ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকা-দিল্লী সম্পর্ক নতুন মাত্রায় ॥ এ অঞ্চলের চেহারা পাল্টে যাবে

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৪ ডিসেম্বর ২০১৪

ঢাকা-দিল্লী সম্পর্ক নতুন মাত্রায় ॥ এ অঞ্চলের চেহারা পাল্টে যাবে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগ স্থাপনের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের চেহারা পাল্টে দেয়া সম্ভব। কিন্তু এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সঙ্কট পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের। তবে ভারতে নতুন সরকার গঠিত হওয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। সীমান্ত সমস্যা ও নদীর পানি বণ্টন এবং অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিবেশী এ দুটি দেশ এখন অনেক কাছাকাছি। উভয় দেশই নিজেদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে কানেকটিভিটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে সবার আগে প্রয়োজন দুই দেশের জনগণের মনের কানেকটিভিটি। চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে বুধবার চট্টগ্রামের হোটেল আগ্রাবাদে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া কানেকটিভিটি : অপরচ্যুনিটি এ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক এক সেমিনারে এ কথাগুলো বলেন আলোচকরা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য এমএ লতিফ, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরন ও ত্রিপুরা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট এমএল দেবনাথ। চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম। এতে আরও বক্তব্য রাখেন চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবু মনসুর, জাপানের অনারারি কনসাল নুরুল ইসলাম, বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তা সালাউদ্দিন কাশেম খান, চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুন নেওয়াজ সেলিম, সহ-সভাপতি সৈয়দ জামাল আহমেদ প্রমুখ। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ভারতের বিগত নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির দল ও জোট ক্ষমতায় আসায় অনেকে মনে করেছিলেন যে, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নষ্ট হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দুই দেশের সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে। কেননা, সরকারে কোন দল ক্ষমতায় রয়েছে তা বিষয় নয়, বরং সম্পর্কটা দুটি দেশের মধ্যে। উভয় দেশই মনে করে আর্থ সামাজিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য পারস্পরিক সহযোগিতা থাকা প্রয়োজন। প্রতিবেশীর সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক রেখে ভাল থাকা সম্ভব নয়। মন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে ভারতের বিরোধিতা বন্ধ হয়েছে। ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সবগুলো ক্যাম্পই গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, উভয় দেশেই এখন কানেকটিভিটি বাড়ানোর বিষয়ে একমত। ভারত থেকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার হয়ে চীন পর্যন্ত যোগাযোগ স্থাপন করতে চাই আমরা। তিনি সড়ক ও রেল উভয় ক্ষেত্রেই ভারতের সাত অঙ্গরাজ্য, মিয়ানমার ও চীনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের ওপর গুরুত্বাপরোপ করে বলেন, এটি করা গেলে এ অঞ্চলের চেহারাই পাল্টে যাবে। পারস্পরিক অবিশ্বাস আস্থাহীনতা আগের পর্যায়ে নেই বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলো এখন নিজেদের উন্নয়নের স্বার্থে অনেক কাছাকাছি। ভারত থেকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল হয়ে মিয়ানমারের ভেতর দিয়ে চীন পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরন তাঁর বক্তব্যে বলেন, আস্থাহীনতার সময় শেষ হয়েছে। এখন আমরা আস্থার জায়গায় উপনীত হয়েছি। বক্তব্যে তিনি ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ ও পারস্পরিক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠায় ভারতের নতুন সরকারপ্রধান নরেন্দ্র মোদির ঐকান্তিক ইচ্ছার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ভারত চায় কানেকটিভিটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া ও সাব রিজিওন চীন পর্যন্ত যোগাযোগ স্থাপনে। এ কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভারত প্রস্তুত বলে তিনি জানান। প্রসঙ্গক্রমে তিনি সীমান্তে বিভিন্ন সময়ে কিছু ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, অনেক সমস্যা আমরা একেবারে স্থানীয় পর্যায়ে সমাধা করে ফেলতে পারি। চেকপোস্ট ও সীমান্তে অপ্রীতিকর ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একেবারে স্থানীয় পর্যায়ে দুপক্ষের বর্ডার ফোর্স, ম্যাজিস্ট্রেট টু ম্যাজিস্ট্রেট এবং এ ধরনের লোকাল কর্তৃপক্ষ সহজেই অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে। বাংলাদেশের প্রতি ভারতের আন্তরিকতার বিষয় তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, এখন শূন্য শুল্কে ভারতের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সংসদ সদস্য এমএ লতিফ বলেন, এগিয়ে যাওয়ার জন্য পারস্পরিক সহযোগিতা ও কানেকটিভিটি অবশ্যই বাড়াতে হবে। তবে এক্ষেত্রে ভারতকেই বেশি এগিয়ে আসা উচিত। কারণ ভারত আমাদের অনেক বড় প্রতিবেশী। বড় ভাইয়েরই উচিত ছোট ভাইকে হাত ধরে টেনে উপরে তোলা। দু’পক্ষের মধ্যে আস্থাহীনতা কেটে গেছে বলে উল্লেখ করে তিনি কার্যকর কানেকটিভিটি প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ত্রিপুরা চেম্বার সভাপতি এমএল দেবনাথ আমদানি-রফতানির তথ্য তুলে ধরে বলেন, ভারতের সাত অঙ্গরাজ্যের সঙ্গে কানেকটিভিটি হলে বাংলাদেশই বেশি লাভবান হবে। উদাহরণ স্বরূপ তিনি দেখান যে, গত এক বছরে বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় পণ্য রফতানি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকার। অপরদিকে, ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে রফতানি হয়েছে মাত্র এক কোটি টাকার পণ্য।
×