ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছিটমহল বিনিময়ে মমতার আপত্তি নেই

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ৪ ডিসেম্বর ২০১৪

ছিটমহল বিনিময়ে মমতার আপত্তি নেই

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ লোকসভা নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় নিয়ে অবস্থান বদলানোর যে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী অবশেষে তা বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। খবর আনন্দবাজার অনলাইনের। বুধবার আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এক খবরে এমনই ইঙ্গিত করা হযেছে। তাতে বলা হয়েছে, ৬৫ বছর ধরে ঝুলে থাকা সমস্যাটির সমাধানে সম্মতি জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে রাজ্য সরকার। ছিটমহল বিনিময়ে সীমান্ত চুক্তি কার্যকরে ভারতের সংবিধান সংশোধন বিল রাজ্যসভায় ওঠার ঠিক আগে এর বিরেধিতাকারী মমতার অবস্থান বদলানোর খবর এল। রাজ্য সরকারের এ অবস্থান পরিবর্তন বিষয়ে বৃহস্পতিবার কোচবিহারে এক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে ঘোষণাও আসতে পারে বলে জানিয়েছে ভারতের সর্বাধিক প্রচারিত এই বাংলা সংবাদপত্রটি। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের এক সূত্রের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহের শেষ দিকে পাঠানো মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রের স্বাক্ষর করা চিঠিতে বাংলাদেশের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময়ে মমতা সরকারের নীতিগত কোনও আপত্তি নেই। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের সময় ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত হয় স্থল সীমান্ত চুক্তি। আর ২০১১ সালে তৎকালীন ইউপিএ জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় একটি প্রটোকল সই হয়। প্রটোকলটি কার্যকরে ভারতের সংবিধান সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছিল কংগ্রেস সরকার। এ জন্য পার্লামেন্টে একটি বিল তোলা হলে বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা সে সময়ের বিরোধী দল বিজেপির সঙ্গে মমতার তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতায় তা ঝুলে যায়। তবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদির অবস্থান পরিবর্তন হয়। গত ২৬ নবেম্বর কাঠমা-ুতে সার্ক সম্মেলনের ফাঁকে এক বৈঠকে শেখ হাসিনাকে স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকর এবং তিস্তা চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে ‘জোর’ প্রচেষ্টার কথা জানান মোদি। এরপর বাংলাদেশের সঙ্গে ভূমি বিনিময়ের জোর বিরোধিতাকারী রাজ্য অসামে গিয়েও মোদি বলেন, এ চুক্তি কার্যকর হলে ওই রাজ্যের ক্ষতি হবে না, বরং আখেরে লাভই হবে। মমতার মনোভাব বদলানোরও ইঙ্গিত পাওয়া যায় গত সেপ্টেম্বরে। যখন কলকাতায় বাংলাদেশের সাবেক ডেপুটি হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান। বাংলাদেশের কূটনীতিকের সঙ্গে আলোচনায় মমতা ছিটমহলবাসীর দুঃখ-দুর্দশার কথা বর্ণনা করেন বলে খবরে বলা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের অবস্থান পরিবর্তনের ফলে স্থল সীমান্ত চুক্তি বিল পাস হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার বলে মনে করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক পার্লামেন্টারি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সংবিধান সংশোধনের বিলের খসড়াটির অনুমোদন দেয়া হয়। সেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের দুই প্রতিনিধি সুগত বসু ও মুমতাজ সংঘমিত্রা চুক্তির পক্ষে সায় দেন। তবে যেসব ছিটমহল পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত হবে, সেখানে প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রণয়ন ও পরিকাঠামো উন্নয়নে বিপুল অর্থব্যয়ের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারই নেবে, এমনটাই ইচ্ছা রাজ্য সরকার। ছিটমহল পুনর্বাসনের জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ৩০৮ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করেছে বলে জানা গেছে। ছিটমহল বিনিময়ের বিষয়ে রাজ্য সরকারের অবস্থান পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছেন ‘ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, স্থল সীমান্ত চুক্তি বিল সংসদে পাস হওয়াটা এখন সময়ের অপেক্ষা। আশার আলো দেখছেন দুই দেশের ১৬২টি ছিটমহলের প্রায় ৫৬ হাজার অধিবাসী।
×