ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘টাকা-পয়সা নয় ইরাকে পাচার ছেলে ফিরে চাই’

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ৪ ডিসেম্বর ২০১৪

‘টাকা-পয়সা নয় ইরাকে পাচার ছেলে ফিরে চাই’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফিরিয়ে দাও আমার সন্তান। কারণ সন্তানের চেয়ে টাকা বড় নয়। দরকার নেই টাকার। টাকা খরচ করেই তো ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছিলাম তার ভবিষ্যত গড়ার জন্য। সে জন্যই তো ধার-দেনা ও জমি বিক্রি করে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। তাতেই নিস্ব। কিন্তুুু এখন আমার ছেলে কোথায়? তাকে ফিরিয়ে দাও। এই কথা কটা বলেই অজ্ঞান হয়ে যান কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সিরাজনগরের বানুয়ারা বেগম। বুধবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ইরাকে পাচার ১৮০ বাংলাদেশীর প্রত্যাবাসন ও ক্ষতিপূরণ বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বানুয়ারা ছেলে ও তার পরিবারের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোর। সেখানেই তিনি তুলে ধরেন সন্তান হারানোর করুণ কাহিনী। এ সময় সাংবাদিকদের সামনে কাঁদতে কাঁদতে বানুয়ারা বেগম বলেন, সাত মাস ধরে আমার ছেলে রুবেল ইরাকে কিভাবে আছে আমরা জানি না। যে কয়বার ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে তাতে বুঝতে পেরেছি সে অনেক কষ্টে আছে। ঠিকমতো খাবারও পাচ্ছে না। মা হয়ে সন্তানের এই কষ্ট কিভাবে সহ্য করব। তাই সরকার ও সাংবাদিকদের কাছে আমার দাবিÑ কোন টাকা ও ক্ষতিপূরণ নয়। সন্তানকে ফিরে পেলেই কারও প্রতি আমার কোন অভিযোগ থাকবে না। ইরাকপ্রবাসী অপর শ্রমিক আরিফের মা মাজেদা বেগম বলেন, আরিফ সাত মাস ধরে কিভাবে আছে তার কোন খবর আমি জানি না। চার লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছিলাম পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে থাকার জন্য। কিন্তু সন্তানকে ছাড়া পরিবারের সদস্যরা খুব কষ্টে দিনযাপন করছি। ‘ছেলেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ভিক্ষা চাই’ উল্লেখ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মাজেদা বলেন, টাকাপয়সার প্রয়োজন নেই, আমি আমার সন্তানকে ফিরে চাই। শুধু বানুয়ারা বেগম ও মাজেদা বেগম নয়, ইরাকে অবস্থানরত এমন অসংখ্য প্রবাসীর স্বজন তাদের আশঙ্কা ও হতাশার কথা বলেন সংবাদ সম্মেলনে। তারা জানান, ১৮০ জনের মধ্যে অধিকাংশকেই কাতারে ভাল বেতনে চাকরির প্রলোভন দেয় ক্যারিয়ার ওভারসিস কনসালট্যান্ট লি. (আরএল নং-৪০৩) নামক একটি রিক্রুটিং এজেন্সি। দালালদের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে ২ থেকে ৫ লাখ বা তারও বেশি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেন তারা। বাংলাদেশীদের কাতারে না নিয়ে চলতি বছরের ২ মে থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে ইরাকের নাজা শহরে আটকে রাখা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে পাসপোর্টসহ সকল কাগজপত্র এবং মোবাইল ফোনসেট কেড়ে নেয় কোম্পানির লোকরা। মানবপাচার এবং প্রতারণার জন্য ক্যারিয়ার ওভারসিসের বিরুদ্ধে জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়ে ভুক্তভোগীরা তাদের স্বজনদের ইরাক থেকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোর-এর নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক, ব্যারিস্টার সাদেক মালিক, বাংলাদেশ মানবাধিকার পরিষদের প্রেসিডেন্ট এইচ এম নোমানসহ অনেকে।
×