ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জামিন নাকচ ॥ দাউদ মার্চেন্ট ৩ দিনের রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ৪ ডিসেম্বর ২০১৪

জামিন নাকচ ॥  দাউদ মার্চেন্ট ৩ দিনের রিমান্ডে

সুমি খান ॥ ভারতের গুলশান কুমার হত্যা মামলায় দ-িত মাফিয়া ডন দাউদ মার্চেন্টসকে কাশিমপুর কারাগার থেকে বেরুতেই মঙ্গলবার ফের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা দল ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে ভারতীয় মিউজিক কোম্পানি টি-সিরিজের মালিক গুলশান কুমার হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত আসামি আবদুর রউফ ওরফে কিলার দাউদ মার্চেন্টের বৈধ পাসপোর্ট বা কাগজপত্র না থাকায় তার সঙ্গে জঙ্গী সম্পৃক্ততা আছে কিনা জানতে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর গোলাম রসুল।অন্যদিকে দাউদের আইনজীবী তার জামিনের আবেদন করেন।শুনানি শেষে বিচারক ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুরু মিয়া দাউদ মার্চেন্টের জামিনের আবেদন নাকচ করে তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। ৪৫ বছর বয়সী দাউদ মার্চেন্ট দুবাইয়ে থাকা ভারতীয় মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছোটা শাকিলের নির্দেশে অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঢুকে ধরা পড়ার পর ২০০৯ সালের ২৯ মে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা দল ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে তার সহযোগী জাহিদ শেখ ও আরিফসহ তাকে গ্রেফতার করে। এর পর পাঁচ বছর কারাগারে বন্দী ছিলেন তিনি। ২০০৯ এবং ২০১২ সালে দাউদ জামিনে মুক্তি পায়। তবে সঙ্গে সঙ্গেই তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এর আগে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে দাউদ মার্চেন্ট জানিয়েছে ইরান, পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমীরাতের দুবাই- এ তিনটি দেশকে দাউদ ইব্রাহিম তাদের অপরাধী কর্মকা-ের আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করে। চতুর্থ আশ্রয় হিসেবে বাংলাদেশকে তৈরি করার জন্যে দাউদ ইব্রাহিমের নির্দেশে তার শিষ্য ছোটা শাকিল তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। দাউদ মার্চেন্ট ও জাহিদ শেখ গোয়েন্দাদের বলেছিল, বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ ও তৎকালীন সরকার ভারতবিদ্বেষী বলে দাউদ ইব্রাহিম তাদের জানিয়েছে। তিনি বলেন, এ কারণে এ দেশ তাদের নেটওয়ার্ক পরিচালনার জন্যে একটি আদর্শ স্থান হতে পারে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জাহিদ শেখ জানিয়েছিলেন, তার মূল কাজ ছিল, ভারত থেকে পালিয়ে আসা সন্ত্রাসীদের জন্যে নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা ও ভুয়া পরিচয়পত্র তৈরি করে দেয়া। ভারত থেকে পালিয়ে আসা এরকম বেশ কয়েক সন্ত্রাসীকে জাহিদ শেখ ভুয়া নাম-পরিচয়ে জাতীয় ভোটার আইডি কার্ড এবং পাসপোর্ট তৈরি করে দিয়েছেন। জঙ্গী এবং সন্ত্রাসীদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করার জন্যে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিয়ের পরিকল্পনা করে। স্থানীয় এক মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ের কথাবার্তাও চূড়ান্ত হয়েছিল। ডিবি সূত্রে প্রকাশ, ছোটা শাকিল দাউদ ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের একজন। বাংলাদেশকে তাদের সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের চতুর্থ নিরাপদ আশ্রয়ের দেশ বানানোর পরিকল্পনা করেছিলেন কুখ্যাত মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিম। দাউদ ইব্রাহিমের সন্ত্রাস বিস্তারের জন্যে বাংলাদেশে একটি ভিত্তিকেন্দ্র গড়ে তোলার বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয় তার সহযোগী দাউদ মার্চেন্ট ও জাহিদ শেখকে। গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এ কথা বলেছেন আব্দুর রউফ ওরফে দাউদ মার্চেন্ট, জাহিদ শেখ ও তাদের সহযোগী কামাল মিয়া। মুম্বাইয়ের সঙ্গীত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টি-সিরিজের মালিক গুলশান কুমারকে ১৯৯৭ সালের ১২ আগস্ট আন্ধেরি এলাকার একটি মন্দির থেকে বেরিয়ে আসার সময় গুলি করে হত্যা করা হয়। এ হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন ভাড়াটে দাউদ মার্চেন্টকে গ্রেফতারের পর ২০০২ সালে তাকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয় আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন দাউদ। ২০০৯ সালে ১৪ দিনের প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার পর পালিয়ে যান তিনি। ২০০৯ সালের ২৮ মে ভারতের সীমান্তবর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে এক সহযোগীসহ তাকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশের পুলিশ। পাসপোর্ট আইনে একটি মামলাও হয় তার বিরুদ্ধে। সে সময় দাউদ অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঢুকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবস্থান করছিলেন। পুলিশের এনকাউন্টারের ভয়ে ভারত থেকে পালিয়ে এসেছেন বলে দাবি করেছেন মুম্বাইয়ের মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের শিষ্য দাউদ মার্চেন্ট। পুলিশ জানায়, দাউদ ইব্রাহিমের সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক স্থাপনই দাউদ মার্চেন্টের বাংলাদেশে আসার উদ্দেশ্য। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, ‘ভারতে সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্ক পরিচালনা করতে বাংলাদেশকে একটি শক্ত ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের জন্যে জাহিদ শেখ এদেশে এসে বসবাস করতে শুরু করে। এ কাজে সহযোগিতা করতেই পরে দাউদ মার্চেন্ট বাংলাদেশ আসেন। জামিনে বের হয়ে দাউদ আবার বড় কোন নাশকতা চালাতে পারে, এ আশঙ্কার বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে হচ্ছে আমাদের।’
×