ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চলতি মাসের মধ্যেই তিন স্তরে পদোন্নতি পাচ্ছেন ৬ শতাধিক কর্মকর্তা

প্রকাশিত: ০৫:০২, ৪ ডিসেম্বর ২০১৪

চলতি মাসের মধ্যেই তিন স্তরে পদোন্নতি পাচ্ছেন ৬ শতাধিক কর্মকর্তা

তপন বিশ্বাস ॥ একযোগে তিন স্তরে পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রস্তুতি নিচ্ছে। চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই তিন স্তরে ৬ শতাধিক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, পদ শূন্য না থাকলেও অতীতের ধারাবাহিকতা রক্ষায় তিন স্তরের ৬ শতাধিক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে যুগ্ম-সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে দেড় শতাধিক ও উপসচিব থেকে যুগ্ম-সচিব পদে দুই শতাধিক এবং সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে আড়াই শতাধিক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে তিন স্তরের পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কাগজপত্র যাচাই করে যোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। শীঘ্রই সুপরিয়র সিলেকশন বোর্ডের ( এসএসবি) বৈঠকে এই তালিকা উপস্থাপন করা হবে। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন নিয়ে গেজেট জারি করা হবে। ডিসেম্বর নাগাদ এ প্রক্রিয়া শেষ হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী বলেন, আনুষঙ্গিক কার্যক্রম করছি, যাতে যথাসময়ে পদোন্নতি দেয়া যায়। তিনি বলেন, এটি একটি রুটিন কাজ। পদোন্নতি নিয়ম অনুযায়ী দেয়া হবে। যোগ্যরাই পদোন্নতি পাবেন। সূত্র জানায়, এসএসবির এক বৈঠকে জনপ্রশাসনে তিন স্তরের পদোন্নতি দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মৌখিক অনুমতি নেয়া হয়েছে। এ অনুযায়ী পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তিন স্তরের মধ্যে অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিগত সময়ে বঞ্চিতদের মধ্যে কিছু কর্মকর্তা এবার পদোন্নতির আওতায় আসছেন। ওই সময়ে তাঁরা যে আবেদন করেছিলেন তা পর্যালোচনা করা হবে। এ ছাড়া অতিরিক্ত সচিব পদে ৮৫ ব্যাচকে বিবেচনায় আনা হচ্ছে। এ ব্যাচ থেকে মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তা বিবেচনা করে প্রায় ১২৫ কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির পরিকল্পনায় রয়েছে। এক্ষেত্রে মেধাক্রম বিবেচিত হবে না। সঠিক সময়ে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে যাদের যোগ্যতা রয়েছে এমন কিছু কর্মকর্তাকেই বিবেচনায় আনা হতে পারে। তাদের অতীত রেকর্ড পর্যালোচনা করা হবে। যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতিতে ৮৬ ব্যাচের বঞ্চিত কর্মকর্তা ছাড়াও নবম ও দশম ব্যাচের কর্মকর্তারা স্থান পাবেন। যদিও এ স্তরের পদোন্নতিতে ১১তম ব্যাচের কর্মকর্তারা বিভিন্ন পর্যায়ে তদ্বির করছেন। পদোন্নতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বড় একটি অংশ তাদের এবার পদোন্নতির আওতায় আনার বিষয়টি বিবেচনায় আনতে নারাজ। তবে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিগন্যাল পেলে এ ব্যাচের কর্মকর্তাদের যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতির আওতায় আনা হতে পারে। উপসচিব পর্যায়ে পদোন্নতিতে মূলত ২০তম ব্যাচকেই বিবেচনায় আনা হচ্ছে। এ ছাড়া কিছু সংখ্যক এ স্তরের পদোন্নতির আওতায় আসবেন যাঁরা বিগত সময়ে বঞ্চিত হয়েছেন। ইতোমধ্যে কিছু কর্মকর্তা পদোন্নতি পাওয়ার আশায় জোরালো লবিং চালাচ্ছেন। অনেকেই পদোন্নতির আশায় মন্ত্রী-এমপিদের ডিও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন। আবার অনেকেই দলবদ্ধভাবে এসএসবির সদস্যের সঙ্গে দেখা করেছেন। প্রশাসনে শূন্য পদ না থাকলেও তিন স্তরে ৬ শতাধিক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। প্রশাসনের অতিরিক্ত সচিব পদে ১শ’ ৩০টি পদ থাকলেও বর্তমানে এ পদে কর্মকর্তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২শ’ ৬০। এ পদে প্রায় ১শ’ কর্মকর্তা আগের পদে এখনও কর্মরত রয়েছেন। নতুন পদ সৃষ্টি করে তাদের পদায়ন করা যায়নি। এর পরও আবার প্রায় দেড় শ’ কর্মকর্তাকে এ পদে পদোন্নতি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একইভাবে যুগ্ম-সচিব পদের চেয়ে কর্মকর্তার সংখ্যা ™ি^গুণের চেয়ে বেশি দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে যুগ্ম-সচিব পদ রয়েছে ৪শ’ ৩০টি। কিন্ত এর বিপরীতে কর্মকর্তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯শ’ ৭। এ পদে প্রায় আড়াই শ’ কর্মকর্তা আগের পদে এখনও কর্মরত রয়েছেন। অর্থাৎ যুগ্ম-সচিব হয়েও তাঁরা কাজ করছেন উপসচিব পদে। এর পরও এ পদে আরও ২শ’ কর্মকর্তাকে পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বর্তমানে উপ-সচিবের অনুমোদিত পদ আছে ৮৩০টি। কিন্ত বর্তমানে উপ-সচিব আছেন এক হাজার তিন শ’ ১৩ জন। এ পদে প্রায় ৫শ’ কর্মকর্তা এখনও বাড়তি রয়েছেন। এর পরও আড়াই শ’ কর্মকর্তাকে পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ পদোন্নতির ফলে প্রশাসনে লেজেগোবরে অবস্থা সৃষ্টি হবে বলে প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। উপরের স্তরে পদের চেয়ে কর্মকর্তার সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত হলেও নিচের স্তরের সিনিয়র সহকারী সচিব ও সহকারী সচিব (মাঠপর্যায়ে সহকারী কমিশনার) পর্যায়ের এখনও অনেক পদ ফাঁকা। বর্তমানে সিনিয়র সহকারী সচিব আছেন এক হাজার ৪৩৪ জন। কিন্তু পদ আছে এক হাজার ৮০০। সহকারী সচিব (মাঠপর্যায়ে সহকারী কমিশনার) আছেন এক হাজার ৯৫। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এই পদে দরকার আরও ৭০০ থেকে ৮০০ কর্মকর্তা। নিচের স্তরে কর্মকর্তার অভাবে সহকারী কমিশনারের (এসি-ল্যান্ড) প্রায় অর্ধেক পদই ফাঁকা। বর্তমানে এসি ল্যান্ডের মঞ্জুরিকৃত পদ আছে ৪৮৫। বিপরীতে কর্মরত আছেন অর্ধেকের কিছু বেশি কর্মকর্তা। চাকরিতে প্রবেশের ১০ বছর পরেই একজন কর্মকর্তা পদোন্নতির যোগ্য হন। তবে পদোন্নতির নীতিমালা অনুযায়ী, চাকরিতে স্থায়ী হওয়া, শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রতিটি পরীক্ষার নম্বর, শ্রেণী, চাকরিকালের দক্ষতা, সুনাম, বদনাম, শৃঙ্খলা, দুর্নীতি ইত্যাদি বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) এসব পরীক্ষা করে পদোন্নতির যোগ্য কর্মকর্তার নাম সুপারিশ করে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর তা আদেশ আকারে জারি করা হয়। প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নব্বই দশকের পর বিশেষ করে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের সময় থেকে প্রশাসনে দলীয়করণ শুরু হয়। এর অংশ হিসেবে দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে পদোন্নতি, নিয়োগ, বদলি এমনকি চাকরিচ্যুতিও শুরু হয়। পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও এ ধারা অব্যাহত থাকে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এ ধারা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। ওই পাঁচ বছরে বিভিন্ন পদের দুই হাজার ৫০০ কর্মকর্তাকে পদোন্নতিবঞ্চিত রাখা হয়। সর্বোচ্চ এক হাজার ২৫৫ কর্মকর্তাকে তখন ওএসডি করা হয়। অকালীন অবসর দেয়া হয় দুই শতাধিক কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে।
×