ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিভিন্ন দেশের শিল্পীর সমকালীন শিল্পভাষা আদান প্রদান

প্রকাশিত: ০৫:১২, ৪ ডিসেম্বর ২০১৪

বিভিন্ন দেশের শিল্পীর সমকালীন শিল্পভাষা আদান প্রদান

মোরসালিন মিজান ॥ সত্যি ভরপুর একটি আয়োজন। বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশের শিল্পীরা ছবি এঁকেছেন। ভাস্কর্য গড়েছেন। আছে স্থাপনা শিল্প। ভিডিও আর্ট। সব মিলিয়ে ১৬তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ ২০১৪। মাসব্যাপী আয়োজন গত সোমবার শুরু হয়েছে। ভেন্যু-শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা প্লাজা। দেশের সর্ববৃহৎ আয়োজন উপভোগ করতে প্রতিদিনই এখানে আসছেন শিল্পপ্রেমী মানুষ। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন। শিল্পীদের চিন্তা মনোজগতের সঙ্গে নিজের জগতের মিল-অমিল খুঁজছেন। দেশী-বিদেশী শিল্পীদের মধ্যেও চলছে নানা আদান-প্রদান। এভাবে বেশ মুখর এখন শিল্পকলা একাডেমি। ১৬তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে বাংলাদেশসহ মোট ৩২টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, ভুটান, ব্রুনাই, চীন, পূর্ব তিমুর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, জাপান, কুয়েত, কাজাকিস্তান, লেবানন, মালদ্বীপ, নেপাল, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, ফিলিপিন্স, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, সিরিয়া, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, জর্দান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এসব দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন ১০৪ জন শিল্পী। তাঁদের মোট ২০৪টি শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে গ্যালারি। প্রতিটি কানায় কানায় পূর্ণ। ঘুরে দেখতে দেখতে মন ভরে যায়। এবার গ্র্যান্ড প্রাইজ জিতেছেন কাতারের হেসা আহমেদ কাল্লা, বাংলাদেশের আব্দুল মোমেন মিল্টন ও গুলশান হোসেন। কাল্লার চিত্রকর্মটিতে চোখ যেন আটকে যায়। আব্দুল মোমেন মিল্টন ভূমিতে শুকনো বালি ছড়িয়ে দিয়েছেন। তার উপরে সারি সারি নৌকো। মিক্সড মিডিয়ায় গড়া স্থাপনাশিল্পের শিরোনাম ‘লংমার্চ ফর ওয়াটার’। গুলশান হোসেনের স্থাপনা শিল্পে ভেসে ওঠে আগুনে ঝলসে দেয়া নারী মুখ। চোখের জল। আর্তনাদ। শিল্পী আয়োজনটিকে বলছেন ‘সাউন্ড অব টিয়ার্স অব বার্নট ওমেন’। সম্মাননা পুরস্কার জেতা নুরুল আমিনের শিল্পকর্মের শিরোনাম ‘ডেমেজ বুকস’। হ্যাঁ, ছেঁড়া বই। পোকায় খাওয়া। পাতা খসে পড়ছে। এ অবস্থায় বইগুলো মেলে ধরেছেন শিল্পী। কিছু লেখা পড়াও যাচ্ছে। প্রথম দেখায় সাধারণ কাজ মনে হতেই পারে। প্রকৃত পক্ষে অত্যন্ত কঠিন কাজ। কারণ, পুরো কাজটি টেরাকোটার। ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমে চিন্তার প্রকাশ ঘটিয়ে একই পুরস্কার জিতেছেন বাংলাদেশের নূরুল আমীন, কামরুজ্জামান স্বাধীন, ময়নুল ইসলাম পল ও বিশ্বজিৎ গোস্বামী। ওমান থেকে সম্মানসূচক পুরস্কার জিতেছে হামিদ আল-জাব্রি ও ড. ফখরিয়া আল-ঈয়াহায়াল। প্রদর্শনীর বাকি কাজগুলোও নির্বাচিত। প্রথমবারের মতো এবারের প্রদর্শনীতে যোগ হয়েছে ‘পারফরর্মিং আর্ট’। এতে অংশগ্রহণ করেছেন ১০ জন শিল্পী। অন্য শিল্পীরাও প্রচুর নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। বিভিন্ন মাধ্যমে নিজের চারপাশকে, সমকালকে তুলে ধরেছেন শিল্পীরা। শিল্পের ভাষায় ব্যাখ্যা করেছেন স্বপ্নকে। বাদ যায়নি হতাশার কথা। শিল্পকর্মের প্রদর্শনীর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের মধ্যে ভাবনার আদান-প্রদানের সুযোগ করে দিয়েছে ‘এশিয়ান’। শিল্পীদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, মিসর ও ব্রাজিল থেকে পর্যবেক্ষকরা এসেছেন। সবার উপস্থিতিতে জমে উঠেছে প্রদর্শনী। এমন উদ্যোগের আরও অনেক ভাল দিক আছে। সেই ভালর সঙ্গে এভাবেই থাকুক বাংলাদেশ-সকলের তাই প্রত্যাশা। মাসব্যাপী এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে দর্শকদের জন্য।
×