাল মৃত্যুর মতো আর কোনটিই এভাবে দুনিয়াকে নাড়িয়ে দিতে পারেনি। অনেক বড় দেশ অস্ট্রেলিয়া। শেষকৃত্যের আগের দিন মঙ্গলবার থেকেই বিভিন্ন রাজ্য থেকে ম্যাক্সভিলের বিমান ফ্লাইট বাড়িয়ে দেয়া হয়। মন্ত্রী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, অন্য অঙ্গনের বিখ্যাত মানুষ, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত স্থানীয় ক্রিকেটার ভিড় জমাতে থাকেন। পুরো অনুষ্ঠানটি সিডনি, এ্যাডিলেড, মেলবোর্নে বড় পর্দায় দেখানো হয়। শেষকৃত্য রেডিও-টিভিতে লাইভ প্রচারিত হয়। ২৫ নবেম্বর শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচে প্রতিপক্ষ পেসার শন এ্যাবোটের বাউন্সার হিউজেসের মাথার পেছনে আঘাত করে। দু’দিন লাইফ-সাপোর্টে থাকার পর ২৭ তারিখে মাত্র ২৫ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের প্রতিভাবান এই ব্যাটসম্যান। ৩০ নবেম্বর ১৯৮৮ ম্যাকসভিলে জন্ম নেয়া ডানহাতি ব্যাটসম্যান ২৬ দেশের হয়ে টেস্ট ২৬ টেস্ট (৩৩ গড়ে ১৫৩৫ রান, সেঞ্চুরি ৩ ও হাফ সেঞ্চুরি ৭টি), ২৫ ওয়ানডে (৩৬ গড়ে ৮২৬ রান, সেঞ্চুরি ২ ও হাফ সেঞ্চুরি ৪টি) ও ১ টি২০ খেলেন।
×